কেমন আছেন সবাই?
আজ আমি আপনাদেরকে এমন কিছু মুভির রিভিউ দিয়ে জানাবো, যে মুভিগুলো আপনার মন কেড়ে নিবে অবশ্যই।
আমরা অনেকে অনেক জেনর বা অনেক ধরনের মুভি দেখে থাকি। ঢালিউড, বলিউড, হলিউড, কলিউড সহ কোরিয়ান, চাইনিজ, জাপানি, তুর্কী -সহ অনেক মুভি ইন্ডাস্ট্রির মুভিই আমরা দেখি।রোমান্টিক, ড্রামা, হরর, থ্রিলার, মিস্ট্রি, কমেডি,সাইন্স ফিকশন এবং আরও অনেক জেনরের মুভি আছে। প্রতিটি জেনর বা ধরণের মুভিই আলাদা আলাদা উপভোগ্য অনুভূতি দিয়ে থাকে।কোনো মুভি ভালো অনুভূতি, কোনোটা খারাপ আবার কোনোটা মোটামুটি উপভোগ্য হয়। আজ আমি আপনাদেরকে এমন কয়েকটি মুভি সম্পর্কে জানাবো, যে মুভিগুলো অবশ্যই আপনাকে ভালো অনুভূতি দিবে এবং এই মুভিগুলো দেখলে আপনার মনে হবে না যে, আপনার সময় অপচয় হলো। এখানে কিছু মুভির নাম দিচ্ছিঃ
১. দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন(The Shawshank Redemption)
২. প্যারাসাইট(Parasite)
৩. মিরাকল ইন সেল নং ৭(Miracle In Cell No. 7)
৪. থ্রি ইডিয়টস(3 Idiots)
৫. রাতসাসান(Ratsasan)
৬. লাইফ ইজ বিউটিফুল(Life is Beautiful)
৭. মাই ওয়ে(My Way)
চলুন এখন এই মুভিগুলো সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি-
১. দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশনঃ
অনেকের মতে সর্বকালের সেরা মুভির তালিকায় এই মুভিটি প্রথম স্থানপ্রাপ্ত। “আইএমডিবি-২৫০”- এর তালিকায় এর অবস্থান সবার উপরে। টম রবিনস্ ও মরগান ফ্রিম্যান এর অভিনয় প্রশংসার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্যই সেরা একটি মুভি। নিজের স্ত্রী ও ভালোবাসার মানুষকে হত্যার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া এক আসামী কীভাবে নিজেকে মুক্ত করতে পারে তা মুভিটি দেখা শেষ করে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। জেল থেকে পালিয়ে গিয়ে সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেল কিন্তু কেউ টের পেলো না তার অবস্থান। যাবজ্জীবন সাজাও তাকে ভোগ করতে হলো না! আরেকটা বিষয় আপনি পাবেন এই মুভিতে। সেটা হচ্ছে বন্ধুত্ব। জীবনে কিছু বন্ধু আসে যাদের সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন।সেই কিছু মানুষদের জন্যই বন্ধুত্ব আজও মধুর। এই মুভি দেখার পর আপনি হয়তো নিজের বন্দী জীবন থেকে মুক্তির কল্পনাতেও ডুবে যেতে পারেন। জীবনকে উপভোগের এক বার্তা পেয়ে যাবেন এই মুভিতে
২. প্যারাসাইটঃ
ইংরেজি ” প্যারাসাইট”(Parasite) শব্দের অর্থ হলো “পরজীবি”। যারা অন্যের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত করে তাদের পরজীবি বলা হয়। এই মুভিটাতে তাহলে কেমন পরজীবির কথা বলা হয়েছে? হ্যা, এই মুভিতে এমন এক পরজীবি সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা হচ্ছে মানুষ। নিম্নশ্রেণীর মানুষ কীভাবে এক উঁচুশ্রেণীর মানুষের উপর নির্ভর করে সুখের স্বপ্ন দেখে সেরকম একটা বিষয় এই মুভিতে দেখানো হয়েছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি মুভি। গত ৯২-তম একাডেমি এওয়ার্ড বা অস্কার জয়ী এই মুভিটি প্রথম এশিয়ান কোনো মুভি যা একাধিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নেয় অস্কারের আসরে। নোংরা বস্তিতে যাদের বাস, তারা স্বপ্ন দেখে বড়লোক হওয়ার। বিনা পরিশ্রমে বড়লোক হওয়ার নেশা পেয়ে যায় এক পরিবারের। তারা তাদের চেয়ে বড়লোক, ধনীদের আশ্রয়ে থেকে নিজেরা বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন শেষে ঐ লোভী পরিবার ও এক বড়লোক পরিবারের জন্য বিপদ হয়ে আসে। ” লোভে পাপ, পাপে ক্ষতি”- এই কথাটার এক প্রমাণ পাবেন এই মুভিতে।
৩. মিরাকল ইন সেল নং-৭ঃ
আপনি কোরিয়ান মুভি দেখবেন আর আপনি আবেগে ডুব দিবেন না! এমনটা হওয়ার কথা না। বাবা-মা সন্তানের জন্য কী-ই বা না করতে পারে বলুন? সন্তানের জন্য বাবা-মা অনেক অসম্ভব কিছু সম্ভব করে ফেলতে পারে। এই মুভিতে এক মাসসিক ভারসাম্যহীন এক লোক তার ছোট বাচ্চা মেয়েটার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেয়। একটি স্কুল ব্যাগ কেনাকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় বাবা ও ছোট্ট মেয়েটার জীবনের চরম দুঃখজনক এক ঘটনা। কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বাবা তার সেলে( জেলখানার একই কক্ষে) থাকা বন্ধুদের সহায়তায় নিজের ছোট্ট মেয়েটাকে কীভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এনে নিজের সেলের মধ্যে মেয়েকে রাখে তা যেমন বিনোদন দিবে আপনাকে, তেমনি মৃত্যু দণ্ডাদেশ পাওয়া বাবার সাথে শেষ দেখা হওয়ার মুহুর্ত টা আপনার চোখে পানি এনে দিবে।
৪. থ্রি ইডিয়টসঃ
বন্ধু থাকলে সব সম্ভব। এই মুভিটিভারতের বলিউড ইন্ডাস্ট্রির এক সেরা কাজ বললে ভুল হবে না। তিনটি ভিন্ন পরিবারের তিনটি ছেলে কীভাবে বন্ধুত্বের বাঁধনে জড়িয়ে যায় এবং কীভাবে তারা তাদের কলেজ জীবন পার করে তা আপনাকে বিনোদন দেওয়াড পাশাপাশি আপনার শিক্ষাজীবনে বন্ধু দের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলোও স্মরণ করিয়ে দিবে। ভালোবাসা ও বন্ধুত্বকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি নিজপর প্রিয়, নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড দের সফলতার জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মতো বন্ধু ক’জন আছে? খুব কমই আছে তেমন বন্ধু। বন্ধুত্বের সুন্দর একটা গল্প নিয়ে তৈরি মুভিটি আপনাকে এক মুহুর্তও বিরক্তি বোধ করাবে না।
৫. রাতসাসানঃ
দক্ষিণ ভারতের মুভি ইন্ডাস্ট্রি গুলোর তুলনা তারা নিজেরাই। তামিল ইন্ডাস্ট্রির এই মুভিটি সব বয়সী দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। এক ” সাইকো সিরিয়াল কিলার ” নিয়ে তৈরি এই মুভিটি আপনাকে ভয় ধরিয়ে দিবে। এক সিরিয়াল কিলার বের হয়েছে, যে স্কুলের উঠতি বয়সী মেয়ে ও বাচ্চাদের অপহরণ করে নিয়ে নৃশংসভাবে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করে। প্রতিটি মেয়েকে অপহরণ করার সময় ঐ মেয়ের বাসস্থানের আশেপাশে এক উপহারের বাক্স রেখে যায় ঐ অপহরণকারী। সেই বাক্সে থাকে ভয়ংকর এক উপহার। সেই অপহরণকারী খুনিকে ধরতে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় পুলিশকে। যখন এক পুলিশের নিজের মেয়ে,নিজের আপন কাউকেই অপহরণ করে খুন করে ফেলা হয়, তখন কী হতে পারে তা মুভি দেখলেই বুঝতে পারবেন। হরমোনের সমস্যার কারণে অপদস্ত, হেয় হতে হতে একটা মানুষ ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠা ও সেই জীবনের শেষ হওয়ার গল্পের মুভিটি আপনাকে আশাহত করবে না।
৬. লাইফ ইজ বিউটিফুলঃ
বাবারা সন্তানের জন্য কতকিছু করতে পারে তার উদাহরণ এই ইতালিয়ান মুভিটি। হাসিখুশি জীবনযাপন করা এক লোক তার নিজের অবুঝ ছোট ছেলেটার জীবন বাঁচিয়ে দিয়ে নিজের জীবনকে কীভাবে হাসিখুশি ভাবেই বিসর্জন দিয়ে যায় সেই মুহুর্ত টা আপনাকে আবেগে ভাসিয়ে দিবে। ছোট ছেলেটা বুঝতেই পারলো না যে, ওর বাবা ওর জন্য কী করে রেখে গেল নিজের জীবনের বিনিময়ে। ইহুদি ও নাজি জার্মানির বিদ্রোহের কাহিনী কে কেন্দ্র করে সন্তানের প্রতি বাবার নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার গল্পের এই মুভিটিও আশাহত করবে না।
৭. মাই ওয়েঃ
দক্ষিণ কোরিয়ার এই মুভিটি দেখা শেষ করে আপনি আবেগে ডুবে যাবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কে কেন্দ্র করে “ওয়্যার” বা যুদ্ধ বিষয়ক জেনরের এই মুভিতে আপনি দেখতে পাবেন বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা, অকৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্বের সমাহার।জাপানি ও কোরিয়ান দুই দেশের দুই ছেলেকে নিয়ে দারুণ এক কাজ উপহার দিয়েছেন পরিচালক।একটা খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে জাপানি ও কোরিয়ান ঐ দুই তরুণ এর ভুল বুঝাবুঝি শুরু হয়। সেরা দৌড়বিদ হওয়ার লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। যে লোকটাকে আগে থেকেই ঘৃণা করতো, নানাভাবে ঐ লোকটাকে শাস্তি দিতো, সবসময় প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রাখতো মনের ভিতর, সেই লোকটাই তাকে উদ্ধার করে অনেক বিপদ থেকে। সেই লোকটাই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে যুদ্ধ শেষ করে একসাথে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার, সেই লোকটাই নিজের জীবন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখে যায় সেরা দৌড়বিদ হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে।একটা মানুষ, যাকে আপনি এত ঘৃণা করতেন, ভুল বুঝতেন, নানাভাবে কষ্ট দিয়েছেন তাকে, কখনোই তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন নি, পরে যখন ঐ লোকটাই আপনাকে বাঁচিয়ে দেয় নিজের জীবনের বিনিময়ে তখন কেমন লাগবে আপনার? বুক ভেঙে হাহাকার করে উঠবেন না?চিৎকার করে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে ক্ষমা চাইবেন না? মুভিতে জাপানি ঐ যুবক টা তা-ই করে।যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে সে তাকে বাঁচিয়ে রেখে যাওয়ার লোকটার স্বপ্ন পূরণ করে সারাজীবন নিজের ভুলগুলোর প্রায়শ্চিত্ত করে যায়।
আজ এই পর্যন্তই। এই ৭ টি মুভি দেখে কখনোই আপনার খারাপ লাগবে না। আপনাকে আবেগে ভাসাবে, মন খুলে হাসাবে, মনকে শক্ত করাবে এমন মুভিগুলোর তালিকা করতে গেলে এই মুভিগুলো অবশ্যই থাকবে।
সবাইকে ধন্যবাদ