Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

শিক্ষা, শিক্ষিত এবং শিক্ষক

শিক্ষা: বিভিন্ন দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ বিভিন্নভাবে শিক্ষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। শিক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন প্রাচীন দার্শনিক। সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিষ্টটল । শিক্ষার পরিচয় ও সংজ্ঞা সুদূর প্রসারী । মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে জানা যায়-নবীগণ শিক্ষা প্রচারের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁরা শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য সুস্পষ্টভাবে নিজ নিজ জাতির সামনে তুলে ধরেছেন । যা যুগ যুগ ধরে মানবতার কল্যাণে প্রবর্তিত ছিল । সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছিলেন । তাঁর উপর অবতীর্ণ আল কুরআন এবং তাঁর নিজের বাণী হাদিস থেকে শিক্ষার তাৎপর্য এবং লক্ষ্য দিবালোকের মত প্রতিভাত হয় ।

ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের নাম শিক্ষা। এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন বলতে বুঝায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যা ব্যক্তির কাছে প্রত্যাশা করে । জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও আদর্শগত উন্নতি অর্জন করতে পারে । যা ব্যক্তিকে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে ।

এরিস্টটল বলেন, “সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা বস্তুত শিক্ষা বলতে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে আত্মপ্রত্যয়ী, বিনয়ী বুদ্ধিদীপ্ত এবং দায়িত্বশীলতা অর্জনের গুণাবলী অর্জনকেই বুঝায় । জাতি সংঘ সাধারণ পরিষদের দৃষ্টিতে শিক্ষার লক্ষ্য:

* ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ
* মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ।
* মানসিক শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ ।
* শরীরিক সামর্থের পরিপূর্ণ বিকাশ ।
* মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ।
* জাতিসংঘ ঘোষণায় বর্ণিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।
* পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ।
* নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ
* নিজস্ব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।
* নিজের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।
* অপরাপর সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ।

* সমঝোতা, শান্তি, সহিঞ্চুতা, নারী, পুরুষের সমানাধিকার এবং সকল মানুষ, নৃ-গোষ্ঠী, জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং আদিবাসী লোকজনের মধ্যে মৈত্রির চেতনার আলোকে একটি মুক্ত সমাজে দায়িত্বশীল জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ।
* প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ।
এবার আসা যাক শিক্ষিতের কথা। কারা শিক্ষিত? আমরা খুব সহজে এর উত্তর দিয়ে দিতে পারি। যারা স্কুল কলেজের গণ্ডী পেরিয়ে বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করে তারাই শিক্ষিত । আজকাল শিক্ষা ব্যবস্থার যা অবস্থা প্রকৃত শিক্ষা নেই। শিক্ষিত ও ঢের। ভাল ফসলের জন্য ভাল বীজ, উপযুক্ত বীজতলা এবং পরিচর্যার প্রয়োজন । অন্যথায় বিছমিল্লায় গলদ ।

শিক্ষিত সে ব্যক্তি যার নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ মূল্যবোধ উচ্চমার্গের । সকল প্রতিকূলতার মাঝেও সে সততা, নিষ্ঠা আদর্শ ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে পারেন । নিজের সুখ সমৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যের উন্নতি এবং অগ্রগতিকে সম্মান এবং সানন্দে মেনে নিতে পারেন । মুখে তৃপ্তির হাসি আর অন্তরে পঙ্কিলতা, কুটিলতা অন্যকে চেপে ধরা বা নিচে নামিয়ে যারা আনন্দ পায় তারা আর যাই হোক না কেন আদর্শ শিক্ষিত নয়। তারা শিক্ষিত সমাজের মুখোশধার কীট। সমাজ ব্যবস্থার বিষফোঁড়। শিক্ষিত ব্যক্তিকে সকল সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা, কুসংস্কারমুক্ত হতে হবে।
শিক্ষক: সাদামাটা ভাবে বলতে গেলে-যিনি শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করান তিনিই শিক্ষক।

*তিনিই শিক্ষক যিনি সিদ্ধান্ত দেননা বরং শেখান কত ধরনের ভিন্ন উপায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ।
*তিনিই শিক্ষক যিনি সীমাবদ্ধতাকে নয়, সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেন *বই নয় যিনি বাস্তবতাকে মুখোমুখি করার সাহস দেখান এবং বাস্তবতাকে জয় করে বিজয়োল্লাস করেন ।

১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রণীত ঐতিহাসিক দলিলে শিক্ষকতাকে একটি সেবামূলক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০০৩ সালে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট মতে ‘শিক্ষার গুণগতমান নির্ভর করে শিক্ষকদের বিষয় জ্ঞানের পরিধি, তাদের প্রশিক্ষণ, তাদের কাজের আগ্রহ, দক্ষতা প্রভৃতির উপর । প্রকৃত পক্ষে ভাল শিক্ষক না হলে ভাল ফল পাওয়া যাবে না।

১৯৯৭ সালে অধ্যাপক সামছুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট মতে, শিক্ষকরা হচ্ছেন শিক্ষা ব্যবস্থার মূল শক্তি । অতএব শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতা ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সমাজ সব সময় অবহেলিত ছিল। তবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হলো বর্তমানে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি কল্পে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন যুগের দ্বার উন্মোচন করবে ।

আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশের যুগে একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না শিক্ষকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়। এটি একটি ব্রত ও বটে । যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যক্তি ও সামাজিক মানুষের চাহিদার ও পরিবর্তন ঘটছে । ফলে নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনা, পাঠ্যসূচী প্রণয়ন । পাঠ পদ্ধতি শিখন, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে আধুনিক উপকরণ যেমন: প্রজেক্টর, ভিডিও স্লাইড, রঙিন বোর্ড, মার্কার, ডাস্টার প্রভৃতি ব্যবহার কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষা দানকে উপভোগ্য ও চিত্তাকর্ষক করে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নামক ভীতি ভুলে আনন্দের সহিত সকল প্রতিকূলতাকে জয় করতে শিখবে ।

Related Posts

5 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No