স্টুডেন্টদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট। আমরা সবাই জানি “Time is money”। কিন্তু অনেকেই এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়না। কেউ কেউ খুব সুন্দর করে রুটিন করে পড়লেও ইতিবাচক ফল পায়না। এর কারনটা কি? কারনটা হলো রুটিন করে পড়ার পরেও তারা সময়টাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। দীর্ঘ সময় পড়া কিংবা কোনো কাজ করেও প্রোডাক্টিভ হতে পারেননা। তাহলে এর সমাধান কি? এর সমাধান নিয়ে আসেন Francesco Cirillo নামের একজন ইতালিয়ান ব্যক্তি। তিনি একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং নাম দেন ‘Pomodoro technique’। আজকে এই টেকনিক নিয়েই বিস্তারিত লিখব।
Francesco Cirillo এই টেকনিক ব্যবহার করার সময় একটা টমেটোর মত দেখতে ঘড়ি ব্যবহার করতেন এলার্ম সেট করার জন্য। ইতালিয়ান ভাষায় Pomodoro অর্থ Tomato। সেই ঘড়ির নাম থেকেই ‘Pomodoro’ নামটি এসেছে। তিনি ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিলেন।
এই পদ্ধতিতে তিনি প্রতি ৩০ মিনিটকে ২৫+৫ মিনিটে ভাগ করেন। তারপর তিনি নিজের পড়ার জন্য সম্পুর্নভাবে ফোকাস করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত করে তার টমেটো এলার্ম ঘড়িতে ২৫ মিনিট পর একটি এলার্ম সেট করেন। এই ২৫ মিনিট তিনি তার সর্বোচ্চ মেধা খাটিয়ে পড়তে থাকেন। ২৫ মিনিট পর এলার্ম বাজলে এবার ৫ মিনিট পর একটা এলার্ম সেট করে নিয়ে ছোট একটা ব্রেক নেন। ব্রেক শেষ হওয়ার পর আবার তিনি আগের নিয়মে পড়তে থাকেন। মোট ৪ বার ২৫+৫ মিনিট Pomodoro মিলে হয় একটি Pomodoro cycle। এভাবে প্রতি সাইকেলে ১০০ মিনিটের ফোকাসড পড়াশুনা সম্পন্ন করেন।
এই নিয়মের সুবিধা কি?
গবেষনায় দেখা গেছে মানুষের গড় মনোযোগ ধরে রেখে পড়ার ক্ষমতা বা attention span প্রায় ২০ মিনিট। অর্থাৎ ২০-২৫ মিনিট পড়ার পর আমাদের মস্তিষ্ক কার্যকরভাবে পড়াগুলো মেমোরাইজ করতে পারে না বা স্থায়ীভাবে স্মৃতিতে গেথে রাখতে পারেনা। সেজন্য এরপর একটা ছোট ব্রেকের প্রয়োজন হয় যা আমাদের ব্রেইনকে পুনরায় নতুন কিছু জানার জন্য প্রস্তুত করে । অনেক সময় একটা অংক দীর্ঘ সময় ধরে সমাধান করার চেষ্টা করার পরও শিক্ষার্থীরা সফল হয়না।
কিন্তু ছোট একটা ব্রেকের পর ঐ একই অংক পুনরায় আবার একবার চেষ্টা করেই সমাধান করে ফেলা যায়। এটা হলো Pomodoro টেকনিকের ব্রেকের উপকারিতার সবচেয়ে বাস্তব এবং প্র্যাক্টিকাল উদাহরন যা কম-বেশি প্রায় সব স্টুডেন্টই আগে পরে এক্সপেরিয়েন্স করে থাকে। আর Pomodoro টেকনিকে যেহেতু একটানা দীর্ঘ সময় টেবিলে মাথা গুজে বসে থেকে পড়তে হয়না বরং হালকা বিরতি পাওয়া যায়, তাই স্টুডেন্টদের সহজে একঘেয়েমিতায় ভুগতে হয় না এবং যতটুকু পড়া হয়েছে ততটুকু স্থায়ীভাবে দীর্ঘ সময় মনে রাখতে পারে। তাছাড়া কঠিন কঠিন জিলাপির প্যাচের মতো অংক কষতে গেলে ব্রেইন ইতিবাচক ফল দেয়।
ফলে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সহজে কঠিনতর গানিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন। অনেক স্টুডেন্ট-এরই একটা সমস্যা থেকে থাকে। তা হলো ২ ঘন্টা টেবিলে বসে থেকে মাত্র আধা পৃষ্ঠা ভালোমতো পড়া হয়েছে। এর পরের অংশ পড়তেই পারেনি কিংবা পড়লেও মনে রাখতে ব্যর্থ। এক্ষেত্রেও Pomodoro টেকনিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই ২ ঘন্টাকে সহজেই কিন্তু প্রোডাক্টিভ বানিয়ে ফেলা যায় মাত্র একটা কমপ্লিট Pomodoro cycle এর মাধ্যমে! একজন স্টুডেন্ট যদি দৈনিক ২-৪ টা Pomodoro cycle সম্পন্ন করতে পারে তাহলে তাকে ভালো রেজাল্ট করা থেকে কে আটকায়?
এই লেখাটিতে কেবল লেখাপড়ার ক্ষেত্রেই Pomodoro টেকনিকের ব্যবহারের সুবিধাগুলো একটু হাইলাইট করে তুলে ধরা হলেও টেকনিকটা কিন্তু আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। যেমন- workout করা, শিক্ষকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আপনি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনি workout করার সময় ৩০ মিনিট সময়কে ২৫+৫ মিনিটে ভাগ করে নিয়ে করতে পারেন। আপনি যদি শিক্ষকতা করেন তবে এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য খুবই কার্যকর প্রমানিত হতে পারে কেননা আপনার পেশার সাথে স্টুডেন্টরা জড়িত।
আপনি যখন তাদের ক্লাসে কোনো লেসন পড়াবেন তখন ২০-২৫ মিনিট পর ৫ মিনিটের ব্রেক দিলে স্টুডেন্টদের পরবর্তী টপিক বুঝতে সুবিধা হবে। আপনি যে পেশার মানুষ সে অনুযায়ী এই টেকনিককে আপনার কাজের সাথে সমন্বয় করে নিতে পারেন। এতে কিন্তু আপনার প্রোডাক্টিভিটি এবং স্কিল দুটোই বাড়বে।
কিছু ভুল ধারনাঃ
Pomodoro মেথোডটি একটা অসাধারন কৌশল হলেও আজকাল অনেকেই এই মেথড সম্পর্কে জানার পর প্রথম যেই অভিযোগটি করেন তা হলো, এই পদ্ধতিটি Work time কমিয়ে দেয়। অনেকেই আছেন যাদের দিনে একটানা ৩-৪ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় কাজ করার প্রয়োজন হয়। তাহলে আপনার ৩০-৪০ মিনিট ব্রেকে অপচয় হয়ে যাবে। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগের দিনে ১৭+ ঘন্টাও পরিশ্রম করে থাকেন পরীক্ষায় একটা ভালো ফল লাভের আশায়। সেক্ষেত্রে ১৭০ মিনিট বা প্রায় ৩ ঘন্টা বিরতিতেই চলে যাচ্ছে।
তাদের কাছ থেকে এরূপ অভিযোগ আসা সাভাবিক। তবে তারা যে ব্যাপারটা ভুলে যান তা হলো একটানা দীর্ঘক্ষন পড়ার পর তাদের এফিসিয়েন্সি বা কার্যকারিতা কমতে থাকে। প্রথমত অল্প সময়ে অনেক কাজ করার প্রেসার এবং সেসাথে কোনো বিরতি ছাড়াই তা একটানা চালিয়ে যাওয়ার কারনে প্রায়ই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। অনেক কর্মজীবী এবং স্টুডেন্টরাই Pomodoro সম্পর্কে এই একই রকম মনোভাব থাকার পরও একবার বাস্তব জীবনে মেথডটি প্রয়োগ করে নিজের সময়টাকে আরো প্রোডাক্টিভ উপায়ে ব্যবহার করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। তাই একবার এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে দেখাই যায়।
আপনি চাইলে গুগল প্লে স্টোরে সার্চ দিয়ে Pomodoro Timer app নামিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার Pomodoro technique ব্যবহার করতে সুবিধা হবে।
যদি আপনি Pomodoro technique ব্যবহার করে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথেও এই টেকনিকটা শেয়ার করবেন যাতে তারাও তাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে।