পর্ব-০১ঃ সার্বিক প্রিপারেশনের প্রাথমিক বিষয়!
ব্যাংক জব প্রিপারেশন দুই ধরনের হয়ে থাকে। ০১৷ প্রাইভেট ব্যাংক প্রিপারেশন; ০২। সরকারি ব্যাংক প্রিপারেশন। দুইটার জন্য দুই রকম প্রিপারেশনের প্রয়োজন হয়। তাই যাদের প্রাইভেট ব্যাংকে জব করার ইচ্ছা তাদের সরকারি ব্যাংকের প্রিপারেশন ফলো না করলেও হবে। আবার যাদের সরকারি ব্যাংক টার্গেট তাদের প্রাইভেট ব্যাংকের প্রিপারেশন ফলো করতে হবে না। প্রথমে বিভিন্ন ব্যাংকের সুযোগ সুবিধাগুলো আলোচনা করা যাক। তাহলে সেটা লক্ষ্য ঠিক করতে সাহায্য করবে।
#সুযোগ_সুবিধাঃ
প্রথমেই বলি প্রাইভেট ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা কি কি? প্রাইভেট ব্যাংকের বেতন ভাতা সরকারি ব্যাংক বা অন্যান্য যে কোনো সরকারি এবং অনেক প্রাইভেট জবের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। যে কোনো প্রাইভেট ব্যাংকে সাধারণত তিন ধরনের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ক. ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (MTO)- প্রথম বছর বেতন সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক বছর পর গ্রোস সেলারী ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
খ. প্রবেশনারী অফিসার (PO)- প্রথম বছর বেতন সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এক বছর পর গ্রোস সেলারী ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
গ. জুনিয়র অফিসার (JO)- প্রথম বছর বেতন সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার হতে পারে। এক বছর পর গ্রোস সেলারী ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
প্রাইভেট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার থেকে প্রমোশন পেয়ে অফিসার হয়, অফিসার থেকে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র অফিসার হয়। আর সিনিয়র অফিসার থেকে প্রমোশন পেয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার/এক্সিউটিভ অফিসার হয়। একজন প্রিন্সিপাল অফিসার/এক্সিউটিভ অফিসার মাসে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার টাকা বেতন পান।
প্রাইভেট ব্যাংকের বেতন সব সময়ই আকর্ষণীয় হয়। তাছাড়া প্রতি বছর শেষে ১০-১৫% পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, চার্জ ফ্রি ক্রেডিট কার্ড সুবিধা রয়েছে, অত্যন্ত মানসম্মত কাজের পরিবেশ, হাউজ বিল্ডিং লোন, কার লোন, চাকরি শেষে কনট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ), এবং গ্র্যাচুইটি সুবিধা আছে। তাছাড়া প্রতি বছর প্রোফিটের একটা অংশ কর্মীদেরকে ইনসেন্টিভ হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেটা Key Performance Indicator (KPI) অনুযায়ী দেওয়া হয়। যার ফলে কেউ মূল বেতনের ৫/৭ গুণ ইনসেন্টিভ পায় আবার কেউ একটাও পায় না।
এই বার বলি, সরকারি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধাগুলো কি কি? সরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ হয়। তার মধ্যে সিনিয়র অফিসারে ২৩১০০ টাকা বেসিক বেতন বাবদ সর্বসাকুল্যে কমপক্ষে ৩৩,৮৪০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৭,৩০৫ টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতি মাসে যতদিন অফিস করবেন প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা করে লাঞ্চ ভাতা পাবেন। লাঞ্চ ভাতা বাবদ প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৬০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাই লাঞ্চ ভাতাসহ মোট বেতন ৩৮ হাজার থেকে ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন।
অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) এর বেতন ভাতা একই হয়ে থাকে। প্রতি মাসে ১৬০০০ টাকা বেসিক বেতনে সর্বনিম্ন ২৪৭০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৭১০০ টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতি মাসে যতদিন অফিস করবেন প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা করে লাঞ্চ ভাতা পাবেন। লাঞ্চ ভাতা বাবদ প্রায় ৪০০০ থেকে ৪৬০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই হিসেবে প্রতি মাসে লাঞ্চ ভাতাসহ মোট বেতন ২৯ হাজার থেকে ৩১ হাজার টাকা পাবেন।
সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে অফিসার থেকে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র অফিসার, অফিসার (ক্যাশ) থেকে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ), এবং সিনিয়র অফিসার থেকে প্রমোশন পেয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার হয়। একজন প্রিন্সিপাল অফিসার সরকারি ৯ম গ্রেড থেকে সরাসরি ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৫৫০০ টাকা বেসিক বেতন পান। সেক্ষেত্রে সর্বসাকুল্যে ৫০৮০০ টাকা থেকে ৫৬৫০০ টাকা পাবেন। এর বাইরে প্রতিদিন অফিস করার জন্য ২০০ টাকা করে লাঞ্চ ভাতা পাবেন।
তাছাড়া প্রতি বছর জুলাই মাসে মূল বেতনের ৫% হারে একটা ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এছাড়াও ব্যাংকভেদে ৩/৫ বছর পর হাউজ বিল্ডিং লোন বাবদ সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পাবেন। ব্যাংকের এজিএম হতে পারলে কার লোন পাবেন ২০/২৫ লাখ টাকা। চাকরি শেষে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি তো আছে’ ই! এছাড়া ব্যাংকের প্রতি বছরের প্রোফিটের উপর সকল কর্মীরা ব্যাংকভেদে তাদের মূল বেতনের ২/৩/৪ গুণ ইনসেন্টিভ পেয়ে থাকে।
#আবেদনের_যোগ্যতাঃ
০১. প্রাইভেট ব্যাংকের MTO পদে আবেদন করতে সাধারণত মাস্টার্স/এমবিএ লাগে। তাছাড়া এসএসসি এবং এইচএসসি তে জিপিএ ৪.৫০ বা তার বেশি লাগে, তবে অনেক সময় কিছু ব্যাংক দুইটাতেই জিপিএ ৫.০০ চায়। অনার্স এবং মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.০০ বা তার বেশি লাগে। তবে অনেক সময় ৩.৫০ বা তার বেশিও চাওয়া হয়। PO পদেও একই রকমের চাহিদা থাকে তবে কিছু ব্যাংকে মাস্টার্স বাধ্যতামূলক চায় না।
আর সর্বশেষ JO পদ বা তার নিচের পদগুলোতে সাধারণত স্নাতক চায় এবং এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ চাওয়া হয় ৩.০০/৩.৫০ এবং স্নাতকের সিজিপিএ কমপক্ষে ২.৫০ চাওয়া হয়। সরকারি সকল ব্যাংকের সকল পদে যে কোনো বিষয়ে শুধু স্নাতক থাকলেই আবেদন করা যায়। তবে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক যে কোনো একটি তে প্রথম শ্রেণী থাকতে হবে এবং কোনো’ টাতে ৩য় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয়।
♣ পদোন্নতি সুবিধাঃ বেসরকারি ব্যাংকে সাধারণত দুই/তিন বছর পর পর প্রমোশন পাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে প্রতি বছরের ACR ভালো থাকতে হবে এবং টার্গেট পূরণ করতে হবে। সরকারি ব্যাংকে সাধারণত ৩.৫ থেকে ৫ বছর পর পর প্রমোশন পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর ACR ভালো থাকতে হবে এবং ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কমপ্লিট থাকলে দ্রুত প্রমোশন পাওয়া যায়।
♣ কাজের পরিবেশ ও চাপঃ প্রাইভেট ব্যাংকের কাজের পরিবেশ অনেক ভালো হয়। কাজের চাপ ব্রাঞ্চের উপর নির্ভর করে। তবে বিভিন্ন টার্গেট পূরণ করার চাপ থাকে। অর্থাৎ মানসিক চাপ বেশি থাকে। টার্গেট পূরণ না হলে প্রমোশন ঝুলে যেতে পারে, ইনক্রিমেন্ট নাও হতে পারে, প্রোফিট ইনসেন্টিভ থেকে বঞ্চিত হওয়া লাগতে পারে।
সরকারি ব্যাংকে সাধারণত কাজের চাপ বেশি থাকে। অফিসার প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে, বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। তবে টার্গেটের চাপ থাকে না। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের ম্যানেজারদের উপর টার্গেট পূরণ করার চাপ থাকে। তবে টার্গেট পূরণ না হলেও বেতন, ইনক্রিমেন্ট, প্রোফিট ইনসেন্টিভ, প্রমোশনে কোন সমস্যা হয় না।
♣ প্রাইভেট ও সরকারি ব্যাংকের কিছু তুলনামূলক পার্থক্যঃ ০১. সরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রাইভেট ব্যাংকের নিয়োগ অনেক দ্রুত হয়। তাই যাদের দ্রুত চাকরি দরকার তাদের জন্য প্রাইভেট ব্যাংক টার্গেট করা উচিত। প্রাইভেট ব্যাংক সার্কুলার দেওয়ার ৫/৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করে থাকে। তবে সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ শেষ হতে ১ থেকে ১.৫ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
০২. হাউজ বিল্ডিং লোনের ক্ষেত্রে যারা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করেন তাদের জন্য এটা পাওয়া অনেক কঠিন। তাছাড়া সুদের হারও বেশি, এতো দিন ৯-১২% পর্যন্ত ছিল। কিন্তু, সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই লোন পাওয়া তুলনামূলক সহজ এবং সুদের হার মাত্র ৫%।
০৩. প্রাইভেট ব্যাংকে প্রমোশন পাওয়া সহজ, সাধারণত যথা সময়েই প্রমোশন পাওয়া যায়। তবে সরকারি ব্যাংকে প্রমোশন পেতে একটু বেশিই সময় লাগে। ০৪. কাজের পরিবেশ প্রাইভেট ব্যাংকে অনেক ভালো, সরকারি ব্যাংকে তুলনামূলক খারাপ। তবে প্রাইভেট ব্যাংকে মানসিক চাপ অনেক বেশি থাকে। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকে কাজের চাপ বেশি থাকে।
♣ পরীক্ষা পদ্ধতিঃ প্রাইভেট ব্যাংকে সাধারণত এক সাথে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার মোট নম্বরের সাথে ভাইভায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়।
সরকারি ব্যাংকে প্রথমে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখান থেকে পদের সংখ্যা অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের প্রশ্ন এবং ভাইভায় ২৫ নম্বর থাকে। লিখিত এবং ভাইভার নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। এমসিকিউ পরীক্ষার নম্বর কোথাও যোগ হয় না।
♣ প্রাথমিক প্রস্তুতিঃ প্রাইভেট ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রথমেই Professor’s Key To Private Bank Job বইটি কিনে বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে। আর সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রথমেই Professor’s Key To Govt. Bank Job বইটি কিনে বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে। আজ এই পর্যন্তই বাকি পর্বগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করব।
ধন্যবাদ।।।।।।।