মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিক্ষা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। একজন মানুষ শিশুকাল থেকে পূর্নবয়স্কপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত,এমনকি এর পরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষা লাভ করে থাকে। তবে সকল পরিবেশই যে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অনুকূল হবে,তা ভাবাটা সঠিক নয়। প্রতিষ্ঠানভেদে একেকজন শিক্ষার্থীর ওপর একেকরকম প্রভাব পড়তে পারে।
একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের গুনগত মান অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে অনেক সময় নিজেদের শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।এতে করে কিছু শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবনে সফল হয় ঠিকই কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
একজন শিক্ষার্থী ছোট বয়সে স্কুল-কলেজের গন্ডিতে ভবিষ্যৎকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হলে জীবন সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে। এমতাবস্থায় আর্থিক ব্যয়ের বৃদ্ধি, পরিবারের অতিরিক্ত প্রত্যাশা, সামাজিক চাপ,পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রত্যাশা এবং অতঃপর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতার মতো বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই চাপ উপকারী এবং এটি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে,কিন্তু বেশি চাপের ওজন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে হস্তক্ষেপ করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে এগুলো গুরুতর সমস্যার আকার ধারণ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাঝে এই মানসিক চাপ পরিচালনা করার জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। এসকল পদ্ধতির নিয়মিত অনুশীলন ধীরে ধীরে একজন শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। অন্যদিকে প্রতিধাপে মানসিক চাপ কাটিয়ে শিক্ষাজীবনের সফলতার দিকে তাকে ধাবিত করে।
1. পরিস্থিতি মোকাবেলার মনোভাবঃ যেকোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেকে বুঝতে হবে, কোনটা চাপের উৎস। এজন্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখা জরুরি। একজন যখন ব্যায়াম করেন, তখন তার মস্তিষ্ক এমন কিছু হরমোন নিঃসরণ করে যা ভালো লাগার অনুভূতি দেয়। এটি হতাশাকে মুক্তি দিয়ে সবকাজে একটিভ থাকার শক্তি দেয়। দিনে কমপক্ষে ৩০মিনিটের জন্য কিছু না কিছু ব্যায়াম করা আবশ্যক।
2. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনঃ পড়াশোনার সকল ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। তবে ইতিবাচক বিষয়গুলির সাথে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলি তুলনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়। ইতিবাচকতা সবসময় মানুষকে তার মূল লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগী রাখে। একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে সফলতার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
3. শিথিলতা আনয়নঃ শিথিল হওয়ার নতুন উপায় শিখতে হবে। শিথিলকরণের কৌশলগুলি অনুশীলন করা প্রতিদিনের চাপকে পরিচালনা করার একটি দুর্দান্ত উপায়। শিথিলকরণ কৌশলগুলি হৃদস্পন্দনকে ত্বরান্বিত করে এবং রক্তচাপকে সঠিক পর্যায়ে থাকতে সহায়তা করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ধ্যান থেকে শুরু করে ইয়োগা;অনেক উপায় আছে।যা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা বই, অথবা অনলাইনে ভিডিও দেখে শেখার চেষ্টা করা যায়।
4. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাঃ একটি ভাল রাতের ঘুম একজন মানুষকে বিশেষত একজন শিক্ষার্থীকে আরও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে এবং আরও শক্তি অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে। তাই প্রতি রাতে প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুম খুব দরকার। একইসাথে স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখা জরুরি। উচ্চ চিনিযুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে এবং শাকসবজি, ফলমূল, গোটা দানা, স্বল্প ফ্যাটযুক্ত বা ননফ্যাট দুগ্ধ এবং চর্বিযুক্ত প্রোটিনগুলি খাবারের সাথে যোগ করতে হবে।
5. ব্যাক্তিত্বের বিকাশঃ মানসিক চাপ সৃস্টি হবে,এমন কাজ দেখলে সমসাময়িক কারো সাথে মতবিনিময় করতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করে কাজ করতে পারলে তা সহজ হবে।নিজের প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করতে হবে; একইসাথে অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।
শিক্ষাজীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে অতিবাহিত করার জন্য মানসিক শক্তি অনেক বড় একটি বিষয়। এক্ষেত্রে চাপ না নিয়ে স্বাভাবিকভাবে এবং স্বাস্থ্যকর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম বজায় রাখা সম্ভব। তবে অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব হলে তাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া দরকার হবে।