মেসেজটি ফোনে টং করে বেজে উঠার সাথে সাথে ওপেন করে ব্যালেন্স চেক করলাম। আর দেখলাম একাউন্টে মোট ৪১৫ টাকা আছে। আগের ব্যালেন্স ছিলো ১১৫ টাকা। বুঝে নিলাম কেউ হয়তো নাম্বার ভুল করে টাকাটা আমার ফোনে পাঠিয়েছে।
এবার অপেক্ষা করতে করতে ভাবতে লাগলাম হঠাৎ ঘটে যাওয়া ব্যাপারটি নিয়ে। ভুল করে আসা টাকা ফেরত না দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে যে কেউ হয়তো সেকেন্ডের মধ্যই ফোন বন্ধ করে ফেলতো। ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে সে লোক অবশ্যই ভুলে টাকা পাঠানো লোকটির ফোনের অপেক্ষায় থাকবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকই ব্যাপারটি ভিন্নভাবে থিংকিং করতেন না। আর বিশেষ করে মেয়ে হলেতো নিশ্চিত এরকমটাই হতো। হয়তো কিছুতেই ভিন্নভাবে এনালাইসিস করার সুযোগটাও শূন্যের ঘরে।
ছোটবেলা থেকেই একটা বদ্বভ্যাস আমার। আমি বরাবরই যেকোন ছোট বড় ঘটনাকেই একটু সিরিয়াসলি না নিয়ে পারিনা। এই ঘটনাটিও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। অল্প পরিমান টাকার অংক হলে হয়তো আমি ব্যাপারটা আরও সহজভাবে ভাবতাম। কিন্তু টাকার অংকটা রিচার্জের ক্ষেত্রে অনেক বেশি! এত বেশি টাকা রিচার্জে ভুল হবার সম্ভাবনা খুব কমই হয়। তবে কি অন্যকিছু………?
বিষয়টি নিয়ে বারংবার ভাবনার রাজ্যে পড়ে থাকা হলো। কিয়ৎক্ষন পরে ফোনও এলো। একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত নাম্বার থেকে। রিসিভ করলাম। করার পর উনার সালাম বিনিময়ের পর ওনি টাকাটা ব্যাক করার জন্য বললেন। আমিও ওনার কথায় টাকাটা ব্যাক করতে রাজি হয়ে যাই।
কিন্তু হায়….! সমস্যাতো একটি নয়, দুই জায়গায় সমস্যা লেগে আছে। মোবাইলের ওপাড়ের লোকটি আমাকে শর্ত জুড়ে দিলেন। শর্ত-১ঃ আমাকে নিজে ফ্ল্যাক্সিলোড করতে হবে। শর্ত-২ঃ অথবা, আমার নিজেকেই বিকাশ করে পাঠাতে হবে। নাম্বারটা হলো……। নাহ্, নাম্বারটা গোপনই থাক।
এবার আমার বুঝতে আর এতটুকুও বাকি রইলো না। উনার মতলব ও উদ্দেশ্য কি ছিলো। আর কেনইবা তিনি এত বড় অংকের টাকা রিচার্জে ইচ্ছাকৃত ভুল করেছেন। আর কেনইবা তিনি আমার ফোনে পাঠিয়েছেন। প্রিয় পাঠক, আপনারও হয়তোবা এতক্ষনে বিষয়টি এতক্ষনে বুঝা হয়ে গেছে, ব্যাপারটিতে কি ঘটতে যাচ্ছে।
যাই হোক, ব্যাপার ও কুমতলবটি ধরতে পারায় টাকাটা আমি দূরের অন্য এক জায়গা থেকে আমি না দিয়ে অন্য একজনের মাধ্যমে দিয়েছিলাম।
আরে যাহ্…….। বাস্তবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো।
সময়টা বছর পাঁচ আগের। ২০১৫ সালের কোনো একটা সময়ে এক মেয়ে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে তাকে কিছু সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলো। অনুরোধটি ছিলো, মোবাইলে ফোন করে অপরিচিত কিছু ছেলে তাকে বিরক্ত করতো। আর ছেলেগুলো নাকি মেয়েটির বাসার ঠিকানাও জানতো। কিন্তু, পরিচয় ও ঠিকানা কিভাবে জানতো তা মেয়েটি ও তার পরিবার বুঝে উঠতে পারছিলো না।
এমতাবস্থায় মেয়েটি ও তার পরিবার ছেলেগুলোর ওপর খুব বিরক্ত হয়। বিরক্ত হওয়ার এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা আনুমানিক ধারনাবশত তার এলাকারই কয়েকটি ছেলের নামে পাশের থানায় সন্দেহভাজন মামলা করে। অথচ, যাদের নামে মামলা করে সেই ছেলেগুলো এই ঘটনার সাথে কোনও প্রকারেই জড়িত ছিলোনা।
এবার আসল ঘটনায় আসা যাক। ঘটনাটি হলো- এর আগে ঠিক একইভাবে কোন একদিন ঠিক সন্ধ্যামূহুর্তে মেয়েটির নাম্বারে ৫০ টাকা লোড আসে। এরপর ফোন করে তাকেও টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করা হয়। মেয়েটিও কথামতো টাকা ফেরত দিয়ে দেয়।
এরপরই ঐ ফ্ল্যাক্সিলোড এজেন্ট, যার নাম্বার থেকে টাকা পাঠানো হয়েছিলো তার নম্বরে কল করে ছেলেগুলো মেয়েটির অবস্থান জেনে যায়। তারপর থেকেই ছেলেগুলো কুমতলবে মেয়ের লোকেশনকে কেন্দ্র করে মেয়েটিকে বিরক্তিকর পরিস্তিতিতে ফেলে। যার কারনে মেয়েটি রিতিমত ভয়ে থাকতো। বাসা থেকেও বের হতে সাহস পেতনা। সব সময় হতাশায় থাকতো। এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে মেয়েটি সুইসাইড করতেও গিয়েছিলো।
উপরের দুইটা সাধারন বাস্তব ঘটনা আপনাদের শেয়ার করলাম। আপনার কাছে হয়তো এই দুইটা ঘটনাই মূল্যহীন মনে হতে পারে। কিন্তু, এই সাধারন ব্যাপারটি দ্বারাই হয়তো আপনার পরিবারের যে কেউ মানসিকভাবে হেনস্তা হতে পারে। এই সূত্র ধরে কিডন্যাপও হতে পারে। আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই!!
সুতরাং, এখনি সাবধান হোন। মানবিকতা দেখানো অবশ্যই মানুষের জন্য ভালো কাজ। কিন্তু, প্রতিটি কাজ করার আগেই অন্তত নিজের নিরাপত্তার কথা একবার হলেও ভাবুন।
মনে রাখবেন-
নিজের নিরাপত্তার বাইরে গিয়ে মানবিকতা দেখানো, আর খাল কেটে কুমির আনা একই কথা!