এই পৃথিবীতে রয়েছে আশ্চার্যন্বিত হওয়ার মতো অনেক কিছু।স্থলে হোক আর সাগরে, প্রকৃতি হচ্ছে অপার বিস্ময়ের লীলাক্ষেত্র।স্থলভাগে বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র যত প্রাণী রয়েছে তার থেকে বেশি প্রাণী রয়েছে জলভাগে।এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যাদের সম্পর্কে এখনো বিঙ্গানীরা আবিষ্কার করেও শেষ করতে পারেনি।নীলতিমির মতো বৃহৎ প্রাণি ছাড়াও আছে বিপজ্জ্বনক প্রাণীরাও।সাগরের এত এত বৈশিষ্ট্যের প্রাণিদের মধ্যে থেকে আজকে আমরা কথা বলবো “সমুদ্রের গরু” বা ইংরেজিতে যাকে বলে “Manatee”(ম্যানাটিস) তাকে নিয়ে।তবে এই সমুদ্রের গরু স্থলের গরুর মতো গৃহপালিত নয়।তবে গরুর যেমন নিরীহ আচার আচরণ তেমনি এদের আচার আচরণ ও নিরীহ।
সমুদ্রে চার ধরনের গরু রয়েছে।এদের একটিকে “ডুগঙ্গ”(Dugong) অন্য তিনটিকে বলা হয়”ম্যানাটিস”(manatee)।অনেকটা মানুষের মতো দেখতে বলে এদেরকে মৎস্যকন্যা ও ডাকা হয়।
১.ম্যানাটিস একটি স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক প্রাণী।এরা সমুদ্রের ধারের পানিতে এবং নদীতে বসবাস করতে পারে।এদেরকে সামুদ্রিক গরু(Sea cows)নাম এ ডাকা হয়।এদেরকে আরও একটি নামে ডাকা হয় আর তা হচ্ছে ‘নিরীহ দৈত্য’ বা “Gentle giant”.এরা সাইরেনিয়া বর্গের একটি প্রাণী।এদের সাথে মিল আছে এমন দুটি প্রাণী হলো স্থলের বৃহদাকার হাতি এবং অতিক্ষুদ্র হাইরাক্স জাতীয় প্রাণী।যদিও বাহ্যিক দিক দিয়ে মনে হতে পারে এদের মধ্যে কোনো মিল ই নেই,কিন্তু বিঙ্গানীরা জেনেটিক্যালি এদের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন।তাই ম্যানাটিরা একটি বিস্ময়কর প্রাণী এতে সন্দেহ নেই।
২.আকার ও আকৃতি:সাধারণত তিন ধরনের ম্যানাটিস দেখতে পাওয়া যায়।তারা হলো-
২.১:ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ম্যানাটি-লম্বায় ৩.৫ মিটার
২.২:আফ্রিকান ম্যানাটি-লম্বায় ৩.৫ মিটার
২.৩:অ্যামাজোনিয়ান ম্যানাটি-লম্বায় ২.৮ মিটার
পরিণত ফ্লোরিডিয়ান ম্যানাটি রা প্রায় ১২০০ পাউন্ড এবং দশ ফিট লম্বা হয়।তবে এরা আরও বৃহৎ আকৃতির তথা ১৩ ফুট লম্বা ও ৩৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
৩.বৈশিষ্ট্য:সামুদ্রিক গরুর যেহেতু অনেক বৃহৎ তাই এদের সবচেয়ে পছন্দের কাজ হচ্ছে ধীরে ধীরে সমুদ্রের নিচে চলাফেরা করা এবং খাদ্য খোঁজা।এরা লতাপাতা জাতীয় খাদ্য খেয়ে জীবনধারণ করে।খাবার গ্রহণের কারণে এদের দাঁত প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়।ম্যানাটি সর্বোচ্চ পনের কিলোমিটার পার ঘন্টা বেগে চলতে পারলেও এরা সাধারণত পাঁচ কিলোমিটার পার ঘন্টা বেগেই চলতে অভ্যস্থ।