আজ আমার বিয়ের ৬ বছর পুর্ন হল। হ্যাঁ আপনারা যা ভাবছেন সেটাই ঠিক। বিয়ে করেছি আমি লুকোচোরি করে। লুকোচুরি টা আমাদের পরিবারের সাথে, আমাদের নিজেদের বাবা-মায়ের সাথে। হ্যাঁ কজটা খুবই অন্যাই করেছি আমি জানি।
কিন্তু ওই যে বলে বয়সের দোষ!! আবেগী মন, বাঁধ ভাঙ্গার বয়স। আমারো ছিল সেই বয়স। তাই ভালোবাসার লোভ, টান, আবেগ আর বয়সটাকে সামলাতে পারিনি। দুরন্ত , চঞ্চলা মন তখন যেন কারো কাছে ধরা দিতে চাইত। কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হতে চাইত। শাড়া দিতে চাইত উচ্ছল এ মন কারো ডাকে।
আমি তখন ষোড়শি। সবে মাধ্যমিক পার হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পা দিয়েছি। দেহ- মনে আবেগ খেলা করত। সুন্দরী ছিলাম। ছাত্রীও ছিলাম ভালোই। সবমিলিয়ে ছেলেদের মনে ধরার মত সব গুনই ছিল আমার মাঝে। অনেক ছেলের নজর ছিল আমার উপর। সেখান থেকেই মনে ধরল একজনকে। ব্যাস ওই আর কি হয়ে গেল মন বিনিময়। জড়িয়ে গেলাম প্রনয়ের সাথে।
বাবা- মা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ফোন দিয়েছিল তাই যোগাযোগের সুযোগ ভালই ছিল আমার।
ছেলেটা আমার চেয়ে বয়সে বড় ছিল। সে তখন অনার্সের ছাত্র ছিল। মন মানসিকতা খুবই ভালো। ব্যাবহার ছিল খুবই নম্র আর ভদ্র। সে সব সময় আমাকে ফোন দিত।আমি দিলে কেটে দিত আর বলত তোমার বাবা মায়ের টাকা খরচ করতে হবেনা। কারন সে তখন পড়াশুনার পাশাপাশি ব্যাবসা করত।
আমরা দেখা করতাম কোথায় জানলে হাসবেন আপনারা। হ্যাঁ বাসস্ট্যান্ডে। আমি যখন বাড়ি যেতাম মানে আমি হোস্টেলে থাকতাম, সে এসে টিকিট কেটে বাসে তুলে দিত এটুকুই মাত্র।
তার সব গুন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তার অনার্স শেষ হতে বাকি এখনো।
একদিন সে বলল চল বিয়ে করি। কথাটা শুনে কেমন থমকে গেছিলাম আমি। আমি রাজি হলামনা। সে খুব কস্ট পেল। পরের দিন আবার বলল আমাকে বিয়ের কথা। এমন ভাবে বলল আমি উপেক্ষা করেতে পারিনি। সে বলেছিল যতদিননা আমরা যোগ্য হব ততদিন আমাদের বাড়িতে কিছুই জানাবনা। তোমার সাথে ঘনিস্টও হবনা। বলেছিল যাকে অর্জন করা যাই তাকে হরানোর ভয় বেশী করে করতে হয়। আর সবচেয়ে বেশি ভাবতে হয় কিভাবে তাকে ধরে রাখা যাই, এত ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে যে হারানোর ভয় আমাকে অনেক বেশি পেয়ে বসেছে। তাই সেদিন তার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারিনি আমি।
করলাম বিয়ে তাকে লুকোচুরি করে। সেদিনই প্রথম আমার হাত ধরেছিল সে, আর বলেছিল আজ থেকে তোমাকে তোমার যোগ্য সম্মান দেওয়ার চেস্টা করব সবসময়, তুমি ভেবোনা তোমার অসম্মান হয় এমন কোন কাজ আমি করবনা ।
সত্যিই সে রেখেছিল তার কথা। বিয়ে হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শুধু কাগজ-কলম আর মনের, সেখানে ছিলনা অন্য কোন উদ্দেশ্য। শুরু হল লুকোচুরি আমাদের। কেও জানতে দেইনি আমাদের পরিবারকে। যদি কেও যেনে ফেলে বা সন্দেহ করে তাই দুরত্ত বজাই রেখেছি বিবাহিত হওয়া সত্তেও। মনে যে আকাঙ্খা প্রবল তাও চেপে রেখেছি আমরা, আপেক্ষার প্রহর গুনেছি শুধু সেই দিনের জন্য যেদিন আমরআ সমাজের বুকে সামি-স্ত্রীর মর্যাদা পাব।
আপনারা হয়ত ভাবতে পারছেননা… হ্যাঁ আজ আবার আমার বিয়ে … ৬ বছর পর। আর হ্যাঁ পারিবারিকভাবে সবার সম্মতিতে বড় আয়োজন করে হয়েছে। সব অপেক্ষার অবসান আজ আমাদের। সব লুকোচুরি শেষ আজ। আজ আমরা প্রতিস্টিত হয়েছি। আমরা খুব সুখি। সবচেয়ে বেশি খুশি যে সে তার সব কথা রেখেছে। সত্যিই সে ভালো ছেলে আজ বুঝলাম।
দোয়া করবেন সবাই আমাদের লুকোচুরির বিয়ে শেষে বাস্তব জীবনে যেন সুখি হয়ে পারি।