সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয়

নিলা এবং রায়হান ভার্সিটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। দুজন একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশুনা করে। দুজনের বাড়ি একই উপজেলায় হলেও, গ্রাম ভিন্ন। রায়হান খুব মেধাবী এবং ভদ্র ছেলে। নিলা অনেক নরম ও শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। ভার্সিটি থেকে নিলার বাসা দুরে হওয়াতে সে নিয়মিত ক্লাস করতে পারত না।

নীলার ফ্রেন্ড পপির মাধ্যমে রায়হানের সাথে নিলার পরিচয় হয়। ওরা তিনজন অনেক ভালো বন্ধু হয়ে যায় এবং পড়াশোনার ব্যাপারে একে অন্য কে খুব সাপোর্ট করত। তবে নিলা এবং রায়হানের ভিতর আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা খুব ভালো ছিলো। বাসায় অবসর টাইমে ওদের ভিতর প্রচুর মেসেজিং চলতো।

১ম বর্ষের শেষের দিকে রায়হানের পুলিশে চাকরি হয় এবং ও ট্রেনিং এর জন্য খুলনা চলে যায়। নিষেধ থাকা স্বত্বেও রায়হান সেখানে ছোট একটা বাটন ফোন নিয়ে যায়। কারন এতোদিনে সে বুঝে গেছিলো নিলার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না। ওখানে গিয়ে তেমন ভাবে কথা বলতে পারতো না। ঐ মুহুর্তে রায়হান অনুভব করে,সে নিলা কে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু নিলার দিক থেকে এরকম কোনো ফিলিং ছিলোনা। তবে সে রায়হান কে খুব মিস করতো।

চাকরিতে জয়েনিং এর পর রায়হান নিলাকে প্রপোজ করে কিন্তু নিলা এটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কারন নিলা চায়নি কোনো রিলেশনশিপে যেতে। একপর্যায়ে নিলা রায়হানের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেটা বেশিদিন স্থায়ী ছিলো না। অবশেষে নিলা ও রায়হান রিলেশনে যায়। বেশ কয়েক মাস ভালোই চলছিল ওদের প্রেম।

কিছুদিন পর,নিলার আব্বু চাকরির সুবাদে অন্য বিভাগে ট্রান্সফার হয়ে যায় এবং ওদের সম্পর্কের ভিতর বিশাল দুরত্ব সৃষ্টি হয়। তারপরও একে অন্যের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায়। ট্রান্সফার হওয়াতে পড়াশোনায় নিলার ২ বছর গ্যাপ পড়ে যায় এবং ও নতুন করে সে ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। ওদিকে রায়হান অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এবং নিলাকে ইগ্নোর করতে থাকে। নিলা রায়হান কে কল দিলেও ঠিকমতো কথা বলতো না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেত। নিলার বুঝতে বাকি ছিলো না,স্থানগত দুরত্বের সাথে সাথে তাদের সম্পর্কেও অনেক দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

নিলা ছিলো খুব অভিমানী মেয়ে। সে মরে যাবে তবুও নিজের আত্মসম্মান নস্ট হতে দিবেনা। রায়হান কে ভুলে থাকার জন্য নিলা পড়াশোনায় অনেক মনোযোগি হয়ে যায় এবং এক পর্যায় রায়হানের ভূত টা নিলার মাথা থেকে হালকা হতে থাকে। নতুন ভর্সিটিতে নিলার কয়েকজন ভালো ফ্রেন্ড হয়। তাদের মধ্যে মিতু অনেক কাছের ফ্রেন্ড। নিলার অতীত, বর্তমান সবকিছুই মিতু জানতো।

কাকতালীয় ভাবে মিতুর সাথে রায়হানের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা বেস্টফ্রেন্ডে পরিনত হয়। যদিও মিতুর বয়ফ্রেন্ড ছিলো এবং সেটা রায়হান জানতোও। রায়হানের সাথে কথা বলে মিতু বুঝতে পারলো রায়হানের জীবনেও সত্যিকারের ভালোবাসা আসছিলো। কিন্তু রায়হানের ভূলের জন্য সেটা আগলে রাখতে পারেনি। এর জন্য রায়হান অনেক অনুতপ্ত। সে মরিচিকার পিছনে দৌড়ে তার সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সে এখনো সেই হারানো ভালোবাসা খুজে বেরায়।

সবকিছু জানার পরে মিতুর আর বুঝতে বাকি রইলো না,রায়হানের ভালোবাসার সেই মেয়েটি আর কেউ নয়। তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিলা। সব জানার পরও মিতু কাউকে কিছু বলেনি এমনকি বুঝতেও দেয় নি। শুধু অপেক্ষায় ছিল সঠিক সময়ের। কেননা মিতু একা সবকিছু সামলাতে পারবে না। কারণ নিলা খুব অভিমানী মেয়ে। হঠাত করে রায়হানের আগমন ও মেনে নিতে চাইবে না। ২ মাস পরে মিতুর বয়ফ্রেন্ড দেশে আসে এবং ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে যায় (ওদের সম্পর্কের কথা ২ পরিবারই জানতো এবং মেনেও নিয়েছিল)।

কথা ছিলো মিতুর গায়ে হলুদে নিলা শাড়ি পরবে। যেই কথা সেই কাজ। মিতুর গায়ে হলুদে রায়হানকেও ইনভাইট করা হয়। তখনো রায়হান এবং নিলা জানত না, তাদের জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে মিতু রায়হানের মেসেঞ্জারে নিলার কিছু পিক পাঠিয়ে দেয় এবং বলে দেয় নিলার সবচেয়ে পচ্ছন্দের জিনিস নিয়ে আসতে। যেন রায়হান সরি বলে সেই জিনিস টা নিলার হাতে দিলে নিলার অভিমান ভেঙে যায়। এই মেসেজ লিখে মিতু ফোন বন্ধ করে দেয় এবং অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। স্ট্রেজে বসে মিতু নিলার কানে কানে বলে, আজকে আমি তোকে তোর লাইফের বেস্ট গিফট দিব। আনমনেই নিলা বলে উঠে,,,,,
কে? রায়হান??
কয়েক সেকেন্ড মিতু স্তব্ধ হয়ে যায় এবং কথার মোড় ঘুরিয়ে বলে, সময় হলেই জানতে পারবি।

বাসা থেকে বের হবে ঠিক সেই মুহূর্তে মিতুর মেসেজ গুলো রায়হান দেখতে পায়। মিতুর সাথে নিলার পিক দেখে রায়হান নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সাথে সাথেই মিতুকে কল দিল। কিন্তু মিতুর ফোন সুইচ অফ আসছিল। ক্ষুন্ন মনে মিতুর মেসেজ টা পড়লো এবং কথা মতো নিলার পচ্ছন্দের জিনিস কি সেটা কিনার উদ্দেশ্য বের হল। হঠাৎ রায়হানের মাথায় আসলো,সিএনজি করে গেলে অনেক সময় লাগবে। তাই নিজের বাইক নিয়ে রওনা হলো চকলেট কিনার উদ্দেশ্যে। কেননা নিলা চকলেট খেতে খুব ভালোবাসে এবং চকলেটের কাছে ওর সব অভিমান হার মেনে যায়।

রায়হান কয়েকটা দোকান ঘুরে অনেক রকমের চকলেট কিনে মিতুর বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। সর্বোচ্চ স্পিডে বাইক চালাচ্ছে কিন্তু তারপরও কেনো যানি মনে হচ্ছিল রাস্তা শেষই হচ্ছে না। রায়হানের মনে হাজার রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিভাবে নিলাকে সরি বলবে,কিভাবে ক্ষমা চাইবে,কিভাবে আবার প্রপোজ করবে,,,,,,, আরও কতো কি। এসব ভাবতে ভাবতেই পিছন থেকে হঠাৎ তার বাইকে ধাক্কা লাগলো এবং ও রাস্তায় পড়ে গেল 😪😪

ওদিকে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ পর্যায় কিন্তু রায়হানের আসার কোনো খবরও নেই। মিতু রায়হান কে কল দেয়ার জন্য ফোন টা ওপেন করে কিন্তু ওর আম্মুর ডাক পেয়ে চলে যায়। আর কল দেয়া হয়না। নিলা মিতুর ফোন থেকে ওদের পিকগুলো মেসেঞ্জারে নিচ্ছিল। হঠাৎ করে রায়হানের আইডি চোখে পড়ে,,,,
বেশ কয়েক মুহূর্ত নিলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মেসেজ গুলো ওপেন করতেই নিলা বুঝে গেল, মিতু তাকে কিসের সারপ্রাইজের কথা বলছে। নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। মিতুর মোবাইল দিয়েই রায়হান কে কল দিল। চারবার কল দেয়ার পর ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত লোকের কন্ঠস্বর ভেষে আসলো। তিনি বললো,আপনি যাকে কল করেছেন তিনি বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। পথচারীরা তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি হসপিটালে চলে আসেন। হসপিটালের ঠিকানা দিয়ে লোকটি লাইন কেটে দিল।

লোকটির কথা শেষ হতেই নিলা রায়হান বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। নিলার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে এডমিট করে। মিতু বুঝতে পারছিল না, হঠাৎ করে নিলার কি হলো। পরোক্ষনেই রায়হানের কথা মনে হলো। অনেক বার কল দেয়ার পর ওপাশ থেকে অপরিচিত একজন বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলো, পেশেন্টের অবস্থা আশংকাজনক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা হসপিটালে চলে আসুন। মিতুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

মিতুর হবু বর কে বিষয় টি জানানোর পর,দুজন একসাথে রওনা হলো। প্রথমে নিলাকে দেখতে গেল। গিয়ে দেখে নিলার এখনো ঙ্গান ফিরেনি। ওকে দেখে কৌতুহল নিয়ে নিলার আত্মীয় স্বজনরা এগিয়ে গেল। মিতু নিজেকে সামলে নিয়ে নিলার আম্মু কে বিষয় টা সংক্ষিপে বললো। তারপর রায়হান কে দেখার উদ্দেশ্য রওনা হলো। ওরা হসপিটালে ঢোকার কিছুক্ষন পড়েই রায়হানের আত্মীয়রা ওকে অন্য হসপিটালে নিয়ে যায়।

টানা ২৯ ঘন্টা পর নিলার ঙ্গান ফিরে।কয়েক মুহূর্ত পর আবার ঘুমিয়ে যায়। যখন মোটামুটি সুস্থ পর্যায়ে আসে তখন নিলা রায়হানের কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। কিন্তু ওর পরিবার কোনোভাবেই তা সাপোর্ট করেনা। দির্ঘদিন চিকিৎসা শেষে রায়হান কে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। রায়হানের পুরো শরীর প্যারালাইসড হয়ে গেছে। আপনজন বলতে কাউকেই চিনেনা। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রায়হানের পরিবারের লোকেরা রায়হান কে সেবা যত্ন করতে থাকে। যতই দিন যাচ্ছে, নিলার পাগলামির মাত্রা ততই বারছে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিলাকে রুমে আটকে রাখে। রায়হানের জন্য নিলা প্রায় মানসিক রুগীর আচরণ করতে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শে তারা নিলাকে নিয়ে রায়হানদের বাসায় যায়।

সেখানে গিয়ে রায়হানের এই করুণ দৃশ্য দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে নিলা কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করছে এবং রায়হানের কাছ থেকে এক মূহুর্তের জন্যও নড়েনি। এমনকি রায়হানের আম্মু ছাড়া কাউকে রায়হানের কাছে আসতেও দেয় নি। রায়হান দের বাসায় দুই দিন থাকার পর নিলার বাবা মা চলে আসবে, কিন্তু কোনো ভাবেই নিলাকে আনতে পারছিলোনা। অবশেষে ডাক্তার এনে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিলাকে বাসায় এনেছে। ঘুম ভাঙার পর আবারও সেই পাগলামি শুরু করে দিছে। মাঝে মাঝে মিতু নিলার বাসায় গিয়ে নিলাকে দেখে আসে। ওদের দুজনের এ অবস্থার জন্য মিতু নিজেকে দোষি ভাবে। কেননা, ঐদিন যদি মিতু দুজন কে সারপ্রাইজ দেয়ার কথা না ভাবত তাহলে হয়তো এমনটা হতোনা,,,,,,,,,,
হয়তো ভালো কিছুও হতে পারত।।।

👉গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভূলবেন না।

Related Posts

16 Comments

মন্তব্য করুন