ম্যানাটিরা যেহেতু স্তন্যপায়ী তাই তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর পর পানির উপরে উঠে নিঃশ্বাস গ্রহণের প্রয়োজন হয়।ম্যানাটিরা একবারে সাধারণত একবারে ফুসফুসের নব্বই শতাংশ বায়ু পরিবর্তন করতে পারে।মানুষের সাথে যদি তুলনা করা হয় তবে আমরা দেখতে পাবো মানুষ একবারে মাত্র ফুসফুসের১০ শতাংশ বায়ুর পরিবর্তন ঘটাতে পারে।পার্থক্য থেকেই বোঝা যায় তারা কতটা শক্তিশালী ফুসফুসের অধিকারী।
ম্যানাটিরা একসাথেও চলাচল করতে পারে।এদের কে একসাথে একটি দল বা ইংরেজিতে “Aggregation” বলা হয়।সাধারণত একটি দলে সর্বোচ্চ ছয়টি ম্যানাটি থাকতে পারে।
৪.ম্যানাটির জন্য হুমকিসমূহ:
ম্যানাটিরা যেহেতু হালকা গরম সমুদ্রের পানিতে থেকে অভ্যস্থ,প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে এরা এদের বাসস্থান হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।প্রতিনিয়ত জাহাজ এবং নৌকার নোঙরের খোচা খেয়ে এরা হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত।প্রপেলার ব্লেড ও এদের ক্ষতি করছে প্রচুর।এরা যেহেতু ঘাস জাতীয় খাবার খায়,এদের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।বিষাক্ত শৈবাল যা রেড টাইড তৈরি করে তার কারণেও এদের প্রজাতির সদস্য সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে।তবে মানুষ অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও এদের কিছুটা সাহায্য করছে “waterplant ” তৈরীর মাধ্যমে।ওয়াটার প্লান্ট এর কারণে সমুদ্রের কিছুটা জায়গার পানি মোটামুটি গরম থাকে।
৫.ম্যানাটিকে নিয়ে মজার কিছু তথ্য:
৫.১:ম্যানাটিরা সুতীক্ষ্ণ ও তীব্র শব্দ তৈরী করার মাধ্যমে স্বল্পমাত্রার যোগাযোগ স্থাপন করে।
৫.২:ম্যানাটিরা কোন ক্ষতিকর প্রাণী নয়।এরা নিজে থেকে কখনো কাউকে আক্রমণ করে না।এমনকি সমুদ্রে কোন মানুষকে সাঁতার কাটতে দেখলে এরা এগিয়ে যায়।এবং তারা তাদের পেটে হাত বুলিয়ে দেয়া পছন্দ করে।সাধারণত ডুবুরীদের কাছে তারা নিজেরাই আসে।
৫.৩:ম্যানাটির সাথে সাঁতার কাটার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ভোর বেলা।যখন অনেক কম মানুষ থাকে।
৫.৪:ম্যানাটিরা প্রথমে কাছে এলে তাদেরকে স্পর্শ ও করতে পারবেন।
৫.৫:ম্যানাটিরা বাতবর্ত ক্রিয়া করে।তবে পানিতে ভেসে থাকার জন্য তারা বায়ুকে নিজেদের পেট এ জমিয়ে রাখে।যাতে তাদের প্লবতা বৃদ্ধি পায়।আবার ডুবে যাওয়ার সময় তারা বায়ু ছেড়ে দেয়।তাই বাতবর্ত ক্রিয়া তাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ।
সামুদ্রিক গরু বা ম্যানাটি কে টিকিয়ে রাখতে হলে অনেক যত্নের প্রয়োজন।এই প্রাণিটিকে টিকিয়ে রাখতে সবাই যথাযথ চেষ্টা করবে এই কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।