ডাইনোসর যুগের ও আগের প্রাণী তুয়াতারাকে নিয়ে বিস্ময়ের অন্ত নেই।বিঙ্গানীদের কাছে তুয়াতারার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে তারা এটিকে জীবন্ত জীবাশ্ম(Living fossil)হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।জীবন্ত জীবাশ্ম বা Living fossil হচ্ছে এমন সব প্রাণি বা উদ্ভিদ যাদের উৎপত্তি বহু আগে,কিন্তু তারা কোনোরূপ বাহ্যিক পরিবর্তন ছাড়াই টিকে আছে আজকের দিন পর্যন্ত।অথচ তাদের সমসাময়িক অনেক প্রাণী ই হয়ে গেছে বিলুপ্ত।বিঙ্গানীরা সিলিকান্থ মাছকেও জীবন্ত জীবাশ্ম হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন,মাছটি জীবিত অবস্থায় প্রথম ধরা পড়েছিল ১৯৩৮ সালে মাদাগাস্কার উপকূলে।সময়ের সাথে সাথে তুয়াতারাদের মোলিকিউলার তথা আণবিক পর্যায়ে হয়তো পরিবর্তন হয়েছিল,কিন্তু বাহ্যিক দিক অপরিবর্তিত ই থেকে গেছে।
বিঙ্গানীরা তুয়াতারাদের যে জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন,তার বয়স ১৮০ মিলিয়ন বছরের ও বেশি অর্থাৎ এটি জুরাসিক যুগের নিদর্শন।তাদের সমসাময়িক প্রজাতিরা ৬০ মিলিয়ন বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।ডাইনোসরের চাইতেও অন্তত সাড়ে বারো কোটি বছর আগে এ প্রাণীটি জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীতে।এই প্রাণীটি স্ফেনোডন গোত্রের একটি প্রাণী।
তুয়াতারা নিউজিল্যান্ড এর একটি সংরক্ষিত প্রাণী। যে তিনটি জায়গায় তুয়াতারাকে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলো-
১.তিরিতিরি মাতাঙ্গি দ্বীপ,হুয়ারাকি,অকল্যান্ড।
২.জিল্যান্ডিয়া,ওয়েলিংটন।
৩.মাতিউ/সোমস্ দ্বীপ,ওয়েলিংটন।
তুয়াতারা পঁচিশ সেন্টিগ্রেড এ বাঁচতে পারে না আবার পাঁচ সেন্টিগ্রেড এর নিচে বেঁচে থাকতে পারে।
এদের বৃদ্ধির হার অনেক কম এবং তারা পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।আকারে তারা এক ফুটের কাছাকাছি লম্বা হয়।
এরা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী।সবচেয়ে মজার বিষয় এদের দাঁত বা কান নেই।এবং ইচ্ছামত লেজ খসিয়ে ফেলতে পারে।
তুয়াতারারা গড়ে ষাট বছর বাঁচে।তবে সর্বোচ্চ একশ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
তুয়াতারা রা পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে।এর সাথে সাথে গুবরে পোকা,টিকটিকি,পাখি এবং পাখির ডিম ও খেয়ে থাকে।
বাচ্চা তুয়াতারারা দিনের বেলা খাবারের সন্ধানে বের হয়।কারণ রাতের বেলা যাতে বয়স্ক তুয়াতারা রা তাদের খাবার ভেবে খেয়ে না ফেলতে পারে।
তুয়াতারারা পরিণত হয় সাধারণত দশ থেকে বিশ বছর বয়সে।মধ্যগ্রীষ্ম এদের প্রজননের সবচেয়ে ভালো সময়।মহিলা তুয়াতারারা চার বছর অন্তর অন্তর ডিম পাড়ে।
তুয়াতারাদের কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট:
১.তাপমাত্রার সাথে এদের সম্পর্ক অদ্ভুত ধরনের।এরা একটোথার্মিক অর্থাৎ কোল্ড ব্লাডেড প্রাণী।এদের কোনো সেক্স ক্রোমোজম নেই।তারা যখন ডিম অবস্থায় পনের মাস ধরে মাটিতে থাকে,তখন লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।এই বৈশিষ্ট অন্যসব সরীসৃপ এও দেখা যায়।
২.তুয়াতারাদের বাচ্চাকালে মাথার ঠিক উপরে একটি চোখ বা প্যারাইটাল আই থাকে।এটি এদের তৃতীয় চোখ নামে পরিচিত।তবে চার থেকে ছয় মাস বয়স হলে এই চোখ চামড়া এবং পিগমেন্টে ঢেকে যায়।এর কাজ নিয়ে বিঙ্গানীরা এখনো গবেষণা করছেন।তবে এটি অতি বেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচায় বলে ধারণা করা হয়।
৩.তুয়াতারা টিকটিকির গোত্রে পড়ে না,কারণ তাদের উপরের পাটিতে দুই সারি দাঁত আছে,যা টিকটিকিদের থেকে ভিন্ন।
৪.পৃথিবীতে আর মাত্র ১০০০০০ টি তুয়াতারা রয়েছে।একারণে একেকটি তুয়াতারার মূল্য প্রায় ৪০০০০$. এজন্য এটি অত্যন্ত মূল্যবান।
৫.কোনো বৈঙ্গানিক গবেষণার প্রয়োজনে তুয়াতারাকে প্রয়োজন হলে,কোনো মূল্যবান জিনিসের বিনিময়ে নিউজিল্যান্ড থেকে তুয়াতারাকে আনা হয়।
৬.মাউরি ও তুয়াতারা:মাউরি প্রধানত নিউজিল্যান্ড এর একটি আদিম উপজাতি।তুয়াতারাকে তারা অত্যধিক সম্মানের চোখে দেখে।তুয়াতারা নাম টিও মাউরিদের দেয়া,যার মানে হচ্ছে কাঁটাযুক্ত পিঠ।
মাউরিরা মনে করে সরীসৃপ রা পুঙ্গা (punga)এর বংশধর।পুঙ্গা হচ্ছে সমুদ্রের দেবতা টাঙ্গারোয়া(Tangaroa) এর ছেলে।তুয়াতারাকে তারা অন্ধকার ও মৃত্যুর দেবতা হিসেবেও মেনে চলে।আর এ কারণেই তারা কবরের পাশে তুয়াতারাকে রেখে দেয়,তারা যাতে মৃতের প্রতি নজর রাখতে পারে।
তুয়াতারাকে যখন দেশের বাইরে পাঠানো হয়,তখন মাউরিরা ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুয়াতারাকে বিদায় দেয়।এমনকি বিমানে তুয়াতারার সাথে একজন প্রবীণ ব্যক্তি ও যায়।তুয়াতারাকে তারা অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে।
আজ এ পর্যন্তই। অন্যদিন দেখা হবে আরও অদ্ভুত কোনো প্রাণীর বর্ণনা নিয়ে।