আমি যদি আপনাদের এই বিবেকহীন ডিসিশন গুলার বিরুদ্ধে কথা বলি তাহলে আপনি আমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারবেন। আপনাকে এই সম্পর্কে পূর্ণ অধিকার দেয়া হয়েছে।
ART-102 কোর্সে ভার্সিটিতে কি করা যাবে বা কি করা যাবে না এমন একটা পার্টে লেখা ছিল কোনো Processions বা স্লোগান হতে পারবে না ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাহিরে। এটা হোক রাজনৈতিক বা ছাত্র অধিকার আন্দোলন। হ্যা, আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মানুষগুলার অধিকার টাকার সাথে বিনিসুতোয় গাথা। তুমি টাকা বের করবে পকেট থেকে, আমি তোমায় এক প্যাকেট অধিকারে ভরা ক্যাম্পাস দিব। এখন তো আর বাইরে প্রোটেস্ট করার সে সুযোগ নেই, তাই সামান্য প্রোসেশন টাইপ কথা এখানেই শেয়ার করছি।
উপরের কথা গুলো বলছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করা নেক্সট সেমিস্টারের প্রহসন নিয়ে। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টে পড়ি সে ডিপার্টমেন্টের মূল Theme হচ্ছে ” CSE is a family”৷ একদম সত্যি একটা কথা। বিগত দুই মাসের প্রহসনের সময় এই ডিপার্টমেন্টের কতিপয় সিনিয়র এবং ফ্যাকাল্টি মহোদয়/মহোদয়েরা আমার /আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে দেবদূতের মতন। ঐ খারাপ সময়ে তাদের পাশে না পেলে হয়ত আমি আজকের এই সিচুয়েশনে বসে কিছু লিখতে পারতাম না। সেজন্য তাদের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব আমি।
কিন্তু দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরু করার মাধ্যমে যে এক হিংস্র খেলা শুরু হয়েছে তা নিশ্চয়ই।কাম্য না। IUBAT বাংলাদেশের এমন এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শুধু টাকা পয়সার জন্য কেউ তার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে পারে নি এমন রেকর্ড নেই। এত ভাল ভাল রেকর্ড বজায় রাখার পরেও তাদের ত্রিশ তারিখের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করার মত এরকম নোটিশ সত্যিইই আমাকে বেশি করে ভাবায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন রিক্সাওয়ালার সন্তান থেকে মাসে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা ব্যবসায়ীদের সন্তানও আছে। সো এই Pandemic এর সময় আপনি আমার কাছে দশ টাকা চাইলেও তো আমি আপনাকে বলব- ভাইয়া পরে আসবেন। বিশ পচিশ দিন আগেও যাদেরকে আপনি কিছু টাকা দিয়ে বলেছিলেন ঈদ টা ভাল কাটুক তোমার, ঠিক তাদেরই কাছে আপনি কি করে রেজিস্ট্রেশন বাবদ এতগুলো টাকা চাচ্ছেন?? তো এখন যখন আমি দিতে পারব না তখন আপনি বলছেন সেমিস্টার গ্যাপ দিতে???
সিরিয়াসলি?? একজন ডিপ্লোমাধারী স্টুডেন্টের কথা চিন্তা করুন আপনি। কত গুলো সময় সে অতিবাহিত করেছে। একজন সেকেন্ড টাইমারের কথা চিন্তা করুন, কত গুলো সময় এই জায়গায় আসতে খরচ করেছে। ফ্যামিলি প্রব্লেমের কারণ পড়াশুনায় গ্যাপ দেয়া মানুষগুলার কথা চিন্তা করুন যারা এত সমস্যার পরেও পড়াশুনা কন্টিনিউ করতে চাচ্ছে। আপনি অনলাইনে ক্লাস নেন সমস্যা নেই আমার, ইভেন কারোরই সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি এই সময়ে এতগুলো টাকা চাচ্ছেন কি করে?? মানে বিবেকহীনতার সর্বোচ্চ লেভেলে পৌছে গেছি আমরা।
আমি জানি এসব বলে কোনো লাভ নেই। আপনাদের যাদের প্রচুর টাকা আছে আপনারা ঠিকই অলরেডি টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন। ল্যাব না করেও ল্যাবের টাকা, ফ্যান-লাইট-এসি ইউজ না করেও তাদের টাকা, ভার্সিটি বাস ইউজ না করেও হয়ত সে টাকা দিয়ে দিবেন এক সময়। করুন পড়াশুনা আপনারাই!
আমাদের ও করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সে সুযোগ আল্লাহ আমাকে হয়ত দেন নি। আপনি আমাকে কন্সিডার করবেন?? কত করবেন? পাচ হাজার, দশ হাজার?? পনের হাজার?? তাও তো অনেক বাকি! ওগুলা কীভাবে দিব আমরা?
ও দিতে না পারলে পড়তেও পারব না। সেমিস্টার গ্যাপ দিতে হবে। আচ্ছা! খুব সুন্দর সলিউশন আপনাদের। এই যে মেন্টাল প্রেশারটা আপনারা ক্রিয়েট করছেন না?? এসব প্রেশারেই মানুষ সুইসাইডের রাস্তা বেছে নেয়, যখন দেখবে তারই ক্লাসমেট টাকার কারণে ক্লাস গুলো করতে পারছে, রোজ স্কিলড হওয়ার Way পাচ্ছে ভার্সিটির কাছ থেকে আর সে পাচ্ছে না ডিপ্রেশন গুলা তখনি শুরু হবে। 😄
অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে না আমি, অন্তত কিছু হলেও শেখা যায়। কিন্তু যে শেখার মূলমন্ত্রই থাকবে আগে টাকা দাও, তাও আবার এই প্যান্ডেমিকে। সেই শেখার কতটুকু দরকার আছে আমার জানা নেই। আমি পাবলিকে পড়তে পারি নি সে অনেই ইতিহাস, যেখানে পড়ছি তাও হয়ত একদিন ইতিহাস হয়ে থাকবে। সে পর্যন্ত সবাইই সুস্থ থাকুক।
সবাইকে সুযোগ দিন দয়া করে! এই সময়ে আমাদের সাথে এভাবে খেলবেন না।