যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকা ওতোটা সহজ নয় যতটা ভাবা যায়।বর্তমান বিশ্বে কোনো জটিল সমস্যাকে মোকাবিলা করতে হলে সমস্যার কারণ,সমাধানের উপায় ও পরিশেষে সমাধান করা বা করার চেষ্টা করা এবং একইসাথে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নিয়ম মেনে চলতে হয়।সেই নিয়ম মেনে চলতে হলে যে দক্ষতাটি থাকা লাগবে তা নিয়েই আমি আজ কথা বলব।
দক্ষতাটির নাম হলো “রিসোর্সফুলনেস”। এ শব্দটি যারা প্রথমবারের মতো শুনছেন তাদের খাতিরে বলে রাখতে চাই যে, রিসোর্সফুলনেস হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনি যেসকল বাধা বা ঝামেলার সম্মুখীন হবেন আপনার আশেপাশের সুযোগ-সুবিধার বেশিরভাগ সঠিকভাবে ব্যবহার করে যেভাবে আপনি ওইসব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে এ দক্ষতা না থাকা আর অন্ধকার গুহায় বাস করা একই কথা।
রিসোর্সফুলনেস এর সংঙ্গা পড়ে অনেকেই ভাবতে পারেন এটা তো আহামরি কিছু না,কমন সেন্স এর ব্যাপার মাত্র।সত্যি কথা বলতে বাস্তব জীবনে এই কমনসেন্সটির সঠিক ব্যবহার করতেই অনেকে ভুল করে এবং পিছিয়ে পরে। এখন আসা যাক,কীভাবে আপনি নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ থেকে রিসোর্সফুল মানুষে রূপান্তর করতে পারেন সেই ট্রিকসগুলোয়-
১.বুঝার চেষ্টা করুন আসল সমস্যাগুলো কি কি ও নির্দিষ্ট করে বের করুন সমস্যার কারণগুলো
কোনো একটি লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে এটায়ই স্বাভাবিক।কিন্তু এ স্বাভাবিক জিনিসটাই অস্বাভাবিক হয়ে যায় যখন সমাধান খুজে পাওয়া যায় না।এক্ষেত্রে করণীয় হলো, খুবই নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করুন আপনার বাধাগুলো এবং এর পেছনের কারণটি।প্রয়োজনে একটি চার্ট তৈরি করে ফেলুন আপনার গন্তব্যস্থলে সমস্যা বা বাধাগুলো আসলে কি কি এবং কেন তা আপনার জন্য বাধা হয়ে কাজ করছে।
২.সমাধান করার উপায় করুন বের
সমস্যাগুলোতো চিহ্নিত করা হলো,এখন আসা যাক এ সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করবেন তা নিয়ে।সমস্যাগুলো সমাধান করতে আপনার যে উপকরণগুলো লাগবে সেগুলোর একটি লিস্ট করে নিন এবং আপনার আশেপাশের যেসকল সুযোগসুবিধা ও জিনিসপত্র আছে সেগুলোকে ব্যবহার করে উপকরণগুলো জড়ো করুন।প্রত্যেকটা উপকরণ পাওয়ার পর লিস্ট থেকে সে নাম কেটে দিন,যেন আপনি বুঝতে পারেন কি কি আপনার আছে ও আরও কি কি জানা লাগবে।
৩.হার মানবেন না
আমরা অনেক সময়ই সমস্যা দেখে ঘাবড়ে যায় এবং সমাধান করার চেষ্টা করার আগেই লেজ গুটিয়ে পালায়।এমনটি একদমই করা যাবে না।নিজের আশেপাশের উৎসকে কাজে লাগান এবং শেষ মুহুর্তটা পর্যন্ত নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করুন।এতে করে আপনার লক্ষ্য অর্জনের চান্স বেড়ে যাবে।”যদি কোনো কারণে বাইচান্স লক্ষ্যে পৌঁছাতে না ও পারেন তবুও অন্তত আক্ষেপ থাকবে না।কারণ আপনিতো আপনার দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন”-যাইহোক এটা এমনি বললাম,তবে সফল হওয়ার সম্ভাবনয়ই বেশি।কারণ-
“Our greatest weakness lies in giving up.The most certain way to succeed in life is always try just one more time.” (Thomas Alva Edison)
৪.হন আত্মবিশ্বাসী,জেদি ও অনুকূল চিন্তাকারী
রিসোর্সফুল মানুষ হতে হলে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ও অনুকূল চিন্তাভাবনাকারী মানুষ হওয়ার সাথে সাথে একজন জেদি মানুষও কিন্তু হতে হবে।আপনাকে মাথায় রাখতে হবে অন্যরা পারলে আমিও পারব এবং আমার পক্ষে সম্ভব।এর সাথে শিখনশীল মনোভাবও রাখতে হবে।কেননা,প্রত্যেক কদমে প্রতিটা ভুলের সাথে আপনি নতুন কিছু না কিছু শিখছেন।এক্ষেত্রে নিচের বাম পাশের কথাগুলো এড়িয়ে চলুন ও তার বদলে ডান পাশের কথাগুলো নিজেকে বলুন-
১)অসম্ভব /কাজটা একটু কঠিন
২)আমাকে দিয়ে হবে না/আমার সময় লাগবে
৩)আমি পারব না/আমার সাহায্য লাগবে।
৫.হন বাস্তববাদী ও শর্টকার্ট থেকে থাকুন দূরে
কোনো কিছু অর্জন করতে হলে, আপনাকে চেষ্টা করার পাশাপাশি বাস্তববাদী ও হতে হবে।চেষ্টা দ্বারা অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়,ঠিক।কিন্তু এ সম্ভবটা আপনার ক্ষেত্রে কতটা বাস্তব তা পর্যালোচনা করুন।
এটা সত্যি যে বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল কারণে আমাদের ব্রেন সর্বদা কম কষ্টে বেশি জিনিস পেতে চাই অর্থাৎ সহজ কথায় শর্টকার্ট পথ খুজে বেড়ায়।কিন্তু শর্টকার্ট পন্থা সাময়িকভাবে আপনাকে শান্তি এনে দিতে পারলেও কখনো তা দীর্ঘস্থায়ী সফলতা এনে দিতে পারবে না।এক্ষেত্রে একটা প্রবাদবাক্য মনে রাখতে পারেন-
“There is no substitle to hardwork and there is no shortcut to succeed.”
আশা করি এ পাঁচটি পন্থা আপনার কাজে দেবে।যদি এ পুরো আর্টিকেল এর অন্তত একটা লাইন কারো জীবনে নতুন কিছু শেখার আলো জ্বালাতে সক্ষম হয় তবে ঐটাই হবে আমার বড় পাওয়া।
পড়ে ভালো লেগে থাকলে আমার জন্য অবশ্যই কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।