স্বপ্নের সেতুর প্রকৌশল(ইঞ্জিনিয়ারিং) ☞জেনে নিই ➤পর্ব ২

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভাই ও বোনেরা আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি আজ আমি আপনাদের সামনে পদ্মাসেতু ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশল (২য়) পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক, আগের পর্বে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণে নদীর গভীরতা সেডিমেন্ট ট্রানস্পর্টেশন ও পাইলের উচ্চতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। এখন আমরা বিস্তারিত জানব। এ তো গেল পাইলের এর উচ্চতা পাইল গুলো কি সিমেন্টের তৈরি হবে? না পাইল গুলো হবে ফাপা এগুলোকে বালি দিয়ে পূর্ণ করা হবে পাই গুলোতে জং ধরবে না? হ্যাঁ ধরবে। ধরলেও ১০০ বছরে এর ক্ষয় হবে ১০ মিলিমিটার পদ্মা সেতুর ডিজাইন লাইফ ১০০ বছরের এই ১০০ বছরে পাইলের থিকনেস কমা ছাড়া আর অন্য কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। এটা পরীক্ষিত। পদ্মা সেতুর এই পাইলগুলো কে পিওর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় কেইসন বলে।
এত গেল একটা পাইলের কাহিনী কিন্তু সাধের এই পদ্মা ব্রীজের কলাম যাকে আমরা পিয়ার বলি সেটা কি এই একটা পাইলের উপর দাড়িয়ে থাক‌‌বে? অবশ্যই না। কারণ যদি পাইলের নিচের মাটি সরে যায় অথবা পাইল ভেঙে যায়। তাই প্রত্যেকটা কলামের নিচে ৬ টি করে পাইল দেওয়া হবে। যেমন মাকড়সার আটটি পা ৮দিকে দিকে থাকে ঠিক তেমনি। এগুলোকে কিন্তু ভার্টিক্যালি ইনক্লূইড করা হবে না। মানে সোজা ভাবে গাঁথা হবে না। ১০০ মিটার পাইল গুলোকে বাঁকা করে 1H:6V অনুপাতে মাটিতে ইনক্লূইড করা হবে। ফলে এরকমভাবে গাথার দরুন পাইলের পা গুলো সব দিকে বিস্তৃত থাকবে। আর এই সব দিকের মাটি একসাথে ধুয়ে যাবে না ইনশাআল্লাহ। এভাবে চারদিকে বিস্তৃত থাকার ফলে এদের লোড নেয়ার ক্ষমতাও একটু বাড়বে। তো এই ছয়টা পাইল ইনক্লূইড ভাবে থাকার ফলে স্রোতের ধাক্কা কম লাগবে। অর্থাৎ ল্যাটারাল বেশি নেবে। আর এইভাবে বাঁকা করে গাথার ফলে ১২০ মিটার পাইলে প্রায় ১১৮.৬ মিটার মাটির নিচে চলে যাবে। যেমন মই দেয়ালের সাথে খাড়াভাবে রাখলে সেটা যতটা উচু হবে হেলিয়ে রাখলে কিন্তু তা হবে না ব্যাপারটা এরকম।এই সেতুর পাইল গুলো ডিজাইন করার সময় (PIGLET) নামক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে ছিল।Optimum/Most Efficient পাইল খুজে বের করা হয়েছে এই প্রোগ্রাম দিয়ে। ৩ ধরনের পাইল ফাউন্ডেশন নিয়ে যে স্টাডি করা হয় এগুলো হলো:
(১)6 Rangking steel tubler pile.
(২)8 Rangking Steel tubler pile.
(৩)12 cast in situ vertical concrete pile.
স্টাডি করা এই তিন ধরনের পাইলের ভিতর সিক্স রেংকিং পাইল গুলো ই সবথেকে বেশি কার্যকরী। এই পা ইল গুলোর মাথায় থাকবে পাইল ক্যাপ। যাকে ভেসে থাকতে দেখা গেলেও সেটা কিন্তু মোটেও ভেসে থাকবে না।এটি রীতিমত ৬ টি পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।৯০০ স্কয়ার ফিটের এই ক্যাপ টি প্রায় ৩/৪ টি পরিবারের বসবাসের জায়গা। এটা খুবই একটা রাফ এস্টিমেট।
২টি পিয়ারের নিচের পাইল গুলো একটু অন্যরকম হবে, যেগুলোকে Vertical border concrete pile বলে। যেগুলো বাঁকা হবে না সোজা করে নদীর তলদেশে গাথা হবে। এই পাইল গুলো আমাদের বাসা বাড়ির পাইলের মতোই কংক্রিটের। মজার ব্যাপার হলো এই পাইলগুলো কে কাস্ট করার সময় পানির মধ্যে কংক্রিট ঢেলে দেওয়া হবে কিন্তু কংক্রিট ভেসে না গিয়ে জমাট বেঁধে পাইলে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে, একটা কলামের নিচে ১২ টা পাইল দেয়া হবে। এই পাইল ক্যাপ এর উপর দাঁড়াবে ব্রিজের পিয়ার বা কলাম। যেগুলো সম্পূর্ণ আরসিসি বা রেইনফোর্সমেন্ট সিমেন্ট কংক্রিট এর তৈরি। পুরো ব্রিজের কলাম হবে ৪১ টি।তবে মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশে শক্ত মাটির স্তর না পাওয়া গেলে হয়তো ডিজাইন এ কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে যেটা সবথেকে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী সেই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। আজ এ পর্যন্ত। দেখা হবে পরের পর্বে। সে পর্যন্ত সবাই ঘরে থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন আল্লাহ হাফেজ

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন