Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

কাছের মানুষের আঘাত, তীরবিদ্ধ আহত মানুষের চেয়েও বড় আঘাত!

২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি। দিনটা ইংরেজি নববর্ষ বা হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে সকলেই জানি। এদিন সকলেই হাসিখুশিতেই থাকে। আমিও ছিলাম হাসিখুশিতে। অনেক আনন্দ করব ভেবেছিলাম। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরে নানুর বাসায় অনেকে মিলে আমরা পিকনিক করেছিলাম। পরের দিন ১লা জানুয়ারিতে আরও একটা পিকনিক ছিল। আমি যেখানে প্রাইভেট পড়ি, সেই প্রাইভেটের ভাইয়া আমাদের পিকনিক খাওয়াইতে চেয়েছিলেন। আমি তাই খুব এক্সাইটেড ছিলাম।

সকালেই ঘুম থেকে উঠে নানুর বাসায় ভাপা পিঠা খেয়ে সরাসরি আমি ওই ভাইয়ের প্রাইভেট সেন্টারে চলে যাই। তখন ১১টা বেজেছিল মনে হয়। আমি যখন গেলাম সেখানে, তখন ভাইয়া ভাত খাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে ভাত খাইতে বললেন। কিন্তু আমি বললাম আমার খাওয়া হয়েছে। এরপর সবাই মিলে কাজে লেগে গেলাম।

কেউ ডিম আনতে গেলো তো কেউ বেগুন আনতে গেলো। সব আনা হয়ে গেলে ম্যাচের একজন বেগুন কাটতে বসে পড়ল। বেগুনি করার জন্য বেগুনগুলোকে স্লাইস আকারে কাটতে লাগলো। আমরা কয়জন মিলে ডিম ভাঙতে লাগলাম। ভাইয়া প্রথমে বেগুন ভাজা করল। তারপর ডিম ভাজা শুরু হলো। ইতোমধ্যে দেখি আমার পকেটে কে একজন একটা বিস্কুটের প্যাকেট ঢুকিয়ে দিল। পাশেই তাকাতে দেখি আমার এক বন্ধু। আমি বললাম এটা কীসের জন্য? প্রত্যুতরে সে আমাকে বলল ভাইয়া এটা নাকি আমাকে দিতে বলেছে।

মনে পড়ল আসা অব্দি আমি এখানে কিছুই খাইনি। ভাইয়া এই বিষয়টা লক্ষ্য করে কি আমার জন্য বিস্কুট কিনল? আমার তখন অনেক আনন্দ ফিল হচ্ছিল। সবার সাথে তখন আমি বিস্কুট ভাগ করে খেলাম। পিকনিক হবে খিচুড়ি আর মাংস দিয়ে। ওগুলো ভাইয়া বাইরে থেকে অর্ডার করে নিয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার আগে ভাইয়ার মাথা ব্যাথা করতেছিল বলে আমি আর আমার আরেক বন্ধু মিলে ভাইয়ার জন্য একটা ঔষধ কিনতে যাই।

এখানেই ঘটে আমার জীবনের এক কালো অধ্যায়। আমি যে বন্ধুকে ক্লোস ফ্রেইন্ড হিসেবে মনে করতাম, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডের সমতুল্য মনে করতাম, তাকে সেদিন ভালোমতো চিনতে পারি। ক্ষমতার লোভে, সম্মান পাওয়ার লোভে কেউ যে এত নিচু কাজ করতে পারে, তা আমি বাস্তবে কোনোদিন দেখি নি। কিন্তু তাকে দেখে বুঝতে পেরেছি, পৃথিবীটা আসলেই স্বার্থপর। আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডকে ভুল বুঝিয়ে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সে। আমাদের বইস স্কুলে আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডের জুড়ি মেলা ছিল ভার। সেই বেস্ট ফ্রেইন্ড এখন এদেশে আর নেই। আমেরিকাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার এক মিশনে চলে গেছে। জানি না সে কেমন আছে!

ওই ক্লোস ফ্রেইন্ডকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডের মতোই মনে করতাম। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আমি তাকে অন্ধবিশ্বাস করেছি। আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডকে যে সেই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে এটা জানতামই না। আমি অনেকদিন ধরে সেই কালপ্রিটটাকে খুঁজতেছিলাম,যে আমার বেস্ট ফ্রেইন্ডকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। সেই কালপ্রিটটা যে আমারই ক্লোস ফ্রেইন্ড, সেটা আমি বুঝতেই পারিনি?

আজ সেটা জানতে পেরেছি এবং স্বচক্ষে দেখেছি সব। নিজেকে খুব অসহায় ফিল হতে শুরু করেছে। ঘামতেছি আমি। কী করবো, ভেবে পাচ্ছি না। থর থর করে শরীর কাপছে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা হচ্ছে। পিকনিক কোনোমতো শেষ করে বাসায় ফিরে আসি। আসার আগেই পথে অবশ্য মাথা ঘুরে পড়ে যাই। কলেজের এক বন্ধু আমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।

আমি মনে হয় বাঁচব না, এমন ফিল হতে শুরু করে। সেই আঘাতে আমার প্রায় ১০২ ডিগ্রি জ্বর চলে এসেছে। মাথা কাজ করছে না। মেসেঞ্জারে কাকে যে কী মেসেজ করছি, বুঝতে পারছি না।

ওইদিন খুব ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম আমি। নাম বলব না, আমার একজন বন্ধু আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয়। কেন জানি না তার সান্ত্বনা, তার উপদেশগুলো আমার মধ্যে উৎসাহ এনে দেয়। তার কথাগুলো আমাকে ডিপ্রেশন থেকে অনেকটাই ফ্রি করে দেয়। বুঝতে পারি না, কেন তার কথাগুলো আমার ভালো লাগতে শুরু করে। হয়তো আমি বুঝতে পারি নি, সেই হয়তো আমার প্রকৃত বন্ধু। তাই তার কথাগুলো আমার ভালো লাগতেছে। হয়তো আগে বুঝতে পারি নি “কে আপন কে পর?” আজ হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছি।

আমার ক্লোস ফ্রেইন্ডের দরকার নেই। আমাকে বিপদের দিনে যে উৎসাহ দিয়ে বিপদ কাটিয়ে দিতে আমাকে সাহায্য করবে, এমন একজন ভালো বন্ধু আমার দরকার। হয়তো এই আঘাতের মধ্য দিয়েই আমি তাকে খুঁজে পেলাম, যে আমার ভালো বন্ধু হবে।

কিন্তু একটা ভয় থেকেই যায়, আমার সদ্য খুঁজে পাওয়া এই নতুন বন্ধুটিও যদি সেই বিশ্বাসঘাতকের মতো করে! সেটা আমি সইতে পারব না।
কারণ, কাছের মানুষের আঘাত, তীরবিদ্ধ আহত মানুষের চেয়েও বড় আঘাত!

Related Posts

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No