হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি পাতা

  স্মৃতি চারন

টিয়ে পাখির ডানা আর শীতকালের দূর্বা ঘাস যেমন , শৈশবটা ঠিক তেমনি সবুজ, কোমল। নানান কল্পনা আর স্বপ্নে রঙিন হয়ে থাকা এক অনন্য বর্ণিল জগৎ আমাদের শিশুকাল। বড় উচ্ছল আর প্রাণময় এ সময়। কত রকমের ইচ্ছা আর কল্পনায় যে স্বপ্নময় হয়ে থাকে, তার হিসেব নেই।….. হারিয়ে যাওয়া এ শৈশব কি আর ফিরে আসবে!? না…. কখনও আসবে না।…..
শৈশবের সে মধুর অনুভূতি আজও মনে নাড়া দেয়। আমি তখন গ্রামে থাকতে বেশি পছন্দ করতাম। কারণ ঢাকায় আমার কোন সাথী ছিল না। গ্রামে ছিল কাকাতো- মামাতো ভাইয়েরা। এ জন্যই যখন গ্রামে যাওয়ার কথা শুনতাম ,তখন আনন্দে মন নেচে উঠতো। যখন শুনতো আমরা গ্রামে আসছি। তখন তারাও আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যেতো। আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে খেতাম ।একসঙ্গে খেলতাম  একসঙ্গে ঘুরতাম। গ্রামের আঁকা – বাঁকা মেঠো পথে ঘুরতে খুব ভালো লাগতো ।দু’পাশে নানারকম গাছ,পালা নদ-নদী খাল-বিল ।প্রাণ জুড়ানো কোমল বাতাস।….. আহা! কি চমৎকার সেই অনুভূতি! মনে হয় যেন অন্য জগৎ ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর রাতে শীতল হাওয়া ।চারদিক কি নীরব- নির্জন। তারই মধ্যে জোনাকি পোকার মিটি মিটি আলো। সত্যই অদ্ভুত। চাঁদের আলো যখন পানিতে পড়ে তখন মনে হয় নদীর ঢেউ চাঁদকে নিয়ে যাচ্ছে নদীর এক তীর থেকে আরেক তীরে। এই সুন্দর রাতে সবাই একসাথে বসে গল্প টা বেশ জমে উঠতো। আর শীতকালে গ্রামে তো আরো বেশি মজা হতো। সবাই এক সাথে সকাল – সকাল ঘুম থেকে উঠে শীতের কাপড় পড়ে বাইরে বের হতাম, আর দেখতাম সব সাদা। কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। আহা! কি এক অপরূপ দৃশ্য, যখন কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দেয় ভোরের সূর্যের প্রথম আলো। কুসুমের মত সেই রোদ, এসে পড়ে দূর্বাঘাসে। ঘাসের ডগায়ে জমে থাকা শিশির ঝিলিক মেরে ওঠে। সরষে ফুলে  হয়ে থাকা মাঠ। মাঠের পাশ ঘেঁষে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছ থেকে গাছিরা পেরে আনে কাঁচা রস। মিষ্টি রোদে বসে নানুর হাতে বানানো সেই রসের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। খেজুরের রসে ভাজানো চিতই পিঠা। খেজুর গুড়ে বানানো ভাপা পিঠার স্বাদ এখনো জিহ্বায় যেন অনুভূতি হয়। কি দারুণ! আজও মনে ভালোলাগা ছড়ায়। সবাই একসাথে নাস্তা করতাম। কত মজা হতো তখন! মাছ ধরার জন্য পুকুর পাড়ে বড়শি নিয়ে বসে থাকতাম। আর মাছ ধরতাম। আর এই মাছ নিয়ে যে কত মজা করতাম তা বলে শেষ করা যাবে না। আহা! শৈশবের সেই রঙিন খাওয়া এখনো আনন্দ ঘন করে তুলে হৃদয়কে। শৈশবকাল কবে শেষ হয়ে গেছে। তবু যেন কিছুই শেষ হয় নি……….

Related Posts