ছাত্রজীবনকে ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতিকাল বলা হয়। সময়টিকে তুলনা করা হয় চারাগাছের সঙ্গে ; যা একদিন মহীরুহে পরিণত হবে । মানবিক শৃঙ্খলাবােধ ছাত্রজীবনের অন্যতম ভিত্তি । কারণ সময়ের সঙ্গে চলতে না পারলে মানুষের আত্মােন্নয়ন সম্ভব নয় । সে কারণে নিয়মমাফিক জীবনানুশীলনের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যকে স্থির করে সেদিকে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যেক ছাত্রের একান্ত কর্তব্য ।
ছাত্রজীবনের মূল দায়িত্ব পড়াশােনার মাধ্যমে আত্মােন্নয়ন । তবে এর পাশাপাশি ছাত্রদের আরও কিছু দায়িত্ব – কর্তব্য রয়েছে । দেশের প্রয়ােজনে , মানুষের প্রয়ােজনে , সমাজের প্রয়ােজনে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানাে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । আমাদের দেশের সােনালি অতীত ছাত্রদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই রচিত হয়েছে । ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ এর সামরিক শাসকের উৎখাত সবই সম্ভব হয়েছে ছাত্রদের কারণে । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা ।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন , ১৯৬৬ – এর ৬ দফা আন্দোলন , ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান এসবে ছাত্ররাই তালের নেতৃত্বের মাধ্যমে পাকিস্তানি অপশক্তি ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে । সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বর্তমানে ছাত্রদের দায়িত্ব অনেক বেশি ।
এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্ভাবনাময় । তাই কোনাে মানুষকেই খাটো করে দেখার সুযােগ নেই । সামাজিক উন্নয়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া । কারণ শিক্ষা একজন ব্যক্তির সূচককে যেমন ওপরে তােলে ; তেমনি একটি সমাজের প্রগতিকেও উর্ধ্বমুখী করে । সে কারণে ছাত্রসমাজকে গভীরভাবে শিক্ষার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে । এদেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়) শ্রমজীবী মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ দ্বারা পরিচালিত হয় ।
সে কারণে শিক্ষা এখনাে পুরােপুরি ভােগ্যবস্তুতে পরিণত হয়নি । শ্রমজীবী মানুষের কাছে ছাত্রসমাজের এ এক বড়াে ঋণ । নিজেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের প্রয়ােজনে আত্মনিয়ােগের মাধ্যমেই ছাত্রসমাজ সে ঋণ শােধ করতে পারে । তাই প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণ করে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা ছাত্রসমাজের প্রথম কর্তব্য ।
সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে দেশের উন্নয়নও নিহিত থাকে ; যেহেতু সমাজ দেশের বাইরের কোনাে বিষয় নয় । কিন্তু দেশের ভিন্ন কিছু প্রয়ােজন রয়েছে । যখনই মানুষ বিপর্যস্ত হয় , দুর্যোগের সম্মুখীন হয় তখনই দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রসমাজ তার পাশে এসে দাড়ায় । যেকোনাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয় । তখন ছাত্রসমাজ দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাশে গিয়ে দাড়ায় ; তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । এছাড়া জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে ছাত্রসমাজ ।
আধুনিক জীবনযাপন পদ্ধতি ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উৎকর্ষ প্রদান করে ছাত্রসমাজ । সামাজিক ও রাষ্ট্রিক নেতৃত্ব গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা আগেই বলা হয়েছে আমাদের দেশের সংকট মােকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রসমাজ । সে কারণে আমরা ছাত্রসমাজের শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখি ।
সমাজের কোনাে মানুষই রাজনীতির বাইরে নয় । তাই ছাত্ররাও রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অংশ । পড়াশােনার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একজন ছাত্রকে আলােকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তােলে । আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েছিলেন । তাই পরিণত বয়সে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সমর্থ হয়েছিলেন । আমাদের ছাত্রসমাজেরও উচিত সুস্থধারার রাজনীতির চর্চা করা । অনেকেই রাজনীতিকে অবজ্ঞা করে ছাত্রদের তা থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেন ।
বর্তমানে ছাত্ররাজনীতিও দূষণের শিকার । তাতে ভালাের চেয়ে মন্দ হচ্ছে বেশি । তাই বলে রাজনৈতিক চিন্তা থেকে দূরে থাকাটা সমীচীন নয় । কারণ রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি না হলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা পাবে না ছাত্রসমাজ ।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। সুন্দর সুন্দর পোষ্ট পেতে আমার সাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন।