মনে করুন আপনি নেট ব্রাউজ করছেন। হঠাৎ করে আপনার সামনে একটি গ্যাম্বলিং ওয়েবসাইটের (জুয়া খেলা) এড চলে আসলো। জুয়া খেলার ওয়েবসাইটগুলো বেশিরভাগ ডার্ক ওয়েব নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়ার অন্ধকার জগত। ধরে নিন আমাদের নেটের দুনিয়া হচ্ছে একটি সাগর, এই সাগরের শুধু উপরিভাগের পানি “সারফেস ওয়েব” এর সাথে তুলনাযোগ্য (আমরা সাধারণত যেসব সাইটগুলোতে ব্রাউজ করার অনুমতি পাই) এবং বাদবাকি সাগরের সব অংশ হচ্ছে “ডিপ ওয়েব”।
আবার এই ডিপ ওয়েবের বেশিরভাগ অংশই থাকে ডার্ক ওয়েবের দখলে। অনেক ধরনের অপরাধমূলক কাজ সম্পাদন করার জন্য অনেকেই ডার্ক ওয়েবের সাহায্য নিয়ে থাকেন। যার জন্য এসব সাইটগুলোতে এক্সেস দেয়া হয় না। এসব সাইটগুলোতে প্রবেশ করার জন্য আলাদা কিছু ওয়েব ব্রাউজারের প্রয়োজন হয়।
তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক ডার্ক ওয়েবের ক্ষতিকর দিকগুলো:
অপরাধমূলক কাজ সম্পাদন করার মাধ্যমঃ আপনি হয়তোবা ভাববেন কিভাবে অপরাধমূলক কাজ করার জন্য ডার্ক ওয়েব কাজে লাগে। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে এই ডার্ক ওয়েব ব্যবহৃত হয় কিডন্যাপিং, খুন, সন্ত্রাসীমূলক কাজ করার জন্য। একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ডের জন্য ৪৫০০০ ডলার, গুম করার জন্য ৬০০০০ ডলার, এমনকি ধর্ষণ করানোর জন্যেও প্রায় ৬০০০ থেকে ৮০০০ ডলার চার্জ করা হয়।
কাজ না হলে মানিব্যাক গ্যারান্টিও প্রদান করা হয়।শুধু তাই নয়, ব্ল্যাক মেইলিং এবং চাঁদাবাজির মত ঘটনাও অহরহ ঘটছে এই ডার্ক ওয়েবকে মাধ্যম বানিয়ে। আমাদের দেশে এখনোও এই অপরাধের পন্থাটি না আসলেও আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই খারাপ কন্টেন্টগুলোর নাগপাশ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ফলে অসুস্থ মানসিকতার শিকার হয়ে বেড়ে উঠছে তারা।
আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানঃ আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রেও ডার্ক ওয়েব কাজে লাগানো হয়। কালোবাজারে অবৈধ অস্ত্র, স্মাগ্লিং, মাদক কেনাবেচা ইত্যাদি বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অপরাধীরা বেছে নিচ্ছে এই অন্ধকার জগতকে মাধ্যম হিসাবে। এসব লেনদেন করা হয় বিটকয়েনের দ্বারা। এমনকি দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠীরাও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এর সূত্র অনুযায়ী, করোনাকালে আমাদের দেশে মাদকদ্রব্য পাচার বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি। হেরোইন, ইয়াবা এবং ক্রিস্টাল ম্যাথ নামক আরেকটি নতুন মাদক আসছে পাচার হয়ে এবং এগুলো বেশীরভাগ ডার্ক ওয়েব দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সহজেই পরিচয় লুকিয়ে এসব কাজ সম্পাদন করা যায় বলে অপরাধীরা এই পন্থাকে লুফে নিচ্ছে। প্রযুক্তিগতভাবে সীমাবদ্ধ থাকায় এসব মাফিয়াচক্রকে সহজে নির্মূলও করা যাচ্ছে না।
পর্ণগ্রাফি বাণিজ্যে ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারঃ সারাবিশ্বেই ডার্ক ওয়েব পর্ণগ্রাফির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু পর্ণগ্রাফিতে বাণিজ্যে ডার্ক ওয়েব বেশি কুখ্যাত। সম্প্রতি কাউন্টার টেরোরিস্ট ইউনিট পর্ণগ্রাফি চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। চক্রটি বাইরের দেশের মাফিয়াদের সাথে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে শিশুদের নগ্ন চিত্র এবং ভিডিও পাচার করত বিরাট অর্থের বিনিময়ে। এসব চক্রের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের দেশে।
আসলে ডার্ক ওয়েবের বিরূপ দিকগুলো সামান্য কিছু শব্দে শেষ করা যাবে না। তাই নিজে সাবধান থাকবেন যখনই আপনি নেট সার্ফিং করবেন, খেয়াল রাখবেন নিজ পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরাও কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছে। সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে নিজে প্রথমে সুরক্ষিত থাকতে হবে।