এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (Antibiotic Resistance) কথাটার সাথে মোটামুটি সবাই কমবেশি পরিচিত। অনেকেই পাত্তা দেই অনেকে পাত্তা দেই না। কিন্তু এই জিনিসটা কতটা ভয়ংকর সেটা নিয়ে অনেকেই চিন্তা করি না।
জিনিসটা কি? জিনিসটা খুব সাধারণ আবার খুব জটিল। আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল প্রাণী ব্যাকটেরিয়া। কেনো? কারণ এদের এমন সব ক্ষমতা আছে যা আমাদের নেই। এর মধ্যে একটা হচ্ছে নিজের রূপ বদলানো। রূপ মানে এখানে নিজের ক্যারেক্টার। এরা প্রয়োজনে নিজেরা নিজের এতটাই পরিবর্তন করতে পারে যে কয়েক দশক পরে একে দেখে মাইক্রোবায়োলজিস্ট রাও চিনতে পারেনা। নিজের সেলওয়াল, প্রোটিন, DNA/RNA, সব কিছুতেই পরিবর্তন আনতে সক্ষম এরা। তাই যখন আমরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করি তখন এরা চেষ্টা করে ক্যারেক্টার চেঞ্জ করে টিকে থাকার। কিন্তু মেডিসিনের কোর্স কম্পলিট করলে তা আর হয়ে উঠেনা।
তাহলে এরা রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে কেনো? যখন আমরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করি কিন্তু কোর্স কম্পলিট করিনা, ধরুন ৭ দিন খাওয়ার কথা ৩ দিন পরেই শরীর ভালো লাগছে তাই আর খেলাম না তখনই শুরু বিপত্তি। আপনি ব্যাকটেরিয়াকে দূর্বল করে ছেড়ে দিলেন এই দূর্বল ব্যাকটেরিয়া আপনার বডিতে মিউটেশন করে শক্তি আহরণ করবে। তখন আর এই এন্টিবায়োটিক আপনার বডিতে নেক্সট টাইম কাজ করবেনা। আপনাকে অন্য এন্টিবায়োটিক খেতে হবে। কিন্তু আপনি ওটার কোর্স ও কম্পলিট করলেন না ব্যাকটেরিয়া ওটার রেজিস্ট্যান্ট হবে। এখন যদি আপনি এই ব্যাকটেরিয়া ট্রান্সমিট করেন অন্য কারো দেহে তাহলে সেও ওই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট।
এটার ভয়াবহতা বুঝতে একটা উদাহরণ দেই। ঢাকায় এক শিশুর দেহে এন্টিবায়োটিক এতটাই রেজিস্ট্যান্ট যে সে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকার সব এন্টিবায়োটিক এর প্রতি রেজিস্ট্যান্ট। কিন্তু দুখের বিষয় হলো সে এটি এচিভ করেছে অন্য মানুষ থেকে। জ্বী এতটাই ভয়ংকর এটা।
এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর জন্য এখন নিউমোনিয়া, টিউবারকুলোসিস, গনোরিয়ার মতো রোগের চিকিৎসা এখন কষ্টসাধ্য। ডাক্তাররা হিমশিম খায় কোন মেডিসিন দিলে রোগী ঠিক হবে। কিন্তু পুরোটাই আমাদের অজ্ঞতার কারণে।
তাহলে আমাদের করণীয় কি? প্রথমত চুইংগামের মতো এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আজকে আমাদের থার্ড জেনারেশন সেফালোস্পোরিন (সেফুরক্সিম) ব্যবহার করতে হচ্ছে। হয়তো খুব নিকট ভবিষ্যতে এটাও কাজ করবেনা। এজন্য ডাক্তারদের (Human + Veterinary) অবাধ ও অহেতুক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আর ব্যবহার করলেও পেশেন্ট হিসেবে আমাদের কোর্স কম্পলিট করতে হবে। তা না হলে হয়তো আবার আমরা কলেরা বা টিবির মহামারীতে ফিরে যাবো। তখন করার থাকবে না কিছুই।