একটি ছাত্রের জীবনে অটোপাশ নামক অভিশপ্ত কালোদাগ।

আসসালামু আলাইকুম।জীর্ণশীর্ণ স্থানে বেড়ে ওঠে জুনায়েদ। সে মা বাবার খুব আদরের। তার ছোট বোনের নাম আন্জুমান।তাদের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো না।বাবা বিভিন্ন কারখানায় দিনমজুরিতে কাজ করে।মা তার অন্যের বাসায় চাকরানী।

ছোট বোনটিকে দেখাশোনা করে সে।তার বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাএী।জুনায়েদ লেখাপড়ায় খুব ভালো।বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।সে SSC পরীক্ষায় GPA-5 এবং JSC পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে।SSC পরীক্ষার পর তিন মাস ছুটি। পরিবারের অর্ধেক হাল ধরতে চায় জুনায়েদ। বিকেলে কাঁদোকাঁদো ভাবে মায়ের কাছে গিয়ে বলল,’মা তোমায় আর কাজ করতে হবে না।তুমি বোনটির দেখাশোনা করবা’।খুব সহজেই একটি বেসরকারি কোম্পানিতে মালামাল হিসেবের দায়িত্ব পেল।ছেলের চাকরি পাওয়ায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা অনেকটা স্বচ্ছল হয়ে ওঠে। হঠাৎ একটি ঝড় নেমে আসে পৃথিবীজুড়ে।

যার নাম COVID-19 ।সরকার LOCK DOWN নামের অবরুদ্ধকরণ বিধিনিষেধ জারি করে।স্কুল-কলেজসহ সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকার ছুটির ঘোষণা করে।LOCK DOWN এ জুনায়েদ এখন বাসায় থাকে।মা সতর্কতা মেনে আবার অন্যের বাসায় কাজ শুরু করে।বাবাও এখন বাসায় থাকে।তাদের ঘরের পিছনে একটু খালি জায়গা আছে।সেখানে জুনায়েদ আর তার বাবা সবজির গাছ লাগায়।অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করে ভালো কলেজে Chance পায়।এদিকে LOCK DOWN এ সব বন্ধ।

এখন সাল ২০২১।এবছর যাদের HSC পরীক্ষা দেবার কথা, করোনা মহামারীর কারণে পরীক্ষা তাদের বাতিল করে শিক্ষামন্ত্রী Autopass নামের অভিশপ্ত শব্দটি ব্যক্ত করে।HSC পরীক্ষার্থীরা আনন্দের জোয়ারে ভেসে পড়ে। যে ছাত্র মাসেএকবারও কলেজের গেটে পা দেয়নি সেও A+ এর যোগ্য অটোপাশের খাতায়। কারণ তার পূর্বের পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো।আবার যারা পূর্বের রেজাল্ট খারাপ করে মনোউদ্যোগ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া লেখাপড়া করেছিল পরবর্তী HSC পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করে মা বাবার মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য, তারা এই অভিশপ্ত অটোপাশের কারণে রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মা বাবার সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।

আত্মীয় আর সমাজের নানা কথা শুনতে হয়।তারা নাকি এখন পরিবারের বোঁঝা।জুনায়েদ তাা এক ভাইকে বলল,’ভাই,আমিও যদি অটোপাশ পেতাম।তাহলে সত্যিই জীবনে আর কোনো বাঁধা থাকত না’।বড় ভাই তখন বলল আমি তোমাকে একটি গল্প বলি,’একটি ছেলে Golden-A+ পেয়েছে অটোপাশের জন্য।সে খুব ভালো একজন ছাত্র।অনার্সের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন নিজের কলেজেই করে।তার আবেদনটাই বাতিল করে দেওয়া হয় অটোপাশভুক্ত রেজাল্টের জন্য।

এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।একদিন রাতে সে না ঘুমিয়ে হতাশায় আর অভিশপ্ত অটোপাশের কারণে ধুমপান শুরু করে। রাত বাজে তখন ২ টা।বাইরে কুকুর ডাকছে।তার মার ঘুম ভেঙে যায়। তখন মা পানি খেতে এসে দেখে তার ছেলের ঘরের দরজাটা খোলা।ঘরের ভিতর ঢুকতেই মা চিৎকার করে।বাবা ঘরে এসে দেখে মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।তাদের সোনার টুকরাটির হাতে বিষের শিসি,মুখে সবানের ফেনার মতো গেঁজা। পরদিন ৯ টায় তাকে কবরস্থ করা হয়।সেই ছেলেটি আমার ছোটবেলার বন্ধু শাওন’।

বড় ভাইয়ের কথা শুনে জুনায়েদের অভিশপ্ত অটোপাশের আশা ঘুচে যায়।জুনায়েদের এখন একটাই দাবি কেউ যেন কোনদিন অটোপাশ শব্দটি ব্যক্ত না করে।এই অটোপাশের কারণে লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেছে।আমাদের রাষ্ট্রে সবকিছু চলছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া। কতদিন বন্ধ থাকবে এটি।যাবে কি কোনদিন করোনা ভাইরাস।নাকি জ্বর,সর্দিকাশির মতো আমাদের মাঝে বিরাজমান থাকবে।কেমন লাগল গল্পটি এবং আপনাদের পছন্দের কোন বিষয় থাকলে Comment এ জানান।আমরা আপনার পছন্দের বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই ফিরে আসব।আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন