স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ করে নতুন ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে মাগুরা জেলার একজন মুক্তাচাষী

বাংলাদেশের দক্ষিণঅঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত মাগুরা জেলা। মাগুরা জেলার ভৌগলিক পরিবেশ ও মাটি কৃষি কাজের জন্য খুবই ভাল। মাগুরা জেলার খেঁটে-খাওয়া মানুষ কৃষি কাজ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারী রোগের কারণে মাগুরা জেলার অর্থনৈতিক অবকাঠামো বেশ দূর্বল হয়ে পরেছে। লকডাউনে কৃষকের আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতি সাধণ হয়েছে। এরপরও এই জেলার কৃষকেরা নতুন করে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টা করে চলেছে। মাগুরা জেলাই এক নতুন ধরণের উদ্যোগ নিলেন আবুল হোসেন। তিনিই প্রথম মাগুরা জেলাতে স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। আবুল হোসেন পুকুরে মাছ চাষ করেই অর্থ উপার্জন করতেন।

আবুল হোসেন ইউটিউবের মাধ্যমে একটি ছোট মেয়েকে ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা চাষ করার ভিডিও দেখতে পান এবং সেখান থেকে তিনি মুক্তা চাষের অনুপ্রেরণা জোগাই। তিনি পটুয়াখালীতে একজন উদ্যোক্তার সাথে মুক্তা চাষ সম্পর্কে কথা বলেন। পরবর্তীতে আবুল হোসেন তিন একর জায়গায় ছয়টি পুকুরে মাছের সঙ্গে ঝিনুকের মধ্যে ব্যাগ পদ্ধতিতে মুক্তা চাষ করছে। আবুল হাসান বিশ্বাস করেন তার এই ভিন্নধরণের উদ্যোগ থেকে অনেক তরুণ-তরুণী আশাবাদী হয়ে উদ্যোগ গ্রহন করবেন। আবুল হোসেনের পুকুরে মাছের খাবারের মধ্যে রয়েছে গোবর, সরিষার খৈল, টিএসপি ইউরিয়া।

ঝিনুক চাষেও ঠিক একইরকম খাবার লেগে থাকে। আবুল হোসেন আশাবাদী যে খাবারের খরচসহ অন্যান্য খরচ পুশিয়ে ঝিনুকের মুক্তা থেকে তিনি আবশ্যই লাভবান হবেন। তিনি বলেছেন যে খুব অল্প খরচেই এই মুক্তা চাষ করা সম্ভব। ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহ করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ মাস। এছাড়াও ২৫,০০০ মুক্তা থেকে প্রায় ১,০০,০০০ মুক্তা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে এই উদ্যোক্তা। আবুল হোসেন ও অন্যান্য মুক্তাচাষীরা বলেন বাংলাদেশ থেকে মুক্তা রপ্তানী করার কোন ব্যবস্থা নেই। এইজন্য তিনি সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছেন।

মুক্তা পুকুরের ভৌগলিক পরিবেশকে সুন্দর করে তুলে এবং মাছের চাষেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মাছের সাথে ঝিনুকের ব্যাগ পদ্ধতিতে মুক্তা চাষের উদ্যোগ মাগুরা জেলার অর্থনৈতিক অবকাঠামো পূণরায় শক্ত করে তুলবে বলে আশ্বাস আবুল হোসেনের। এছাড়াও মুক্তার বিশেষ চাহিদা পটুয়াখারীর কুয়াকাটাতে রয়েছে। পুটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটকেন্দ্রে মুক্তার মনকরা মালা ও গহনা কিনতে পাওয়া যায় এবং পর্যটকদের কাছেও বিশেষ কদর দেখতে পাওয়া যায়। ২৫,০০০ ঝিনুক থেকে ১,০০,০০০ মুক্তা প্রতিবছর পটুয়াখালী ও বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

মাগুরা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা শরীফ হাসান সোহাগ বলেন, ভৌগলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া মুক্তা চাষের জন্য উপযোগী। পুকুর, জলাশয়, নদী ও হাওড়ে এই ঝিনুকের ব্যাগ পদ্ধতিতে মুক্তা চাষ করে বেকার সমস্যার সমাধান হবে।

সূত্র: বাংলানিউজ২৪.কম

Related Posts

16 Comments

মন্তব্য করুন