আমাদের সবার জীবনেই ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা দুইটি অপরিহার্য বিষয়। যদিও শব্দ দুটিকে আমরা অধিকাংশ মানুষই একই বিষয় মনে করি,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা এক বিষয় নয়।এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।
প্রথমে আসি,অনিশ্চয়তা কী?
অনিশ্চয়তা হলো – কোনো বিষয়ে প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত যেকোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা। যেকোনো বিষয়ে যদি কোনো নিশ্চিত কোনো ফলাফল না থাকে,অর্থাৎ যার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না, তাকেই অনিশ্চয়তা বলে।প্রত্যেক মানুষের জীবনেই অনিশ্চয়তা বিদ্যমান।ব্যক্তি ভেদে,স্থান ভেদে,সময় বা কাল ভেদে অনিশ্চয়তার পরিমাণ বেশি বা কম হতে পারে।কিন্তু অনিশ্চয়তা নেই,এমন কোনো ব্যক্তির জীবনী হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।কাজেই অনিশ্চয়তা মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। অনিশ্চয়তার কিছু উদাহরণ দিলে এই বিষয়টি আরও সহজ ও সুন্দর ভাবে বোঝা যায়।
উদাহরণ স্বরূপঃ যেকোনো মানুষই যেকোনো সময়ে অসুস্থ হতে পারে,আবার সেই মানুষটি মারাও যেতে পারে।আবার এমনও হতে পারে যে, সেই মানুষটির বড় কোনো অর্থিক বা শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।আবার এগুলোর কোনোটিই নাও হতে পারে।এই হতে পারার সম্ভাবনাই হলো অনিশ্চয়তা।
অনিশ্চয়তার পরে এখন আসি,ঝুঁকি কী?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে কোনো ধরনের খারাপ কোনো ঘটনা ঘটার আসঙ্কা,যা অর্থের অংকে পরিমাপ যোগ্য তা-ই ঝুঁকি। অর্থাৎ, অনিশ্চিত কোনো ঘটনা ঘটলে,তার ফলে আর্থিক ক্ষতি কতো হবে,তা যদি জানা যায় তবে সেই অনিশ্চয়তাই ঝুঁকি। ঝুঁকির ক্ষেত্রে তা অর্থের অংকে পরিমাপ করে নির্ণয় করা যায়।অর্থাৎ,ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যায়।
ঝুঁকির উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,
কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সকল পন্য সামগ্রিই বিক্রি হতে পারে,আবার না-ও হতে পারে।ধরা যাক, ১ মাসের মধ্যে তাদের উৎপাদিত সকল পণ্য বিক্রি করতে হবে।এখন যদি তারা তা করতে ব্যার্থ হয় তবে যে অর্থিক ক্ষতি হওয়ার যে সম্ভাবনা থেকে যায়,তা-ই ঝুঁকি।
ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কিছুটা একই।কিন্তু এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো পরিমাপযোগ্যতা ও হ্রাস করার উপায়ে।
সকল ঝুঁকিকেই অনিশ্চয়তা বলা যায়, কিন্তু সকল অনিশ্চয়তা ঝুঁকি নয়।কোনো অনিশ্চয়তা কে তখনই ঝুঁকি বলা চলে,যখন তাকে অর্থের অংকে পরিমাপ করা যাবে।
অনিশ্চয়তা মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিদ্যমান।কিন্তু যখনই কোনো অনিশ্চয়তা দ্বারা আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যবে বা অর্থের অংকে পরিমাপ করা যাবে,তখনই কেবল তাকে ঝুঁকি বলা যাবে।তাই বলা যায়,ঝুঁকি মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান না হলেও মানুষের জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই,যেখানে অনিশ্চয়তা নেই।
আবার,অনিশ্চয়তা যেহেতু পরিমাপ করা সম্ভব না,তাই এর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণও হ্রাস করা সম্ভব না।অন্যদিকে,ঝুঁকির ফলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি পরিমাপ করা যায় বিধায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এর ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা যায়।
উদাহরণ স্বরূপ, জনাব আশিক তার নিজের গাড়িতে ভ্রমন করার সময়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হন।এখন এর ফলে তার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা হলো অনিশ্চয়তা।কারন মানুষের জীবনের মূল্য র্আথের অংকে নির্ধারন করা যায় না।তা অতি মূল্যবান সম্পদ। এতে তার গাড়ির যে ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে,তা অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য হওয়ায় তাকে ঝুঁকি বলে।
উপরোক্ত উদাহরণের মাধ্যমে আমরা সহজেই ঝুঁকি কী এবং অনিশ্চয়তা কী তা জানতে পারি এবং
- ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার পার্থক্য সঠিক ভাবে বুঝতে পারি।