আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।
তবে একটু দুশ্চিন্তা হয় তাদের জন্য, যাঁরা অটোফোবিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি অটোফোবিয়ায় ভিকটিম?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক..
ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।
আজ আমরা অটোফোবিয়ায় বা একাকীত্বতার ভীতি নিয়ে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতে হলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অটোফোবিয়ায়: অটোফোবিয়ায় অর্থ একাকীত্বতার ভীতি। সাধারণত যেসব মানুষ রাতের বেলা কিংবা ঘুমানোর সময় একাকীত্বতার ভয়ে অস্থির হয়ে যায়, বা তাঁরা একপ্রকার ভয় পাওয়া শুরু করে দেয়, তাঁরা এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত বলো স্বীকৃত। তাঁরা সাধারণত বিভিন্ন উপায় বের করেন মানুষের সাথে বেশি বেশি সময় কাটানের। রাতে একা গএমাতে পারেননা তাঁদের কেউই। কোন একটি বাহানা তাঁরা করেই থাকেন, যাতে করে রাতে কাউকে তাঁদের পাশে রাখতে পারেন। অনেকে তো আছেন, যাঁরা দিনের বেলায়ও একা থাকতে পারেননা। সবসময়ই কাউকে না কাউকে তাঁদের লাগে। হয় গল্পগুজব করতে, নাহয় পাশে রাখতে। তাঁরা বলতে গেলে মোটেও একা সময় পার করতে পারেননা। কিছুক্ষণের জন্য তাঁদের একা করে রাখুন, একটু পর এসে তাঁদেরকে স্তির দেকতে পাবেননা। একাকী সময় পার করতে তাঁদের জান বেরিয়ে যায়। সবসময়ই তাঁদের মনে এই ভয়টাই কাজ করে যে, হয়তো এক্ষুণি আমার পাশে অচেনা কেউ একজন এন্ট্রি নিবে! হয়তো এক্ষুণি ভয়াল কোন দৃশ্য আমি দেখতে যাচ্ছি! হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই কোন জ্বীন/ভূত/আত্মার কবলে আমাকে পড়তে হবে! কি হবে আমার!
আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ছোটবেলায় আমিও এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিলাম। প্রচুর ভয় পেতাম আমি একা থাকতে।
একদিন আমার এক খালার বাসায় কোরবানী গরুর মাংস নিয়ে আমাকে বেড়াতে যেতে হয়। খালার বাড়ি ছিলো আমার বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মাইল দূর। সেখানে যেতে যেতে রাত হয়ে যায় বিধায় খালার বাসাতেই আমাকে অবস্থান করতে হয়।
খালার ছিলো তিন মেয়ে। ফলে আমাকে একা একটা রুম দেওয়া হলো রাতে ঘুমানোর জন্য। এদিকে আমি জানি যে আমার অটোফোবিয়া। ফলে খালাতো বোনদের সাথে জোর করে গল্প করতে থাকি আমি। অনেক রাত হয়ে যায়। তাদেরকেও গাদের বিছানায় চলে যেতে হয়।
বিশ্বাস করুন, খালার বাড়ি শহরে ছিলো। সেই শহুরে পরিবেশেও আমার মনের ভেতর গ্রামের ভূত পেত্নীর কথাগুলো বারবার আসতে থাকে। প্রথমদিকে অল্প, পরের দিকে ভয়ে তটস্থ হয়ে যেতে তাকি আমি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলামনা। সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোবাইলটাও নিয়ে যাইনি আমি ভুলে। ফলক্রমে সে রাতের প্রতিটা মিনিট আমার জন্য এক একটা দিন হয়ে যায়..
এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে আমার জীবনে। আপনাদের জীবনেও কম নেই আশা করি। কমেন্ট বক্স তে আছেই, জানিয়ে দিয়েন যদি আপনারও এরকম কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে..
পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদেরকে একটু উপস্থিত করে রাখতে পছন্দ করে। তাঁদের নিজেদের স্বভাবে একটু কর্মঠ ভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে বাস্তবে যদিও তাঁরা এক্টিভ, তাঁরা ভেতরে ভেতরে খুবই সরল এবং একটু আবেগপ্রবণ টাইপের হয়। আপনি তাদেরকে সঙ্গ দিলে তারা সে সঙ্গ কখনোই ভাঙবেনা এবং তারা খুব তাড়াতাড়ি যেকোন মানুষের বন্ধু হয়ে যেতে পারে।
তবে জেনে রাখা উচিৎ যে, এই অটোফোবিয়া বা একাকীত্বতার ভয় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ অন্যান্য আরও ফোবিয়া বা ভয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমনঃ এব্লুটো ফোবিয়া বা স্নান, ধোয়া-মোছা অথবা পরিষ্কার করার ভয় রোগ।
এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। একা একা থাকা বা সময় যাপন করা নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণে কিছু ব্যবস্থা আপনাকে অবশ্যই নেওয়া উচিত। যেমনঃ
১. আত্মবিশ্বাস নিয়ে এটা মনে করতে থাকা যে, আপনি আপনার জীবনের হিরো। আপনাকে ছোঁয়ার মতো সাহস কোন জ্বীন-পরী/ভূত-প্রেতের থাকতে পারেনা। আপনার অনুমতি ব্যতীত কখনোই আপনি অন্যকারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেননা।
২. একাকীত্ব,, ব্যাপারটাকে সহজে নিতে শেখা। অর্থাৎ নিজ বাসায় বা অন্যকোথাও একা একা থাকলে আপনার কিছুই হতে যাচ্ছেনা, এমনটা ভাবা। ভাবতে না পারলেও ভাবার চেষ্টা করা।
৩. নিয়মিত বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলা। ভ্রমণে বের হওয়া। কাজে ব্যস্ত থাকা এবং চিত্রাংকন চর্চা করা, ইত্যাদী।
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..
পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয়রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।
Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Autophobia
অটোফোবিয়া
একা থাকতে ভয়
একাকীত্বতার ভীতি
অটোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