সুপ্তি রানী,
বর্ষায় সদ্যপুষ্পিত কদম ফুলের শুভেচ্ছা দিলাম। জানি লকডাউনে খুব চাপে আছিস,তবুও জীবন তো চলবেই তার আপন গতিতে!
তুই হয়তো বলবি, আমি এখনো সেই ২০২১ সালেই পড়ে আছি। না হলে ২০২১সালে কি কেউ চিঠি লেখে নাকি! ব্যাকডেটেড একটা। কিন্তু কি করব বল, সবটা যদি মুখেই বলে দিই মনেও তো কিছু রাখা চাই,তাইনা!?
তবে কেন আর এখন পত্রচয়ন!
আমার ঠিক পাশের বাড়ির ব্যাংকার দাদার করোনা পজেটিভ। তো কার কি হয়, বলা তো যায় না, কিছুদিন পর তোর সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে যদি আর বেঁচে নাই থাকি! তুই জানতে চেয়েছিস, আমি এত ভালো বাংলা কিভাবে লিখি? শুনেছিলাম, লাইলী নাকি অতটাও সুন্দরী ছিলেন না অথচ তার বাড়ির কুকুরটাকেও মজনু কোলো তুলে চুম্বন করত। আসলে ভালোবাসার মানুষদের সবটাই সুন্দর মনে হয়। তুই আমাকে যে অকৃত্রিম স্নেহ করিস তার প্রমাণ এই প্রশ্নেই পেলাম।
তুই বলেছিস, স্বপ্ন, তোর তো সময় ছিল, প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস টা দিতে পারতি। সাফল্য যে ঠিক কি তা চিরকাল মানুষদের অজানাই থাকে।আমি যদিবা বিসিএস ক্যাডার হতাম তো আমার পদমর্যাদার পরিবর্তন হত, ব্যক্তি স্বপ্না তো সেই একই থাকত। আমার মতে পদবী কে ছাপিয়ে ব্যক্তিত্ব, পদ আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির শিক্ষা, সংস্কার, চেতনা,আচরণ এগুলো সহসা পরিবর্তিত হয় না। তাছাড়া, চাওয়া পাওয়ার হিসেব থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা আমার দীর্ঘদিনের।
তোর মনে হয়েছে যে আমি অপাত্রে দান করেছি। দান তো সম্প্রদান কারক, স্বার্থহীন। সেটা পাত্র অপাত্র বিভেদ করা কি ঠিক? আমি দান করতে চেয়েছি কিন্তু সে কোন পাত্রই রাখেনি দান গ্রহণ করবার। তাই তো আমার দুয়ার বন্ধ করতে হয়েছে। ভগ্নাংশে আমার রুচি নেই, সান্ত্বনা এই যে কিছু জোর করে ভেঙে না রেখে আস্তটাই হারিয়েছি। আমার যা কিছু প্রাপ্য তা আমি নিশ্চয়ই পেয়েছি। পরের সম্পদে ভাগ বসানোর মত ভিখারী যেন কোনদিন না হই সেই আশির্বাদ করিস।
তুই প্রশ্ন করেছিস, আমি কি নতুন করে কারো প্রেমে পরেছি? বড়ই হাসি পেল শুনে। আমরা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছুর প্রেমে পরতেই থাকি। মন ছাড়া মানুষ হয়না তেমনি প্রেম ছাড়া জীবন বাঁচে না।আমি যে প্রেমে পরেছি তা কারো রূপের নয় আবার গুণেরও নয়। তা জীব নয় আবার জড়ও নয়। গাছ, ফল, ফুল,মধু বা ভ্রমর এসবের কোনটাই নয়। আমি তো কেবল অজানা কোন এক সুবাসে মোহিত হয়েছি। সে তো নিরঞ্জন! লোকচক্ষুর অাড়ালে তার অবস্থান, বাইরের কোন ছায়া একে স্পর্শ করে না। একে স্বীকার করার উপায় নেই আবার অস্বীকার করলে নিজের অস্তিত্ব থাকে না। কি যে এক অদ্ভুত অনুভব, তোকে ঠিক বোঝাতে পারব না, ক্ষমা করিস।
প্রীয় বন্ধু,
আমার মত নগণ্যকে নিয়ে যে তুই এতটা ভেবেছিল, এর দাম দেবার যোগ্যতা আমার নেই। ঈশ্বর তোর মহানুভবতার উত্তম প্রতিদান নিশ্চয়ই দেবেন। ভালো থাকিস, সবাইকে যেনো ভালো রাখতে পারিস।
তোর স্নেহধন্য
S