বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়, যেখানে ১১টি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করা হয়। এই তালিকায় দেখা গেছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সিপিবি এবং বাসদের নাম, যা নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি নাখোশ হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, এই বিষয়টি তাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তারা একটি সুসংগঠিতভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, “যে রিট করা হয়েছে, তার মূল প্রশ্ন হচ্ছে বিগত তিনটি নির্বাচন অবৈধ হবে কি না। কিন্তু এখানে আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে। রিটের জন্য যাদের মনোযোগের ঘাটতি ছিল, তাদের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে।”
রিটের আবেদনকারী দলের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য হয়েছেন এবং আইনজীবীর কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। পাটওয়ারী উল্লেখ করেন, “যাদের নাম রিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা আমাদের কাছে একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—কীভাবে তাদের নাম সেখানে এসেছে।” এটি বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়নি, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
গত রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি আরও আলোচনা করবে কীভাবে একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রিটটি করা যায়। পাটওয়ারী বলেছেন, “আমরা চাই, যাতে এ ধরনের রিটের খারিজ হওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে আমরা না পড়ি।”
এদিকে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে পাটওয়ারী বলেন, “ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি আমাদের কাছে উদ্বেগজনক। এখানে একটি তদন্ত কমিশন বা গণকমিশনের মাধ্যমে সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।” তিনি জানান, এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবিগুলো তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।
বৈঠকের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, “আমরা মনে করি, এই রিট বাংলাদেশে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ও বাম আন্দোলনের প্রতি একটি আঘাত। সকলকে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে।”
এখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা দেখছেন, এই বিতর্কিত রিট আবেদন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিভাবে প্রভাব ফেলবে এবং বিভিন্ন দলের মধ্যে সম্পর্ককে কিভাবে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে। দলের ভেতরে আলোচনা ও সমন্বয়ের অভাবের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই মুহূর্তে সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।