সমালোচনা কেন করা উচিত,কেন উচিত নয়?

আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তাহলো কখনো অন্যের সমালোচনা করবেন না।আমি জানি তোমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলে!চোখের সামনে খারাপ কাজ করতে দেখব, অন্যায় করতে দেখব।যদি চোখের সামনে কাউকে অন্যায় করতে দেখি তাহলে কি আমি সমালোচনা করবো না?

আসলে আমরা সব সময় অন্যের সমালোচনা বেশি করতে পছন্দ করি ওই লোকটা খারাপ,ওই লোকটা একদম বাজে, ওই লোকটা সারাদিন ফালতু বকবক করে, এই লোকটা শুধু ঘ্যান-ঘ্যান করে ,ওই লোকটা অমুক,ওই লোকটা তমুক।

আসলে যেটা বলার সেটা হচ্ছে সমালোচনা অবশ্যই করতে হবে। সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ নেই। তবে সেটা অবশ্যই গঠনমূলক সমালোচনা হতে হবে। আর এসব বলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ আমরা সকলেই চাই আমি, তুমি আমরা সবাই চাই আমরা কত তাড়াতাড়ি অন্যের কাছে সমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠবো। যদি আপনি, যদি তুমি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাও তবে প্রধান শর্ত হচ্ছে অন্যের সমালোচনা বন্ধ করা।আমাদের অন্যের ভুল ত্রুটি গুলো সহজেই চোখে পড়ে কিন্তু নিজের ভুলগুলো সহজে চোখে পড়েনা।

যারা আমরা অন্যের সমালোচনা করা সত্ত্বেও সেই দোষ গুলো ,সেই ফাঁক গুলো, সেই ভুল ত্রুটি গুলো যখন নিজের মধ্যে খুঁজে পাই,অথবা খোঁজার চেষ্টা করি কি না? কোনদিন করি না।তাই বলে কি সমালোচনা করবে না ! অবশ্যই করবে সেটা হতেই হবে গঠনমূলক সমালোচনা।

ধরুন,আপনার বাড়ির যে মহিলাটি রান্নাবান্না করে প্রতিদিন আপনার জন্য । যার খাবার খেয়ে আপনি বফিসে যান,অফিস থেকে ফিরে যার খাবার খেয়ে বেঁচে থাকেন।একদিন সেই মহিলা জন্য বড় ইলিশ মাছ বাজার থেকে কিনে নিয়ে গেলেন রান্না করে খাওয়ার জন্য।কোন কারনে ভাত খেতে গিয়ে দেখলেন সেই মহিলাটি ইলিশ তরকারিতে লবণ কম দিয়েছে,আপনি তাকে চিৎকার করে উঠলেন, গালি দিলেন,যা মন চাই তা বলে ফেললেন।

ধরুন,সেই মহিলাটি আপনার স্ত্রী তার অবশ্যই কষ্ট হবে। তার মানে দুঃখ হবে ,তার কান্না পাবে, প্রতি মুহূর্তে একটা অনুতাপ হবে। সে যখন আপনার সাথে ইলিশ মাছটি ভাগ করে খাবে সে কোনদিন আনন্দ খেতে পারবে না।আপনি যদি সত্যিই মানুষ হন যদি সত্যিই আপনার মনুষ্যত্ববোধ থাকে সত্যি করে বলুন তো ইলিশ মাছটি সঠিক লবন দিয়ে রান্না করার পরেও তার ওই রকম চোখে মুখে হাসি দেখলে কি বেশি ভালো লাগতো না।

তাহলে তার সাথে এতো রাগারাগি করার দরকার কি?

এরকম না করে তার ভাল ভাল গুন গুলো তুলে ধরুন বলুন, ইলিশ মাছটা আজকের দারুন হয়েছে।তোমার হাতের সত্যিই একটা ম্যাজিক আছে।তবে আজকে আরেকটু বেশি মজা লাগতো যদি ইলিশ মাছের তরকারিতে লবণ আর একটু বেশি হতো।তাকে একটু সময় দিন। দেখুন না, সেও তো এক সময় মাছের তরকারিটা মুখে দেবে সে নিজেই কি বলে?সে হয়তো আপনার থেকেও বেশি জোরে বলবে, এই বাবা মাছের তরকারিতে তো লবণ হয়নি?তুমি যে বললে রান্না স্বাদ হয়েছে?

