আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
প্রত্যেক মায়ের জীবনে গর্ভকালীন সময়টি অন্যান্য সকল সময়ের তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় চলাফেরা ও জীবনধারণের অনেক পরিবর্তন তাদের আনতে হয়। এক্ষেত্রে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গর্ভবতী মায়ের জন্য।
ক্ষুদা নিবারণের তাগিদে আমরা প্রত্যেক খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে সব ধরনের খাবার নিয়ম না মেনে খাওয়ায় ফোন হিতে বরং বিপরীত হতে পারে। আর তাই যদি আপনি গর্ভবতী মহিলাদের খাবার কি কি খাওয়া উচিত সে ব্যাপারে অবগত না থাকেন, আজকের আর্টিকেলটা একটু মনোযোগ ও ধৈর্য সহ পড়বেন।
১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
প্রথম মাসের ক্ষেত্রে খাবারের তালিকা স্বাভাবিক রাখা যেতে পারে। লক্ষণীয় যে, ওজন বাড়তে থাকলে সে অনুযায়ী শারীরিক ব্যায়াম ঠিক রেখে খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে ওজন কমতে থাকলে সে অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই পর্যায়ে ১ মাসের গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাবারের কিছু লিস্ট দিচ্ছি নিচে।
১। শাক সবজি
২। ডিম (পুরোপুরি সিদ্ধ/রান্না হতে হবে)
৩। মাছ বা মাংস
৪। তাজা ফল
৫। দুগ্ধজাত খাবার (যেমন: দুধ, টকদই ইত্যাদি)
স্বাভাবিক তালিকায় এসব খাবার রাখা যেতে পারে। তবে একটি বিষয় সকল মাসের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে খাবার রান্না করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মসলা, তেল ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। এতে স্বাস্থের ক্রমোন্নতি ঘটে।
২-৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
২-৩ মাসের গর্ভবতী মায়েদের অস্বস্তিকর ভাব লাগতে পারে। এক্ষেত্রে বমি ভাব যেকোনো কাজে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আর তাই খাবারের তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে ২ বা ৩ মাসের গর্ভবতী মহিলাদের খাবারের তালিকায় খুব বেশি পরিবর্তন নেই, তাই তালিকা অনুযায়ী সবাই খাবারের যথোপযোগী ধারণা নিতে পারেন।
১। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য (যেমন: মাছ, ডিম ,মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের উৎস)
২। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য (যেমন ডাল, সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি, দুধ ইত্যাদি)
৩। ফাইবার (যেমন: কমলা, আপেল, গাজর ইত্যাদি)
৪। তাজা ফলমূল
৪-৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
১-৩ মাস সময় যাওয়ার পর ৪ মাসের প্রারম্ভিক পর্যায়ে থেকে খাবারের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনা কিছুটা বাড়াতে হয়। এক্ষেত্রে কিছু বিশেষ খাবার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে হবে। একইসাথে অবশ্যই সতর্কতা মেনে চলতে হবে। চলুন ৪-৬ মাসের গর্ভবতী মহিলাদের খাবারের তালিকায় কি কি যুক্ত করা যেতে পারে সেটা দেখে নেওয়া যাক।
১। প্রোটিন যুক্ত খাবার
২। উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ( যেমন: পূর্ণশস্য বা হোল গ্রেইন খাবার, বাদাম খোসা ও ফল, শাক-সবজি)
৩। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
৪। তাজা ফলমূল
৪-৬ মাসে খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি তুলনামূলক বৃদ্ধি পেতে পারে, এক্ষেত্রে খাবারের তালিকায় বাড়তি প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
৭-৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
৭-৯ মাসের সময়টি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়কাল। এ সময়ে যেকোনো কাজ করার পূর্বে অবশ্যই সতকর্তা অবলম্বন করা অতীব জরুরি। তবে খাবারের তালিকায় খুব বেশি পরিবর্তন নেই এক্ষেত্রে। চলুন দেখা যাক অন্তিম পর্যায়ের এই কয়েক মাসে খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত সেটি।
১। প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ
২। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ
৩। ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ
৪। আয়রন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ
৫। তাজা ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ
৭-৯ মাসের এই পর্যায়ে এই খাবার গুলো নিয়মিত খাবারের তালিকায় অবশ্যই রাখা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থার ১-৯ মাসের খাদ্য তালিকা কিরূপ হওয়া উচিত এ বিষয়ে আপনাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিয়েছি। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে।
১। প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। (৪ মাস পর থেকে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে)
২। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।
৩। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৪। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
৫। তাজা শাক সবজি ও ফলমূল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬। আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে।
৭। ডিম পুরোপুরি সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে এবং রান্নার ক্ষেত্রে ভালোমত রান্না করে খাওয়াতে হবে।
৮। নিয়মিত রান্নার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মসলা বা তেল পরিহার করতে হবে।
৯। ৭-৯ মাসের সময়কালীন বাদাম ও টক দই নিয়মিত তালিকায় রাখা যেতে পারে।
১০। দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার নিয়মিত তালিকায় রাখা গরুরি।
এই পর্যায়ে জেনে রাখা জরুরি গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের কোন কোন খাবার এড়িয়ে যেতে হবে সে ব্যাপারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত নয় ?
১. চা/কফি – চা বা কফি গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম।
২. কোমল পানীয় – বাজারে বিভিন্ন রকমের কোমল পানীয় পাওয়া যায়। তবে গর্ভকালীন মহিলাদের অবশ্যই এসব কোমল পানিও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. তেলে ভাজা খাবার – অতিরিক্ত তেল স্বাস্থের ক্ষতি করে। আর তাই রান্নার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেলের ব্যাবহার বর্জন করতে হবে। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যবহার করতে হবে।
৪. কেক/চিপস/চকলেট / আইস্ক্রিম – অনেকে বাইরের চকলেট বা আইস্ক্রিম জাতীয় খাদ্য খেতে পছন্দ করে। তবে এই সময়ে এসব খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
৫. চিজ/পুডিং – গর্ভাবস্থায় মহিলাদের চিজ, পনির বা পুডিং ইত্যাদি খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৬. মাখন – শুধু মাখন কিংবা মাখন জাতীয় যেকোনো খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
শেষ কথা
আজকে আপনার গর্ভকালীন খাবারের তালিকা সম্পর্কে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছি। যদি আপনি আপনার নিয়মিত খাবারের তালিকায় এসব খাবার রাখতে পারেন, এবং সতর্কতা মেনে চলতে পারেন তবে আপনার স্বাস্থ্যের ক্রমশ উন্নতি ঘটবে। একইসাথে আর্টিকেলের শেষ পর্যায়ে যেসব খাবার গ্রহণ না করার কথা উল্লেখিত হয়েছে সেসব খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হয়।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
Ok
Valo
Valo
Posti pore onek kicu janlam
Informative
Informative post