আসসালামুআলাইকুম, কি অবস্থা সবার? আশা রাখছি সবাই বেশ ভালই রয়েছেন। চলে আসলাম আবারও নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে। গত একটি আর্টিকেলে আমরা গুগলের হোল্ডিং কোম্পানি অর্থাৎ Alphabet Inc এবং মাইক্রোসফট এর ব্যাপারে জেনেছিলাম। আজকের এই আর্টিকেলটার মাধ্যমে আমরা, যত ধরনের অন্যতম কোম্পানি রয়েছে সেসবের মধ্যে একটি অর্থাৎ আমাজন (Amazon) কোম্পানির ব্যাপারে বিস্তারিত জানবো।
ইন্টারনেটে যদি আপনি রিসার্চ করে থাকেন তবে আপনি নিশ্চই আমাজন কোম্পানির নাম শুনে থাকবে। ইন্টারনেটের বাহিরেও অনেকেই রয়েছে যারা আমাজন নামের সাথে সুপরিচিত। Amazon এর মালিক জেফ বেজস যিনি শূন্য থেকে আজ এত বড় একটি কোম্পানির মালিক এবং বিশ্বের সেরা ১০ জন ধনী ব্যক্তির মধ্যে একজন। চলুন Amazon এর ব্যাপারে একটু গভীরে গিয়ে জানা যাক। আমাজন (Amazon) হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান। এটি একটি মাল্টি ন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু ইকমার্স ব্যবসাতে প্রতিষ্টিত এমনটা নয়, কোম্পানিটির আন্ডারে আরো রয়েছে IMDb, ring, Zappos, Zoox, Shopbop, Twitch এর মত বড় বড় সব কোম্পানি।
আমাজন, পোশাক সামগ্রী, মেডিসিন সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্যসহ সর্বমোট ১৬০০০ এর বেশি পণ্য নিয়ে তাদের বিজনেস পরিচালনা করছে। এক কথায় বলা যেতে পারে, কেনার মতো সব ধরনের ছোট বড় পণ্য আমাজন এর মধ্যে রয়েছে।
আমাজন কোম্পানির যাত্রা:
আমাজন কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করেছিল আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর পূর্বে, ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তারিখে। আমাজন তাদের শুরুটা করেছিল অনলাইন ভিত্তিক বই বা লাইব্রেরির দোকান হিসেবে।যদিও সে সময়টা ইকমার্স এর প্রচলন খুব একটা ছিলনা। তবে তাদের এই উদ্বেগ গ্রহণের খুব কম সময়ের মধ্যেই তারা সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে। আমাজন থেকে বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা সহজে বই ক্রয় করতে পারতো।
আমাজন এর প্রতিষ্টাতা হচ্ছেন জেফ বেজস। চলুন কিভাবে তিনি শূন্য থেকে আজকের আমাজন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হয়েছে সে ব্যাপারে জেনে নেই। জেফ বেজস এর জন্ম হয় একটি সাধারণ পরিবারে। তার জন্মের সময়টাতে তার মা ছিলেন কেবল ১৭ বছরের একজন কলেজ ছাত্রী। জেফ এর জন্মের ঠিক ১৭ মাস পর তার বাবা এবং মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়।
পরবর্তীতে তার মা একজন ইঞ্জিনিয়ারকে বিবাহ করেন এবং জেফ সেই সৎ বাবার কাছে বড় হতে থাকেন। জেফ বেজস সবসময় চিন্তা করতেন, ভিন্ন কিছু করাটা তার স্বপ্ন ছিল। ছোট থেকেই তার বিভিন্ন প্রতিভা সবার মাঝে তিনি উপস্থাপন করতে থাকেন। কলেজ জীবনে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন Mc Donald’s এ বার্গার তৈরির।
২০০১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন জীবনে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা কখনো বৃথা যায় না। Mc Donald’s এ বার্গার তৈরির কাজ করাকালীন তিনি শিখেছিলেন ব্যবসায়ের বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনার সম্পর্কে। এছাড়াও তিনি শিখেন উন্নত বিজনেস পরিচালনার ধাপ, গ্রাহক সেবা, কিভাবে ব্যবসার কঠিন পরিস্থিতিতে চাপের মধ্যে থেকেও সব ঠিক করা যায় এসব বিষয়গুলো নিয়ে।
তিনি বলেন এসব বাস্তব পরিস্থিতি থেকে তিনি যে যে বিষয়গুলো শিখেন সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানিক না গতানুগতিক শিক্ষার চেয়েও অনেক বেশি। এসব শিক্ষা তার জীবনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে জেফ একটি কোম্পানিতে অর্থনীতি বিভাগে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার উদ্ভাবনী কার্যক্রমে জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যান।
সে সময়টাতে ইন্টারনেটের প্রচলন খুব একটা ছিলনা, কেবল প্রাতিষ্ঠানিক কাজেই বেশিরভাগ ব্যবহার যত ইন্টারনেটের। সে সময় জেফ বেজস গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন প্রতি বছর প্রায় ২৩০০ শতাংশ হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গবেষণার উপরে ভিত্তি করে তিনি বুঝতে পারেন যে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটা সময় প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে এবং এটি বিশ্বব্যাপী অনেক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আর এটাই সঠিক সময় নতুন কিছু বাস্তবায়ন করার।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি সে সময় নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তার চাকরি ছেরেছিলেন। বলা যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনেও তিনি এমনটা করেছিলেন। শুরুতে যদিও তার মা তাকে নিষেধ করেছিল চাকরি ছাড়তে কিন্তু জবাবে তিনি বলেন জীবনে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে পারবেন সেটা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন থেকে যায় তবে জীবনে একসময় পস্তাতে হবে।
১৯৯৪ সালেই জেফ তার বাড়ির গ্যারেজে তার তিনজন সহযোগী এবং সাথে তিনটি কম্পিউটার নিয়ে প্রথমবারের মত আমাজন যাত্রা শুরু করেছিলেন। আর এভাবেই আজকের সেরা ইকমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের যাত্রা শুরু করেছিল, শুরুতে কেবল বই বিক্রি করার মাধ্যমে তারা তাদের বিজনেস চালিয়ে যাচ্ছিল। জেফ বেজস এর তার কোম্পানির নাম আমাজন রাখার কারণ ছিল তিনি তার কোম্পানিকে আমাজন নদীর মতই জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন। এভাবে মূলত যাত্রা শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাপী সর্ববৃহৎ কোম্পানিটির।
আমাজন কোম্পানির প্রোডাক্টসমুহঃ
আমাজন ১৬ হাজারের বেশি ক্যাটাগরির পণ্য নিয়ে তাদের বিজনেস পরিচালনা করছে। যেগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে Delivery Services, Amazon Business, Amazon Video, Consumer electronics, Digital content আরো ইত্যাদি।
কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা কেমন?
আমাজনের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই ভালো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইকমার্স শপ হিসেবে সফলতার সাথে নিজেদের বিজনেস আজও টিকিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি।
আমাজনে কতজন employee কাজ করে ?
Statista এর তথ্য অনুযায়ী আমাজনের বর্তমান এম্প্লয় এর সংখ্যা হচ্ছে ৭৯৮, ০০০ জন।
আমাজন কত টাকা উপার্জন করে?
querysprout .com এর তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন $৬৩৮ মিলিয়নের বেশি আয় করে আমাজন। গড়ে প্রতি সেকেন্ডে কোম্পানিটির আয় $৭,৩০০ ডলার, প্রতি মিনিটে সেটি ৪৪৩,০০০ ডলার, প্রতি ঘন্টায় ২৬.৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে আমাজন। সপ্তাহের হিসেবে গড়ে আয় ৪.৪ বিলিয়ন ডলার ,যেটি মাসিক গড়ে দাড়ায় ১৭.৬ বিলিয়ন ডলারে। সে অনুযায়ী আমাজন গড়ে মাসিক আয় ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আজকে আমরা আমাজন কোম্পানির সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। কিভাবে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে কিভাবে জেফ বেজস শূন্য থেকে Amazon কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় ইত্যাদি ব্যাপারে জানলাম। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লাগবে, Amazon কোম্পানির ব্যাপারে আপনার কি মতামত জানাবেন অবশ্যই।
তথ্যসূত্রঃ kindlepreneur com, growbig, Wikipedia bn, statista, querysprout com