সংবাদের প্রাচুর্য ও সহজলভ্যতার এই যুগে কিভাবে নিজেকে সামলে রাখবেন?

Breaking News
শব্দটা দেখলেই চোখ দাড়িয়ে যায়।
আমরা এমনটা মনে করে থাকি যে,বর্তমান সময়ে সংবাদপত্র বা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদসমূহ হলো এমন একটি বিষয় যা আমাদেরকে দুনিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু জানায় এবং অজ্ঞতা থেকে দূরে থাকতে আমাদের সাহায্য করে।

বিশেষত প্রতিনিয়ত নতুন সংবাদ এবং গুরূত্বপূর্ন বিষয় সম্পর্কে জানায় বলে সংবাদমাধ্যমগুলোকে এবং খোদ সংবাদসমূহ আমাদের মানসিক জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ন প্রভাব ফেলে।
তবে যদি এই বিষয়টিকেই একটু বিপরীতভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাবো,সংবাদের এই অতি সহজলভ্যতার কারনে আমরা প্রতিনিয়ত নিজ আত্মাবিমুখ হয়ে পড়ছি।তথাকথিত বাস্তবতার ঝনঝনানির কারনে আপন আত্মার প্রতি ধীরে ধীরে সম্পূর্নরূপে বেখেয়াল হয়ে পড়ছি।

গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করলে দেখবো সংবাদের প্রাচুর্যতার কারনে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দেবার ক্ষমতা অনেক কমে যায়।
নিজেকে খোজা,নিজ আত্মার গভীরে যাওয়ার ব্যাপার তো দূরে থাকুক, এই যুগে আমাদের নিজ নিজ আবেগগুলো পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায় সংবাদের বাহুল্যতার কারনে।

বাস্তব উদাহরন দিলে আসলে ব্যাপারটি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে।খুব কমন উদাহরন হলো “ফেসবুক”।
এখন ফেসবুকে একটি ঘটনাপ্রবাহ চলছে।
বর্তমানে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় দুটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে হৈ চৈ চলছে।খবরটি যারা দেখেছেন তারা মনে করছেন “এই কাজ একজন মা করতে পারে???!!!কি দুনিয়া আসলো”।এভাবে একটি বড় নিশ্বাস ছাড়বে কম বেশি প্রায় সবাই।

এতে করে সকল মা-বাবার মনে একটু আফসোসের রেশ ঢুকবে,কিছু মানুষ মহিলাকে মেরে ফেলতে চাইবে,কিছু মানুষ সমাজের দোষ দিবে।
অথচ বাস্তবতা হলো এই “আপনার জীবনের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নাই তবুও আপনি একটু হতাশ,একটু বিষন্ন,একটু রাগ,ক্ষোভ ইত্যাদির জন্ম দিবেন আপনার মনে।

ঠিক এভাবেই সংবাদপত্র এবং মিডীয়ার প্রতিটি সংবাদের বিপরীতে আপনার মনের কিছুটা অংশ হতাশা,আনন্দ,বিষন্নতা,রাগ,ক্ষোভের জন্ম দিবে।দিনশেষে আপনার নিজের জন্য আপনার মনে কোন জায়গা থাকবে না।
অথচ প্রয়োজন ছিল আপনার প্রতিটি কর্মের বিপরীতে আপনার মনে একটু রাগ,একটু ক্ষমা,একটু হতাশা,বিষন্নতা,আনন্দ,ক্ষোভের জন্ম নেওয়া।কিন্তু হচ্ছে কি?

অন্যের কর্মের বিপরীতে নিজ মনে বিভিন্ন বিষয়গুলোর জন্ম নিচ্ছে।
এটাই হলো সংবাদের অতি প্রাচুর্য ও সহজলভ্যতার সবচেয়ে খারাপ দিক।
এক খোচায় দুনিয়ার সব সংবাদ আপনার হাতের মূঠোয় সত্যি,তবে এই একটি খোচা আপনার সম্পূর্ন দিন এবং এভাবে প্রতিটা দিন আর অভ্যাসের কারনে বছরের পর বছর ধরে বহু দিন নষ্ট করে ফেলছে।সকাল পেরিয়ে রাত।এভাবে দিনের পর দিন চলে গেছে কিন্তু মনে হয়েছে যেন “একটা দিনেও তেমন কোন কাজই করা হলো না”।

আসলেই কোন কাজ হয়নি,কারন আপনার কর্মের বিপরীতে আপনার মনে কোন ফাইলই তো জমা হলো না।দিনশেষে ব্রেইন হিসেব কষতে বসে দেখবে স্টোররুম(মন)খালি।অথচ সারাদিন মাথার মধ্যে লাখ লাখ হিসেব আপনি কষেছেন,তবে তা আপনার মনে জমতে পারেনি বলে দিনশেষে আমলনামা নিজের কাছেই শূন্য মনে হয় আর এটাই সত্যি।যে দিনকে একবার আপনি হিসেব করেন কোন কাজ করা হলো না হিসেবে,হাজার চেষ্টা করলেও ঐ দিনে আপনার কোন কাজ হয়েছে তা খুজে বের করতে পারবেন না।এটাই বাস্তব।

তাই ফেসবুক এবং অনলাইন,অফলাইন মিডীয়ায় সংবাদ দেখার জন্য সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিন নির্ধারন করুন।শুধুমাত্র সেই দিনটিতেই ফেসবুক স্ক্রল করুন,হাজার মানুষের হাজার রকমের অভিজ্ঞতার বিপরীতে শুধুমাত্র একদিনের জন্য নিজের মনে কিছু ঢুকতে দিন।বাকী দিনগুলো কাটুক শুধুমাত্রই নিজের হিসেব নিকেশ ও অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন