প্রেজেন্টশন শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের জীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে, চাকরিক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশনের গুরুত্ব অনেক। একজন দক্ষ প্রেজেন্টার সবকিছুতে এগিয়ে থাকে। এবং বর্তমানে একজন দক্ষ প্রেজেন্টারের অনেক চাহিদা। একটা সুন্দর ও সাবলীল প্রেজেন্টশন সবাই পছন্দ করে। এমনকি প্রেজেন্টশনের সময় সঠিক উচ্চারণ, বডি ল্যাংগুয়েজ এগুলা দর্শক লক্ষ্য করে। অনেকের প্রেজেন্টেশন ভালে হয়, অনেকের খারাপ হয়। এখন আমি কথা বলব একজন প্রেজেন্টরের কি কি করণীয় প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করার জন্য:
১. কিছু প্রাসঙ্গিক উপকরণ সংগ্রহ: এই উপকরণ গুলো থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা। দুই ধরনের উপকরণ সংগ্রহ করতে পারি; প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারী। প্রাথমিকে যা যা থাকে তা হলো ইন্টারভিউ, জিমেইল প্রশ্ন, এক্সপিরিমেন্ট, অবজারভেশন ইত্যাদি। এবং সেকেন্ডারীতে আছে ম্যাগাজিন, বই, নিউজপেপার, জার্নাল ইত্যাদি। এসব জায়গা থেকে অনেক তথ্য কালেক্ট করে একটা নোট রাখতে হবে। এটা আমাদের সাহায্য করবে আমারে জ্ঞান বৃদ্ধিতে।
২. উপকরণ সাজানো: আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করব এগুলা দুইভাগে বিভক্ত করব; শাখা এবং উপশাখা। মেইন আইডিয়া গুলোর সাথে তার সহযোগী আইডিয়া গুলোও দরকার হয়। আবার আমরা এই সহযোগী অর্থাৎ উপশাখা গুলো একটু বিশ্লেষণ, সারমর্ম করে একটা নতুন তথ্য বের করতে পারি যেটা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। আর এটা বের করলে আমাদের কনফিডেন্স লেভেল আরও বাড়বে।
৩. উপকরণ গুলার গুরুত্বপূর্ণ টপিক বের করা: একজন দক্ষ প্রেজেন্টার চারটি জিনিসের প্রতি নজর রাখে, উদাহরণ, গল্প, ক্ষুদ্র কাহিনি এবং ব্যাখা। এগুলো একটি প্রেজেন্টেশন কে সুন্দর করে তুলে সবার কাছে। আমাদের যে টপিক এর ওপর প্রেজেন্টেশন করতে দিবে সবসময় যে ওই টপিকের গল্প, উদাহরণ থাকবে এমন না। কিন্তু যদি থাকে তাহলে সেটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা উচিত। এতে দর্শকের শোনার আগ্রহ বাড়বে। আবার আপনি যদি স্ক্রিনে কোনো ছবি বা ভিডিও দেখান এতেও দর্শকের আগ্রহ বাড়বে।
৪. দর্শকদের সম্পর্কে জানা: দর্শকদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। এতে সবাই মনে করবে আপনি অনেক কনফিডেন্স নিজের ওপর। আপনি যাদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিব, সেখানে নানা বয়সের লোক থাকবে। সেখানে একেকজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা একেক রকম থাকবে। সবার মতামত ও ভিন্ন থাকবে। তাই একটা প্রেজেন্টেশন এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন সকল দর্শকের শুনে ভালো লাগে। সবাই একমত হয়। উদাহরণ দিয়ে সুন্দরকরে গুছিয়ে বলতে হবে। কোনো দর্শক যদি প্রশ্ন করে বা আপনার মতামতের সাথে অমিল প্রকাশ করে তাহলে ঘাবড়ানো যাবে না। বরং মাথা ঠান্ডা করে উত্তর দিতে হবে। এতে দর্শক বুঝবে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান আছে এই টপিকের ওপরে।
৫. ভেন্যু থেকে তথ্য নেয়া: আপনাদের যে জায়গায় প্রেজেন্টেশন করতে বলবে সে জায়গাটা একটু ভালো করে দেখে নিবেন। জায়গাটা দেখতে কেমন, বসার ব্যবস্থা কেমন ইত্যাদি। অনেক সময় একটা সুন্দর ভেন্যু আমাদের কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়। আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারি আমরা।
৬. সময়ের প্রতি নজর রাখা: অতিরিক্ত কথা বললে অনেক সময় দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কথা শোনার। তাই সময়ের প্রতি নজর রাখতে হবে। বাড়তি কথা বলে সময় নষ্ট করা যাবে না। দরকার হলে আপনি আপনার প্রেজেন্টেশনের সময় নোট কার্ডে সময় লিখে রাখতে পারেন।
৭. তৈরী হওয়া: প্রেজেন্টেশনের আগে আপনাকে মানসিক ভাবে তৈরী হতে হবে। তৈরী না হয়েই প্রেজেন্ট করতে গেলে অনেক ভুল হবে। তাই প্র্যাকটিস করে নিতে হবে নিজেকে। প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে। এতে উপস্থাপন আরও সুন্দর হবে। আমরা সবাই জানি: “Practice makes a man perfect. “
৮. সর্বশেষ প্রেজেন্টশন দেয়া: এখন আপনি আপনার সেরাটা দিয়ে প্রেজেন্টশন দিবেন সবার সামনে। আপনার কথা বলার স্বচ্ছতা, এক্সপ্রেশন, সময়ের প্রতি নজর রাখা ইত্যাদি লক্ষ্য করে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করবেন।
অবশেষে বলতে পারি, উপরের ধাপগুলো মেনে চললে আস্তে আস্তে আপনিও একজন ভালো প্রেজেন্টার হতে পারবেন।
” Preparation is the best bet for success. And to do your best tomorrow, do your best today.”