সম্মানিত দর্শকমন্ডলী , আসসালামু আলাইকুম। আমরা জানি, সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন বিভিন্ন খাবার খেতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই কিভাবে সঠিক খাবার নির্বাচন করতে হয় তা বুঝতে পারিনা । ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণে আমরা ব্যর্থ হই। তাই আজকে আমি বিভিন্ন খাদ্য উপাদান এবং সে উপাদান গুলো কোথা থেকে পেতে পারি তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করব । যার ফলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন কোন খাবারে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং সঠিক খাদ্য তালিকা সহজেই করে নিতে পারবেন বলে আশা করছি।
আমরা সবাই জানি , খাদ্যের ছয়টি উপাদান রয়েছে। সেগুলো হলো- শর্করা , আমিষ , স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি । সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের এ ছয়টি উপাদান প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত ।এ ছয়টি উপাদান যে যে খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায় তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণ্না করা হলো।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট ঃ
শর্করা আমাদের শরীরে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাপশক্তি উৎপাদন করে । যেসব খাবারে শর্করা পাওয়া যায় তা হলো- ধান , গম , ভুট্টা এবং অন্যান্য শস্য দানা , আঙুর , আপেল , গাজর , খেজুর ,আম , পেঁপে , কমলালেবু , ফুলের মধু , আখের রস , চিনি , গুড় , মিছরি , বেল , কলা , তরমুজ , বাদাম , শুকনো ফল ইত্যাদিতে । এছাড়াও গরু , ছাগল ও অন্যান্য প্রানির দুধে শর্করা থাকে।আবার পশু ও পাখি জাতীয় ( মুরগি , কবুতর প্রভৃতি ) প্রানীর যকৃত এবং মাংসে শর্করা থাকে।
আমিষ বা প্রোটিন ঃ
প্রাণিদেহের গঠনে আমিষ অপরিহার্য।দেহকোষের বেশির ভাগই আমিষ দিয়ে তৈরি। দেহের হাড় , পেশি , লোম , পাখির পালক , নখ , পশুর শিং ইত্যাদি সবই আমিষ দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়া প্রাণিদেহের শুষ্ক ওজনের ৫০% হচ্ছে আমিষ। যেসব খাবারে আমিষ পাওয়া যায় তা হলো – মাছ , মাংস , ডিম , দুধ , ছানা , পনির ,ডাল , শিমের বিচি , মটরশুঁটি , বাদাম , সয়াবিন , ভুট্টা ইত্যাদি।
স্নেহ পদার্থ বা লিপিড ঃ
স্নেহ পদার্থ সবচেয়ে বেশি তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে , দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য অতি আবশ্যক । স্নেহ পদার্থ দেহ থেকে তাপের অপচয় বন্ধ করে ও ভবিষ্যতে খাদ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করে , ত্বকের মসৃণতা এবং সজীবতা বজায় রাখে ও চর্মরোগ প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন A , D , E এবং K শোষণে সহায়তা করে। স্নেহ পদার্থ যেসব খাবারে পাওয়া যায় তা হলো – চর্বিসহ মাংস , মাখন , ঘি ,পনির , ডিমের কুসুম , সরিষা , সয়াবিন , তিল , তিসি , ভুট্টা ,নারকেল , সূর্যমুখী , পাম তেল , কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম এবং চিনা বাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ঃ
ভিটামিন প্রাণির স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য । বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন – A , B , C , D , E এবং K ।
ভিটামিন A ঃ
ডিম , গরুর দুধ , মাখন , ছানা , দই , ঘি , যকৃত ও বিভিন্ন তেল সমৃদ্ধ মাছ বিশেষ করে কড মাছ , লালশাক , কচুশাক , পুঁইশাক , পাটশাক , কলমিশাক , ডাঁটাশাক , পুদিনা পাতা , গাজর , মিষ্টি কুমড়া , ঢেঁড়স , বাঁধাকপি , মটরশুঁটি , বিভিন্ন ধরনের ফল ( আম , পাকা পেঁপে , কাঁঠাল ) ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন A পাওয়া যায়।
ভিটামিন B ঃ
দেহের বৃদ্ধি , স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কাজ , দেহকোষে বিপাকীয় কাজ , প্রজনন ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য খাদ্যে ভিটামিন B কমপ্লেক্সের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন।
B1 বা থায়ামিন ঃ
ঢেঁকিছাঁটা চাল , আটা , তেলবীজ , বাদাম , ডাল , যকৃত , সবজি ও টাটক ফল , ডিম , দুধ , মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন B1 রয়েছে ।
B2 বা রাইবোফ্ল্যাভিন ঃ
যকৃত , সবজি , গাছের কচি ডগা , দুধ , ডিম , সবুজ শাকসবজি , অঙ্কুরিত বীজ এ রয়েছে ভিটামিন B2 ।
B5 বা নিয়াসিন ঃ
মাংস , যকৃত , আটা , ডাল , বাদাম , তেলবীজ , ছোলা , শাক-সবজিতে রয়েছে ভিটামিন B5 ।
B6 বা পিরিডক্সিন ঃ
চাল , আটা , মাছ , মাংস , শাকসবজি , ছোলা , ছত্রাক , বৃক্ক , ডিমের কুসুমে এ ভিটামিন রয়েছে।
B12 বা কোবালামিন ঃ
যকৃত , দুধ , মাছ , মাংস , ডিম , পনির , বৃক্ক প্রভৃতিতে এটি রয়েছে।
ভিটামিন C ঃ
ত্বক , হাড় , দাঁত ইত্যাদির কোষসমূহকে জোড়া লাগিয়ে মজবুত গাঁথুনি তৈরি করে। শরীরের ক্ষত নিরাময় করে , দাঁত ও মাড়ি শক্ত রাখে , ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে , স্নেহ , আমিষের বিপাকীয় কাজে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন C পাওয়া যায় এমন খাদ্যগুলো হলো – মুলাশাক , লেটুস পাতা , ধনে পাতা , পুদিনা পাতা , কাঁচা মরিচ , ফুলকপি , করলা , আমলকী , লেবু , কমলালেবু , টমেটো , আনারস , পেয়ারা ইত্যাদি
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রত্যেকের সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।