ভদ্র লোকের খেলা ক্রিকেটে অনন্য সুন্দর এবং গৌরবের ব্যাপার সেঞ্চুরি শব্দটা৷ শব্দের আড়ালে খুব নির্দয় গগনার বেড়াজালে ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদরা খুঁজেন দেশ এবং দেশের বাইরে এর সংখ্যা কতো! এই হিসেবে কেউ কেউ নিজের কর্মে কিংবা সেঞ্চুরির গননায় নিজের গায়ে তকমা পেয়ে বসেন হোম বুলি ক্রিকেটার আর কেউবা যেকোনো মাঠের রাজা হিসেবে। তথা আপনার-আমার কাছে সেই হিসেবে বেশ ভালো ভাবেই বর্তমান সময়ে ঘরের মাঠের বুলি হিসেবে পরিচিত হচ্ছে টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক এর নাম! তবে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু মুমিনুলের সতীর্থরা এই জায়গায় কেমন? তাদের কেনো এই তকমা দেওয়া হয় না?
- মুমিনুলের হিসেব নিকাশ; মুমিনুল দেশের আভিজাত্যের পোশক গায়ে চাপিয়েছেন ৪০ বার। তার মধ্যে ২৩ বার এই ছিলো দেশের মাটিতে। আর বাকি ১৭ বার ছিলো প্রতিপক্ষের আপন ডেরায়! ক্যারিয়ারে ৪০ ম্যাচে মুমিনুলের রয়েছে ৯ সেঞ্চুরির বিপরীতে ১৩ অর্ধশত! সেঞ্চুরির ৯ টিই দেশের মাটিতে এবং অর্ধশত এত ৭ টি দেশের মাটিতে। বাকি ৬ টি কিন্তু বাইরের দেশের ২২ গজের রণাঙ্গনে!
- বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে মুমিনুলের অভিষেকের পর থেকে সেঞ্চুরি এসেছে ৩৪। যেখানে একা মুমিনুলের অবদান ৯ টি সেঞ্চুরি। মুমিনুলের অভিষেকের পর থেকে দেশের বাইরের মাটিতে ২০ টেস্ট ম্যাচ মোট ৪৩ জন প্লেয়ার খেলেছে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের বাইরে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যানে সেঞ্চুরি এসেছে ১০ টি। যা ঐ সময়ে মুমিনুলের সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ টি বেশি।
- এখন আসি দেশীয় ব্যাটসম্যানের দিকে; দেশের বাইরে সেঞ্চুরির দিকে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সফল মুশফিকুর রহিম। গেলো ৭ বছরে অর্থাৎ মুমিনুলের অভিষেকের পর থেকে মুশফিকের ৬ সেঞ্চুরির মধ্যে ৪ টিই দেশের বাইরে। এরপর সাকিবের ৩ টির মধ্যে ২ টি দেশের বাইরে। জেনে অবাক হবেন ঠিক এই সময়ে তামিমের করা ৫ সেঞ্চুরির মধ্যে ৪ টিই দেশের মাটিতে। অর্থাৎ দেশের বাইরে এই সময়ে তামিমের সেঞ্চুরি মাত্র ১ টি।
- দেশের বাইরে রান; মুমিনুলের অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশের দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান পেয়েছে মুশফিকুর রহিম (১৪৩৭)। আপনি জেনে অবাক হলেও হতে পারেন তালিকায় রয়েছে মুমিনুল হক এর নামও। মুমিনুলের অভিষেকের পর থেকে দেশের বাইরে টেস্টে ম্যাচে রান সংগ্রহে ৫ম স্থানে মুমিনুলের রান ৭৩৬। এই সময়ে দেশের বাইরে মুমিনুলের অর্ধশত এর সংখ্যা যৌথভাবে ২য় সর্বোচ্চ।
ক্যারিয়ারে শুরু তে রান উৎসবের পরিচয়ে নিজেকে চেনাতে না পারা ক্রিকেটার খুঁজ নিলে অনেক পাওয়া যাবে। তেমনি মুমিনুল ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত দেশের ন্যায় দেশের বাইরে দাপুটে কিছুই উপহার দিতে পারে নাই। এই কথা অকপটে স্বীকার করা বিন্দুমাত্র কারণ নেই। তবে যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট কিংবা দলের সকল খেলোয়াড় নিজেত পারফরম্যান্সে বাইরের দেশে ম্লান সেখানে একা মুমিনুল কিভাবে হতে পারে হোম বুলি ক্রিকেটার?
দেশেত বাইরে কিছু হাফসেঞ্চুরি এসেছে, সেগুলো যদি শতরানে রূপ দিতে পারতেন তাহলে গল্প টা বদলে যেতো। বদলে যেতো ঘরের বাঘ নাম দেওয়া মুমিনুলের গল্প। তা হয়তোবা এখনো পর্যন্ত পেরে উঠেননি মুমিনুল তবে সামনে যে পারবে না এমনটা ধারণা করা নেহাত অন্যায় এই বটে। হোম বুলি ক্রিকেটার বলতে গেলে তামিম ইকবাল কি দোষ করেছে? আর তাই আশা এবং প্রত্যাশার আড়ালে মোদের ধোয়াঁসা মোড়ানো চাওয়া একটাই মুমিনুল সবার প্রশ্ন এবং এই উপাধির জবাব ২২ গজে উইলো হাতে দিক! তার জন্যে রইলো নিতান্তর শুভকামনা!