আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ সপ্তাহের পরিকল্পিত এ্যাসাইনমেন্ট প্রোগ্রামে আজকে নিয়ে এলাম এই সপ্তাহে চলমান ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা (পার্ট-২, ৫ম সপ্তাহ) এ্যাসাইনমেন্টের সমাধান। তাহলে শুরু করা যাক।
১। সমাজের ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হযরত উমর (রা:) এর খিলাফাত থেকে কি কি শিক্ষা লাভ করতে পারি -তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: পৃথিবীতে এমন অনেক মহৎ ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে যাদের জীবন চরিত্র অন্যের জন্য আদর্শ। এমন এক জীবন আদর্শ হলো হযরত উমর (রা:) । তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। ৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ বংশের আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ফারুক অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য কারী হিসেবে ভূষিত হন।আমাদের ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হযরত উমর (রাঃ) কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। হযরত উমর (রা:) এর খিলাফাত থেকে আমরা অনেক শিক্ষা লাভ করতে পারি। যেমন:
১. হযরত মুহাম্মদ (স:) এর আদর্শ: হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আদর্শকে অনুসরণ করতেন। বিচারের মঞ্চে সকলেই সমান, যদিও সে অন্য ধর্মের হোক না কেন।
২. ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা: হযরত উমর (রাঃ) ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ছিলেন খুবই কঠোর।তিনি নিজ পুত্রকে শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন আইনের চোখে সকলেই সমান।
৩. কোমলমতি হৃদয়: হযরত উমর (রাঃ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠান যেমন কঠোর ছিলেন অন্যদিকে তার হৃদয় ছিল কোমল। প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য তিনি রাতের আঁধারে একাকী হাঁটতে।
৪. কর্তব্যপরায়ণতা: হযরত উমর (রাঃ) ছিলেন একজন কর্তব্য পরায়ন শাসক।তিনি নিজ কাঁধে খাদ্য সামগ্রী বহন করে প্রজাদের মাঝে পৌঁছে দিতেন।
৫. নির্মাতা: হযরত উমর (রাঃ) শুধু একজন শাসক ছিলেন না বরং তিনি একজন নির্মাতাও ছিলেন। তিনি অসংখ্য মসজিদ, বিদ্যালয়, সড়ক, সেতু, হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন।
৬. সাম্যবাদ: হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফতে তিনি বায়তুলমাল থেকে তার জন্য যতটুকু কাপড় বরাদ্দ ছিল ঠিক ততটুকুই নিতেন। ভৃত্যকে উটের পিঠে রেখে নিজেই উটের রশি ধরে জেরুজালেম যাওয়ার মাধ্যমে তিনি সাম্যবাদের দৃষ্টতা স্থাপন করেন। এককথায় হযরত উমর (রাঃ) সরলতা ও কর্তব্য জ্ঞান ছিল তার জীবন আদর্শ। তার খিলাফত থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
২। প্রজাহিতৈষী হিসেবে একজন শাসকের মূর্ত প্রতীক ছিলেন খলিফা উমর (রাঃ) ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাঃ) একদিকে যেমন ছিলেন কঠোর অন্যদিকে ছেলে কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আদর্শ আদর্শিত এক মহাপুরুষ। প্রজাহিতৈষী হিসেবে তিনি ছিলেন একজন মূর্ত প্রতীক। অর্ধ পৃথিবী শাসন করা দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাঃ) খুবই সহজ সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। খেজুর পাতায় ছিল তাঁর আসন ও তার কোন দেহরক্ষী ছিল না। জাগতিক লোভ-লালসা জাঁকজমকের তিনি কখনোই আসক্ত হতেন না। তারমধ্যে কঠোরতা ও কোমলতার উভয়ের সমন্বয় ঘটে ছিল। শাসক হয়েও তিনি রাতের আধারে প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য বের হতেন।খাদ্য সামগ্রী নিজ কাঁধে বহন করে তার প্রজাদের মাঝে পৌঁছে দিতেন। তার শাসনামলে রাজ্যে কোন অভাব ছিল না। বাইতুলমাল থেকে প্রাপ্ত কাপড়ের সেই পরিমাণ গ্রহণ করতেন যে পরিমাণ সকলের জন্য নির্ধারিত ছিল। কৃষি কাজে ব্যাপক উন্নতি সাধনের জন্য নিজ উদ্যোগে খাল খনন করেন। বিচারক হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর আর এর প্রকাশ ঘটে যখন মদ্যপানের অপরাধে তিনি নিজ পুত্রকে তিনি শাস্তি দিয়েছিলেন। জনকল্যাণে তিনি অসংখ্য মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এবং সেইসাথে সেতু, সড়ক হাসপাতাল নির্মাণ করার মাধ্যমে তিনি প্রজাদের অসুবিধা দূর করেছিলেন। এত বড় শাসক হয়েও তিনি কখনো অংকার করতেন না যার প্রমাণ ঘটে জেরুজালেমে যাওয়ার পথে যখন ভৃত্যকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে উঠে রশি ধরে টেনে ছিলেন।
কোন সমস্যা হলে কমেন্ট করুন এবং পরবর্তী এ্যাসাইনমেন্টগুলো পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আগের পোস্টটি পড়তে ক্লিক করুন।