আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক–পাঠিকা ভাই ও বোনেরা আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি আজ আমি আপনাদের সামনে পদ্মাসেতু ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশল (৩য়) ও শেষ পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক,
আগের পর্বে আমরা পদ্মা সেতুর পাইল ও কলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি।আজকে সেতুর স্প্যান ও সকল বিষয়ে সম্পর্কে জানব।
পাইলের ওপর বসবে কলাম।তার ওপরে সর্বশেষ বসবে স্প্যান।প্রতিটা স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।তার মানে একটা পাইল যত বড় তার থেকে ও ৩০ মিটার বড়।তাহলে বুঝতে ই পারছেন।এই স্প্যান বসানোর ক্ষেত্রে তিন ধরনের মডেল কম্পিউটার অ্যনালাইসিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কোনটা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিবে।সেগুলো হল ১২০,১৫০,১৮০ মিটার।এর ভিতর সবচেয়ে,মজবুত ও সাশ্রয়ী হল ১৫০ মিটার।তাই এটাই ব্যবহার করা হয়েছে।
এই স্প্যান গুলা হল (Warren type still truss grider and concrete on upper deck) সবগুলো স্প্যান মিলে এর দৈর্ঘ্য হবে ৬,১৫০ মিটার।অর্থাৎ ৬.১৫ কিমিঃ প্রায়।মানে পুরো পদ্মা সেতুটি হল সাইন্সল্যাব বাসষ্টান্ড থেকে কল্যানপুর বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত বা শাহাবাগ থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত(আনুমানিক)।
পদ্মা ব্রীজ একটি দুইতলা ব্রীজ।Stell ট্রাসের মধ্যে দিয়ে যাবে ট্রেন।ট্রেন লাইন হবে “Dual gauge”।মানে “Board gauge” এবং “Meter gauge” দুই ধরনের ট্রেন ই এই সেতু দিয়ে চলতে পারবে।আমাদের দেশের পশ্চিম দিকের(রংপুর,রাজশাহী,কুষ্টিয়া,খুলনা সাইড)এর রেল লাইন “Broad gauge” আর বাকি সারা দেশের রেল লাইন “Meter gauge”এক ধরনের রেল অন্য ধরনের লাইন দিয়ে চলতে পারে না।কিন্ত Dual gauge দিয়ে এই দুই ধরনের রেলগাড়ি ই চলতে পারে।তো পদ্মা ব্রীজ দিয়ে আসলে এই দুই ধরনের রেলগাড়ি ই চলতে পারবে।
এখানে Emergency access point থাকবে যাতে ট্রেনে কোন ধরনের সমস্যা হলে।যাত্রী দের কে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা যায়। আবার এটা কোন সাধারন রেললাইন নয়।এটাতে যাতে দুটি কন্টেইনার নিয়ে মালগাড়ি যেতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত একটা কন্টেইনার নিয়ে রেলগাড়ি চলতে পারে।কিন্ত ভবিষ্যতে যাতে দুইটি কন্টেইনার নিয়ে চলতে পারে অর্থাৎ দোতলা কন্টেইনার নিয়ে চলতে পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।এর জন্য ব্রীজের মূল কাঠামোর লোড নেয়ার ক্ষমতা বাড়াতে হয়েছে।এই লোড প্রথমে নিবে রেল লাইন,লাইন থেকে ট্রাস,ট্রাস থেকে কলাম,কলাম থেকে পাইল।এজন্য পাইল কে আরো মজবুত করে বানাতে হয়েছ।স্বভাবিক ভাবে এতে খরচ ও বেড়ে গেছে।
এই দুইতলা ব্রীজের ওপরে বসবে কংক্রিটের ডেক।মানে ছাদ।এটার উপর দিয়ে গাড়ি চলবে।সবচেয়ে যে ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ডেক তৈরি সম্ভব সেটা ই ব্যবহার করা হবে। ডেক মানে ব্রীজের চওড়া হবে ২২ মিটার অর্থাৎ ৭২ ফিট।এখানে ৪ লেনে গাড়ি চলবে।
এই স্প্যান বসানোর আগে ফাউন্ডেশনে (Seismic isolation bearing use) করা হয়েছে।এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে ভূমিকম্প যে শক্তি নিয়ে স্থাপনা টিতে আঘাত করত তার শক্তি অনেক কম হবে।এই প্রযুক্তি বেজ isolation ব্যবহার করার ফলে ভূমিকম্পে ব্রীজের ভিত্তি মুভ করবে কিন্ত ওপরের ব্রীজটা নড়বে না।
তবে নড়াচড়ার একটা ব্যবস্থা থাকবে।এটাকে পেনডুলাম বিয়ারিং পদ্ধতি বলা হয়।এর সাহায্যে স্লাইড করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।যার ফলে এটি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।বিশ্বের অনেক যায়গায় এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হলেও এত বড় কোন প্রকল্পে এই প্রথম।এর ফলে পাইলের সংখ্যা,পাইল ক্যাপের সাইজ কিছুটা কমানো গেছে।
ব্রীজের মাধ্যমে কিছু ইউটিলিটি ও নদী পার হবে।যেমন গ্যাস ট্রান্সমিশন একটা,টেলিফোন ও অপ্টিক্যাল ফাইবার লাইন এবং ইলেক্ট্রিসিটি লাইন যাবে অবশ্যই।
এই পর্যন্ত হলো পদ্মা ব্রীজের বর্ণনা। এছাড়াও প্রজেক্টের আরও কাজ যেমন নদী শাসন অ্যাপ্রোচ রোড ইত্যাদি বহুত কাজ আছে।আপনারা যদি জানতে চান তা পরবর্তী কোন একটা পোস্টে তুলে ধরব।(ইনশাআল্লাহ।) সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন।সুস্থ থাকবেন।
আরো পড়ুনঃস্বপ্নের সেতুর প্রকৌশল(ইঞ্জিনিয়ারিং) ☞জেনে নিই ➤পর্ব ১
স্বপ্নের সেতুর প্রকৌশল(ইঞ্জিনিয়ারিং) ☞জেনে নিই ➤পর্ব ২
(বিঃদ্রঃ)বুঝার সুবিধার্থে কিছু ইংরেজি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।তাছাড়া সব ই শুদ্ধ বাংলা ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি।দয়া করে ভূল–ত্রুটি মার্জনা করবেন। আল্লা হাফেজ।