যে প্রাণের ভিতর আবেগ আছে সে প্রাণীরাই কাঁদে। কোন কান্না সাদা, আবার কোন কান্নার কোন রং নেই, সে কান্নার ভিতর লুকিয়ে থাকে হাজারো লক্ষ কোটি কোটি অনুভূতি মিশ্রিত আবেগ। সে কান্না দেখা যায় না। সে কান্নার রঙ লুকিয়ে থাকে আবেগে। জানি কথাগুলোর কোনো দাম নেই, কারণ আবেগ দিয়ে কারো জীবন চলেনা। তবে একথা সত্য আবেগ ছাড়া ভালোবাসার পূর্ণতা কখনো বোঝা যায় না। আবেগি মানুষকে দেখা যায় না বিষয়টা শুধু অনুভব এর। এরা মানুষের ভেতরে অন্য এক মানুষ। সবাই এদের চিনতে পারে না। এরা অদৃশ্য কান্নার মাঝে সময় গুলো কাটিয়ে নিজের জীবনের শেষ দিকে চলে যায়। ;;;;;
শুরুটা হয়েছিল কিছু বছর আগে। সাগরের বয়স তখন খুব বেশি নয়। সবেমাত্র কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি। নতুন শহরে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় ,জীবনকে নিয়ে যায় নতুন এক অভিজ্ঞতায়। খুব ভালোই চলছিল দিনকাল। বাড়ি থেকে কোন পিছুটান ছিল না সাগরের। বড় আদরের মধ্যবিত্তের ঘরের মধ্যবিত্ত একটি ছেলে ছিল একথা বলাই যায়।স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবদের ছেড়ে নতুন শহরে প্রথম কিছুদিন খুব একটা ভাল লাগত না। বড় একা একা লাগতো। ছাত্র জীবনটা বোধহয় এমনই হয় প্রথম প্রথম। আস্তে আস্তে জুটে যায় জীবনের সবচেয়ে উত্তম কিছু সময়, যা শৈশবের সীমানাটা ছাড়িয়ে কৈশোর থেকে যুবককে পরিণত করে। সাগরের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
মেসের জীবন বোধহয় এমনই হয়। আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করল তার। জুটে গেল কৈশরের বেরোনো কিছু সমবয়সি বন্ধুত্ব। তবে সেই বন্ধুত্ব গুলো কখনো সীমা ছাড়িয়ে যায় নি। বন্ধু তো অনেকেই হয় তবে তার ভেতর একটা ব্যাপার থাকে না, হয়তো কোনো একজন খুব বেশি আপন হয়ে ওঠে। সম্ভবত আমরা তাকেই বলি বেস্ট ফ্রেন্ড। রাশেদ , ঠিক তেমনি একটি ছেলে। রংপুরে বাড়ি, তবে খুব মিশুক।হুগলি খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল রাশেদের সাথে। সাগর এখন বলতে গেলে সেটেল।আরে কদিন এসে শহর টাকে খুব ভালোভাবে চিনে ফেলেছে। শহর তো শহরেই 11 শহরের 11 নাম। নামটা নাহয় না-ই লিখলাম। তবে আমার আমাদের দেশের শহর গুলো এক অদ্ভুত সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মানচিত্রের মাঝে।
কোনটা ছোট, আবার কোনোটা বেশ বড়। তবে রাশেদ ,সাগর যে শহরে এসেছে সে শহরটা বোধহয় তাদের স্বপ্নের চেয়ে বড়। ঘুরাঘুরি করতেই অনেকদিন কেটে গেল। আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে মানুষের যে সম্পর্ক হয় ঠিক সেরকম সম্পর্ক হয়ে গেল। এখন আর নিজেকে একা মনে হয়না। মনে হয় না সে শহরে নতুন। সাগর যে বাসাতে থাকে বাশাটি একতলা। ছাদে ওঠা যায়, বাড়িওয়ালার কোন নিষেধ থাকে না। বলতে গেলে এরকম বাড়িওয়ালার শহরে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। সাগর দের মত মানুষের হয়তো ভাগ্য ভালো এরকম একটি ভাল _বাসা’ তারা খুঁজে পেয়েছে। কখনো বিকেল, কখনো বাবার সন্ধ্যাবেলা, কখনো মাঝ রাত্রিতে, সবাই মিলে একসাথে চাঁদ দেখেছি অনেকবার। আসলে ছাদে উঠে চাঁদ দেখার মজাটাই আলাদা। যদিও খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এর মুল্য অতি সামান্য। বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবুও কিছুটা বিলাসিতা মানুষকে তার মনের ক্ষুধা মিটিয়ে দেয়। হয়তো বয়সটা ছাদে ওঠার ছিল না, তবুও এ বয়সে তো মানুষ অনেক কিছুই করে। সাগরত একজন মানুষ,সবাই যদি করে তাহলে সে করলে দোষটা কোথায়।
কোন একদিন বিকেলবেলা, আজ কাছের বন্ধুগুলো নেই। সাগর ছাদের উপরে উঠলো। আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে সাগরদের বাসায় একটা ছোট। আশে পাশের বাড়ির গুলোর দিকে তাকালে চোখের একটু পরিশ্রম হয়। তবুও মানুষের এই চোখ দুটো এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না, ছুটে বেড়াতে চায়, হতে পারে সেটা অবচেতন মনে, হতে পারে সেটা অসাবধানতায়। সাগরের ও চোখ পড়েছিল সেরকম ঠিক বাম দিকের দোতালা বাসাটায়। স্পেশালি কোন কিছু ছিল না, তবে ভাবনার গভীরতা অতোটা পরিপক্ক না সাগর। সবকিছুকে খুব সহজভাবে দেখার বয়সে গভীরভাবে ভাবনা সময় কোথায়। চোখ দুটো দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে অন্য চোখের মাঝে স্থির হয়ে যায়। হয়তো সে চোখ দুটিও স্থির হয়ে আছে দৃষ্টির একই কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে সাগরের দোষ কোথায়। অন্য কেউ হলে কি করত সেটা যেমন বোঝা যায় না। গল্পটাতো সাগরের। প্রথমদিন তেমন কোনো কিছুই হলো না দৃষ্টির মাঝি গল্পের সীমাবদ্ধতা চলে এলো।
তবে এ দৃষ্টিটা অন্যসব দৃষ্টি থেকে একটু আলাদা। একটু বেশি আলাদা। এই দৃষ্টিতে পিছু টানে না, সামনের দিকে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। সেও তার ব্যতিক্রম নয়। একদিন দুদিন কতদিন দৃষ্টির সীমানায় দৃষ্টি আটকে ছিল সেটা সংখ্যায় বলা বড় মুশকিল। কিছু দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর দৃষ্টির সীমানা থাকে তারা অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল। এখন সাগর ঘনঘন ছাদে যায়। শীতে কি কারনে যায় তা সে শুধু নিজেই জানে। কিছু কিছু কথা থাকে বলতে বাধ্য হতে হয়। কিছু কিছু ব্যথা থাকে সে ব্যথা আসলে ব্যথা নয়। সাগর তার প্রিয় বন্ধুর কাছে সবকিছুই অকপটে স্বীকার করে নিল। তবে বাধার চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা টাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করছিল তাকে। উৎসাহটা এক বিন্দু থেকে হাজারো বিন্দুতে ছড়িয়ে পড়ল। একদিন চোখের দৃষ্টির ইশারা ঠোঁটের কিনারায় চলে এলো। এখন এখন শুধু দৃষ্টি নয় কিছু বাক্যবিনিময় আরো কাছে যাবার সুযোগ সৃষ্টি করে দিল। আস্তে আস্তে পরিচয় ঘটে গেল। এখন তারা নিয়মিতই কথা বলে, সে কথা অতি গোপনে, সে কথা বাক্যবিনিময়ের ইশারায়, সেকথা অনব এক্ত হৃদয়ের ব্যাকুলতাই কিছু মিষ্টি ভেজা আবেগ দিয়ে লেখা।
শুরু হলো নতুন এক গল্প,,, যে গল্প কখনো শেষ হবার নয়। যে গল্পে হাজারো সাগরের মত ব্যাকুলতা ভরা জীবন আবেগভরা কথা বলে। সময়টা ঠিক কি ছিল সেসব বলার বাহুল্যতা আমি অবহেলায় ছেড়ে দিচ্ছি। মজাটা ঠিক এখনই শুরু হল,,,
রিয়া,,, ফর্সা টাইপের চেহারা হলেও আজ চেহারাটা অনেক রক্তিম। কারণটা অন্য কিছু নয়। দুদিন হল কোন যোগাযোগ হয় না দুজনার। সাগরের ফোনটা বন্ধ। দুদিন থেকে বন্ধ। যে ছেলেটা প্রতি মিনিটে মিনিটে তার খবর নিত সেই ছেলেটা দুদিন থেকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। তাহলে বোঝা গেল রিয়ার রাগ করাটা খুব স্বাভাবিক। এমনিতেই ফর্সা সে, তবে রাগলে সে লাল হয়ে যায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর নির্দিষ্ট স্থানে দেখা না হয়ে দেখা না করে, সে বাসায় চলে এল। বাসায় এসে তার শান্তি নেই। মা ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিলেন, কই ছিলি, এত দেরি হল কেন, নানান সব প্রশ্নের জালে সে জড়িয়ে পরল। তবে বিধিনিষেধের এই বেড়াজাল সে অনেক আগেই অতিক্রম করে ফেলেছে। এখন আর এসব পাত্তা পাত্তা না দিলেও হয়। তার মা ও বুঝতে পেরেছিল এখন সে বড় হয়ে গেছে। রিয়ার কোন ভাই নেই।
তার একটি মাত্র বোন আছে, তবে সে এখনো অনেক ছোট। বাবা-মার দুটি মাত্র মেয়ে। তবে ওরা বেশ আদরের। হয়তো অতি আদরে কিছু ভালোবাসার কমতি ছিল। হয়তো তারই সন্ধানে সে অপেক্ষায় থাকত।