তখন আপনি তাকে হাসিমুখে বলবেন আপনার হাতের রান্নার যে ম্যাজিক তাকে লবণ কম হলেও স্বাদ পাওয়া যায়, খেতে খুব সুস্বাদু লাগে।বিশ্বাস করুন, পরদিন থেকে সেই মাছ রান্না করার সময় অনেক বেশি মনোযোগী হবে।একটা গল্প বলি, জার্মান সেনাবাহিনীতে জানেন কোন রকম অভিযোগ নেয়া হয় না,না নেয়া হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হয় না। বলা হয় এখন তোমার অভিযোগ নেয়া হবে না কারণ এখন তোমার মাথা গরম আছে তুমি বাড়ি যাও,মাথা ঠান্ডা করো 72 ঘন্টার পর এসে তুমি তোমার অভিযোগ ফাইল করবে।বিশ্বাস করুন, একটা গবেষণায় উঠে এসেছে 72 ঘন্টার পর 100শতাংশ অভিযোগ থেকে নেমে আসে 20 শতাংশ অভিযোগে।

মনে করেন আজকে আপনার সাথে আমার ঝগড়া হলো!হয়তো আমার উপর আপনি জোরে চিৎকার করবেন, গালি দেবেন,হয়তো রাগের মাথায় হাতের কাছে পেলে খুনও করতে পারেন।কিন্তু বিশ্বাস করুন, ৭২ ঘন্টার পর যদি আপনার সাথে আমার দেখা হয় তাহলে আপনার রাগ অনেকটাই কমে যাবে।ঠান্ডা মাথায় দুই একটা কথা বলে আমার ভুলগুলো দেখিয়ে দিলেন ব্যাস এটুকুই।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে অফিস-আদালত, রাস্তা ঘাটে, বাসাবাড়ি সব জায়গায় ছোট খাটো কিছু না কিছু অপরাধ অভিযোগ থাকবেই। তাই বলে অন্যের সমালোচনা না করে যদি আমি তাকে গঠন মূলক কথা বলতে পারি তাহলে সেটা অনেক অনেক বেশি মঙ্গলের । সেটা তোমার জন্য ,আমার জন্য,সমাজের জন্য, আমাদের সবার জন্য।চীনের একটা দার্শনিক এর কথা বেশ কিছুদিন আগে আমি পড়ছিলাম,তিনি বলছিলেন, পড়শি বাড়ির ছাদের ময়লা দেখে হাসার কি আছে ,তোমার বাড়ির সদর দরজার হয়তো এর চেয়ে বেশি নোংরা।এও ঠিক তাই। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে আপনি আপনার দিকে আঙ্গুল তুলুন।

জানেন তো সমালোচনা করা মানুষের একটি বড় স্বভাব।সমালোচনা করা আসলেই হচ্ছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা। টুকটাক ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেওয়াই আসলে আসল মনুষ্যত্বের পরিচয়। জানেন সমালোচনা হচ্ছে দিনের শেষে ঘরে ফিরে আসা পায়রার মত । সারাদিন বকম বকম করে আকাশের উড়ে বেড়াবে আর তারপর সন্ধ্যাবেলা হলে ঠিক তার বাসায় ফিরবে। আপনি যদি অন্যের সমালোচনা গুলো বার বার বলতে থাকেন ছোট বড় ভুল, ত্রুটি, অন্যায় সেগুলো নিয়ে যদি আপনি সব সময় সমালোচনা করেন, আড্ডা দেন, রসিকতা করেন, এভাবে অন্যের সমালোচনা করে যদি নিজের ভালো হওয়ার চেষ্টা করেন তবে এটাও জেনে রাখুন, সেই মানুষটাও আপনার ছোট দোষ-ত্রুটি দেখবে সেটা মহাকাব্য করে দেখাবে, তখন আপনার ছোট ভুলগুলো বিশাল বড় করে দেখবে মানুষ।

এতে করে আপনি মানুষের কাছে ছোট হবেন এবং নিজেও লজ্জিত হবেন।এক সময় মানুষ আপনাকে খারাপ চোখে দেখবে।প্রতিশোধের উপর প্রতিশোধ ,চোখের বদলে চোখ নিলে একদিন হয়তো পৃথিবীটা যেমন অন্ধ হবে।তেমনি সমালোচনার বদলে সমালোচনা, পাল্টা সমালোচনা করলে আসলে আমাদের হীনমন্যতায় প্রকাশ পায়।

তাই আসুন আমরা আজকে থেকে সবাই মিলে এমন একটা শপথ করি, যে আমরা অন্যায়, অকারণে কাউকে সমালোচনা করবো না। আমরা নিজে সাধু সেজে অন্যের সমালোচনা করতে যাব না।যে মানুষকে আমরা সমালোচনা করছি সে মানুষটার মধ্যেও কোনো না কোনো একটা ভালো গুণ রয়েছে, যা আপনার, আমার মধ্যে নেই।

আসুন না আমরা সেই ভালো গুণটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করি।কারণ আমরা এখন যা ভাববো, সেটাইতো আগামীকাল ভাববে আমাদের পৃথিবী।তাই মানুষ কি ভাবছে, আমরা কি ভাবছি, তোমরা কি ভাবছো, কি ভাবাচ্ছো মানুষকে ?

আমার এই মন্তব্য কোথাও ভালো-মন্দ, কোথাও পাল্টা যুক্তি সব কিছু আমাকে জানাও, ভালো লাগলে লাইক দাও, কমেন্ট করে জানাও। এসব বিষয় নিয়ে আমি আবারও আগামী কোন সংখ্যার, আগামী কোনদিন, আগামী কোন বিষয় নিয়ে কিভাবে এই পৃথিবীতে আরো সুন্দর হয়ে উঠতে পারি।

ততদিন পর্যন্ত সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।

Related Posts