আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ সপ্তাহের পরিকল্পিত এ্যাসাইনমেন্ট প্রোগ্রামে আজকে নিয়ে এলাম এই সপ্তাহে চলমান ৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (পার্ট-৩, ৬ষ্ঠ সপ্তাহ) এ্যাসাইনমেন্টের সমাধান। তাহলে শুরু করা যাক।
নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ:
সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার বহু কারণ রয়েছে।আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কাজে নারীকে সর্বদা অপারদর্শী, অদক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়।বাইরের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ক্রমাগত কন্যাসন্তানের জন্ম ও এর ফলে পুত্র সন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা প্রভৃতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে । অর্থনৈতিক দুরবস্থা আমাদের দেশের যৌতুক প্রথাকে প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে। ফলে যৌতুক প্রথা পরিণত হয়েছে সহিংসতা আর হাতিয়ার রূপে। তাছাড়া নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা, বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এখনও আমাদের সমাজে অনেক পুরুষ নারীকে দুর্বল ও অবলা হিসেবে মনে করে। গ্রামীণ ও শহরের সমাজের কতিপয় পরিবারের পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি হল নারীর কাজ গৃহে রান্নাবান্না, সন্তান জন্মদান, লালন-পালন, সবজি বাগান করা, গবাদিপশু লালন, শিশুকে পাঠদান, শারীরিক শুশ্রূষা করা প্রভৃতি। তাছাড়াও কন্যাসন্তানকে শিক্ষাদানে প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, কন্যা সন্তানের প্রতি মা বাবার উদাসীনতা, পুত্রসন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া, বিবাহে কন্যার অনিচ্ছার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করার মনোভাব প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়।নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ দারিদ্রতা। দারিদ্রতা ঘোচাতে কাজের খোঁজে এসে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হয়। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের একটি বিরাট অংশ পোশাক শিল্পে কাজ করে।এসব নারী শ্রমিক রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।বাড়িতে কাজ করে এমন গৃহকর্মী নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
লোকলজ্জা পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদার ভয় সহ নানা কারণে বাংলাদেশের নারী সমাজ অনেক সময় নির্যাতনের বিষয়ে বাইরে প্রকাশ করতে বা প্রতিবাদ করতে পারে না। ফলে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংস ঘটনা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবে নারী ও শিশু এই নীরবতা ভাঙতে শিক্ষামন্ত্রণালয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের করণীয়:
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের করণীয় কি তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. নারী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, বিধবা ভাতা প্রদান এবং নারীর জন্য ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি;
২. নির্যাতন, সহিংসতা ধরন ও প্রকৃতি সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ;
৩. পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়কে পারিবারিক জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ গঠন সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান;
৪.নারী অধিকার এবং অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি;
৫. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্মতৎপরতা সম্প্রসারণ;
৬. নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা;
৭. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রবর্তিত আইন যেমন এসিড অপরাধ দমন আইন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশের যথাযথ প্রয়োগ;
৮.সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা;
৯. নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার প্রভাব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি;
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়বস্তু সহজভাবে জনসম্মুখে উপস্থাপন ও প্রচার।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরো কতগুলো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, অপসংস্কৃতি রোধ, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সুস্থ পরিবার গঠন শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুসরণ করা, নারীর ভূমিকা ও মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কোন সমস্যা হলে কমেন্ট করুন এবং পরবর্তী এ্যাসাইনমেন্টগুলো পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আগের পোস্টটি পড়তে ক্লিক করুন।