রিয়ার ফোনে রাত 11 টার পরে ফোন এল। সাগর ফোন করেছে। কয়েকবার ভেবেছিল রিসিভ করবে না। কিন্তু মনের দাবির কাছে অভিমানের দাবিটা বড়ই কম দামি। শেষমেষ কথা বলতেই হল। কথা বলে বোঝা গেল, কোন এক সমস্যার কারণে সে দেশের বাড়ি গিয়েছিল। সেখান থেকে তার সাথে যোগাযোগ করার ইচ্ছে থাকলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হয়নি। সাগরের দোষ ছিল এতটুকই। তারপরও অনেক কথা হলো একটা সময় সে অবশ্য রিয়া রাগ ভাঙ্গাতে পেরেছিল। এ ক’দিনে তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল । একজন একজনকে ছাড়া কখনো দিন অতিক্রম করতে পারাটা বোধহয় খুব কঠিন ছিল। আসলে ওর মধ্যে পেয়ে স্পেশালিটি ব্যাপার ছিল। অন্য কোন মানুষের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না। হতে পারে সাগর সেটা খুঁজে পায়নি।’ হিয়ার ‘মাঝে সে রিয়াকে খুঁজে পেয়েছিল।
ওর সবচাইতে বড় যে ব্যাপারটা ছিল সেটা ছিল ও সাগরকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারত। সাগর ঠিক তেমনি রিয়াকে পুরোপুরি মনের মাঝে গেথে নিয়েছিল। এ যেন বিধাতার যেন বিধাতার দেওয়া, সবচেয়ে বড় আবেগ নামের যে জিনিসটা তারি মূল উপাদান। সাগর যেমন চেয়েছিল রিয়া থিক তেমনি মেয়ে ছিল। তবে সে ভালোবাসা কখনো শেষ সীমানা অতিক্রম করেনি। সাগরের কাছে তা ছিল অতি যত্নে গড়া কাঁচের পুতুল এর মত। মনে হতো আঘাত করলে ভেঙে যাবে। তাই সে কখনও কোনো আঘাত রিয়াকে দিতে চায়নি। ভালোই চলছিল দুজনের দিনকাল। কি থেকে কি হয়ে গেল তারা তারা নিজেরাও বুঝতে পারল না। তারা লিখে চলছে কাব্য, কবিতার গান, রাজসাক্ষী করেছিল ঘোড়াশালের সবচেয়ে বড় স্লোগান। তবে তারা জানতো একদিন হয়তো বড় কোনো বিপদ তাদের মাঝে আসতে পারে। তবে আবেগি মন শোনে না কোন বারন শোনে শুধু মনের কথা। এগিয়ে চলছিল জীবন। জীবনকে তখন মনে হতো সবচেয়ে বেশি সুখী। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হতো হাজার বছর। জীবনকে বিধাতার দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার হিসেবে মনে হয়।কিন্তু সে জীবনে কখনো ভাব নাই আসেনি যে জীবনকে নিয়ে এত গর্ব সেই গর্ব একদিন বিপরীত কোন ব্যাকরণ এর দিকে চলে না যায়। গল্পটা শেষ হয়নি এখনো।
দু’বছর পরের কথা,,, রিয়া ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ফেলেছে। এখন সে ভাল কোন ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। রিয়ার এক মামা থাকে বিদেশে। একদিন রিয়ার মুখ থেকেই শুনতে পেল সাগর। রিয়ার সেই মামা নাকি রিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাবে। তবে রিয়া যেতে চাচ্ছেনা। বাড়ি থেকেও বাবা-মা কেমন একটা রাজি নয়। খবরটি শোনার পরে সাগরের ভালই লাগছিল। আসলে সে যেমনটা চেয়েছিল গল্পটা ঠিক সেরকমই এগোচ্ছিল। হয়তো ভাগ্য তখন পুরোপুরি তার কাছে ধরা দিয়েছিল। লেখাপড়াতে একটু অমনোযোগী হয়ে পরলো সাগর। রিয়া তখন নেশার মত। সবকিছু ছাড়া তার চলে। কিন্তু দিয়াকে ছাড়া সে কিছুই ভাবতে পারে না। ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে রিয়া হয়ে উঠল সাগরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের দুজনের এই মাখামাখির কথা এখন আর জীবনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। অনেক মানুষই তাদের এই পবিত্র সম্পর্কের মাঝে দেয়াল সৃষ্টি করতে দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু ওই যে বললাম ভাগ্য পুরোপুরি ধরা দিয়েছিল সাগরের ঠিক ডান হাতে। গল্পের শুরুটা ঠিক তখনই হয়েছিল। এখনো গল্পটা শেষ হয়নি। (পর্ব–২) অপেক্ষা করুন!।