শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভুমিকা।

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির অবদান সর্বাধিক।প্রথাগত শিক্ষার উপকরণ বইয়ের অতিরিক্ত হিসেবে ইন্টারনেট এখন শিক্ষা ও জ্ঞানের আধার।অনলাইনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি,পাঠদান,পরীক্ষা দেয়া কিংবা৷ শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় এমন কি অনলাইনের মাধ্যমে সার্টিফিকেট ও অর্জন করা যায়।ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থী তার শিক্ষা কার্যক্রম চলিয়ে যেতে পারে।এরকম একটি জনপ্রিয় শিক্ষামূলক সাইট হলো খান একাডেমি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার প্রবাসী সালমান খানের অনলাইনভিত্তিক এ একাডেমির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুব সহজে ই অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যায়। একসময় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে সেই প্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে এসে সেটি ঘুরে ফিরে পর্যবেক্ষণ করর৷ দেখতে হতো। তারপর সেখানে ভর্তির জন্য আবেদন ফর্ম কিনে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন পর সেটি জমা দিতে হতো। তারপর আবার ভর্তি পরীক্ষায় এসে অংশ নিতে হতো।তারপর যখন সেই ভর্তিপরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতো তখন সেই প্রতিষ্ঠানে এসে ফলাফল জানতে হতো। যদি সেই প্রতিষ্ঠানটি একই শহরে হয় তো কিছুটা স্বস্তি কিন্তু যদি ভিন্ন শহরে হয় তাহলে তার জন্য অনেক ভোগান্তি হয় এবং বার বার যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক অর্থও ব্যয় করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেই যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সকল তথ্য পাওয়া যায় এবং অনলাইনের মাধ্যমেই ভর্তি ফর্ম জমা দেয়া এমনকি পরীক্ষাও দেয়া যায়।বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেই সম্পুর্ন ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব।এর ফলে শিক্ষার্থীকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হয় না।এতে করে সময়,অর্থ এবং শক্তির অপচয় রোধ হয়।এভাবে শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হতে পারে।আর অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস ও করতে পারে।মূলত এখন ঘরে বসে ই শিক্ষা অর্জন সম্ভব।। এভাবে বাইরের দেশের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরস্পরের সাথে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তুলে যা বিশ্বগ্রাম বাস্তবায়নে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।ইন্টারনেট এখন উন্মুক্ত বিশ্বকোষ। শিক্ষা,সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান,,গবেষণা সকল বিষয়ক তথ্য এখন অনলাইনে পাওয়া যায়।এবং এসব তথ্য পাওয়ার জন্য কোনো রকম খরচ ও করতে হয় না।যার ফলে এখন শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টারনেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা উপকরণ হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের মেধাবী যুবকেরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য সহায়ক অনেক শিক্ষামূলক সাইট তৈরি করছে প্রতিনিয়ত যার ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয় সহজে বুঝতে পারে এবং অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।বর্তমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক উন্নত হয়ে উঠছে।মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে বিভিন্ন কঠিন পাঠ্যবিষয় সহজে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে যার ফলে এখন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ভান্ডার আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে।শিক্ষকদের লেকচারগুলো অনলাইনে প্রকাশের মাধ্যমে সেগুলো থেকে অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে নানাভাবে।বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে ল্যাপটপ, ট্যাব বিতরণ করা হচ্ছে যার ফলে এগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগসমূহঃ
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। যেমন-
১. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতার ফলে সহজেই উন্নত বিশ্বের শিক্ষায় ব্যবহৃত পাঠ্যক্রম ও বিষয়বস্তুকে বিচার বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে।এর সাথে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, সমাজ,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে সহজেই আধুনিক যুগোপযোগী ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যক্রম ও কর্মসূচি প্রনয়ণ করা সম্ভব হচ্ছে।যেমন বর্তমানে দেশের সকল পাঠ্যক্রমে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা,শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, ই-বুক,বিভিন্ন ভিজুয়াল কন্টেন্টসমৃদ্ধ ওয়েব নির্ভর শিক্ষা সাইট নির্মাণ ও ব্যবহার এ ধরনের আধুনিক শিক্ষাক্রমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
২. বর্তমানে দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে মাধ্যমে প্রকাশ ও সংরক্ষন করা হয় বিধায় মেধার মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি অনেক শিক্ষার্থীবান্ধব এবং হয়রানিমুক্ত হয়েছে।প্রশ্নপত্র প্রনয়নে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে মেধার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে।
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বর্তমানের প্রেক্ষিতে পেশাদার৷ শিক্ষক তৈরি ও মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।এসব শিক্ষকরা পাঠ্যক্রম তৈরি, মূল্যায়ন, ফলাফল তৈরি শিক্ষাদান পদ্ধতি,পাঠ্যপুস্তক তৈরি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই অত্যন্ত পেশাদারি সফলতার সাথে ই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।এর ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার গুণগত ও প্রায়োগিক মান অনেক উন্নত হচ্ছে।যেমন শিক্ষকেরা এখন নিজেরাই ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের পাঠ্যবিষয়কে অনেক বেশি আকর্ষণীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করছেন।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন