“গর্জে উঠুক বিবি আয়েশার তরবারি”
উমাইয়া গোত্রের উসমান শাসনকর্তা নিয়োগ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রদেশগুলোতে বিদ্রোহ শুরু হয়। সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল তিনি কুরআন পুড়িয়ে ফেলেছেন। ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তৃতীয় খলিফা উসমানের বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তাকে তার কক্ষে প্রবেশ করে হত্যা করা হয়।
এরপর দায়িত্ব নেন হাশেমী গোত্রের হযরত আলী। আয়েশা (রাঃ), তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ ও যুবাইর ইবনুল আওয়ামের নেতৃত্বে উসমান হত্যা বিচারের দাবী জোরদার হয়। আলীর আহবানে আয়েশা শান্তিচুক্তি করেন। এবং যুদ্ধ থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু দুষ্কৃতিকারী “ইবনে সাবাহ” এর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় কারণ উসমান হত্যার বিচার শুরু হলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই তারা বিবি আয়েশার শিবিরে আক্রমণ করে। ফলে তৃতীয়পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির জন্যে আয়েশা ও আলীর বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত আলীর আহবানে যুদ্ধ বন্ধ করে তালহা ও জুবায়ের ফিরে যেতে থাকেন। এই সময় তাদের উভয়কে হত্যা করা হলে বিবি আয়েশা (রাঃ) উষ্ট্রের পিঠে চড়ে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে বিবি আয়েশা হযরত আলীর বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। এবং নবীর স্ত্রী হওয়ায় তাকে সসম্মানে তার ভাই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের নিকট মদিনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এবার আসি মূল আলোচনায়, কোন ধর্মই আকাশ পড়ে না। বরং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সূত্র অনুসারে পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিস্থিতি থেকে ধর্মচিন্তার উদ্ভব হয়। তাই প্রত্যেকটি ধর্মের সামাজিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, ব্যক্তির অংশগ্রহণ রয়েছে। ইসলাম ধর্মও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।আমরা জানি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মের আগে থেকেই কুরাইশ বংশের উমাইয়া ও হাশেমী গোত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল। উসমান, আবু সুফিয়ান ও মুয়াবিয়ারা ছিলেন উমাইয়া গোত্রে এবং হযরত মোহাম্মাদ ও আলী ছিলেন হাশেমী গোত্রের। ফলে মুহাম্মদের মৃত্যুর পরপর গোত্রের দ্বন্দ্বগুলো আবারও ব্যাপক আকার ধারণ করতে শুরু করে। আয়েশা উমাইয়া গোত্রের না হলেও তিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে। এইদিকে হাশেমী গোত্রের লোকেরা প্রথম থেকেই আবু বকরের বিরোধীতা করেছিলেন। তারা আলীকে শাসনকার্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন। তাই কিছু ঐতিহাসিকের মতে আলীর বিরুদ্ধে বিবি আয়েশার কিছু ব্যক্তিগত বিদ্বেষও ছিল বলে জানা যায়।তবু গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের ইতিহাসে আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে সমর্থন করতে পারি না। সেইদিন উসমানকে যারা হত্যা করেছিল কিংবা ৬৬১ সালে আলীকে যারা হত্যা করেছিল…তার কোনটাই আমরা সমর্থন করি না।
বিবি আয়েশা (রাঃ) হযরত মোহাম্মদের স্ত্রী হয়েও যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে পারে, শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে…তাহলে বাঙালি মুসলিম নারীরা কেন ঘরে বন্ধি থাকবে? আয়েশা যদি তরবারি হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করতে পারে তাহলে আমাদের বাঙালি নারীরা কেন তরবারি হাতে শাসকের বিরুদ্ধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে না, ধর্ষক উৎপাদনকারী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না?