আজকের পোস্টে আমরা একটা ভিন্ন ধরণের বিষয় নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। আল্লাহ সব জানে, আল্লাহ কখনোই আমাদের সাথে খারাপ কিছু করেনা তাই কিছু সম্পর্ক আল্লাহ নষ্ট করে দেন কেন ? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
আল্লাহ তায়ালা সব জানেন:
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি আল আ’লীম অর্থাৎ তিনি সর্বজ্ঞ। একজন ব্যক্তিকে মুমিন মুসলিম হতে হলে প্রথমেই তাকে নিশ্চই আল্লাহর উপর বিশ্বাস আনতে হবে অর্থাৎ আল্লাহ যে সর্বজ্ঞ বা সবকিছু জানেন এই বিষয়ের উপরও বিশ্বাস আনতে হবে। যে বিশ্বাস করবেনা সে প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারবে না। আল্লাহ আমরা কি করছি তা সবকিছুম আল্লাহ আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছুই জানে। আমরা কি কথা বলছি কি করছি ইত্যাদি সবকিছুই তিনি জানেন৷ আমরা যা প্রকাশ্যে করি তা সবকিছুই তিনি জানেন ও দেখেন।
কেবল কিন্তু প্রকাশ্যে করা কাজ নয় বরং আমরা গোপনে কি করি বা কি চিন্তা করি তাও তিনি জানেন।
এমনকি আমরা মনে মনে কি ভাবছি তাও আল্লাহ জানেন ও শোনেন।
আল্লাহ যে সবকিছু জানেন তা অনেকবার পবিত্র কুরআন মজিদে উল্লখ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি [রাসুল (সা.)] বললেন, আমার রব নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সব কথা সম্পর্কে অবগত এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৪)
তিনি আমরা কার সাথে গোপনে বা প্রকাশ্যে কি করি বা বলি তা সবই জানেন। তিনি আমাদের প্রতিটি কথাই শুনেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন,
‘তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না, যাতে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকেন না। তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।
অতঃপর তারা যা করে তা সম্পর্কে কিয়ামতের দিন তিনি জানাবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ৭)
তিনি আকাশ ও ভূমি এবং তাছাড়া এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সব সম্পর্কে অবগত।
তিনি ইরশাদ করেন, ‘তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে এবং যা কিছু তা থেকে বের হয় এবং আকাশ থেকে যা কিছু বর্ষিত হয়, আকাশে যা কিছু উত্থিত হয়।
তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে দ্রষ্টা।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ৪)
অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে তিনি অবহিত। আমরা যা দেখতে পাইনা বা শুনতে পাইনা তা তিনি দেখতে পান।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সব অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত এবং তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো ও গোপন করো সে সম্পর্কে আমি জানি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৩)
অর্থাৎ এই মহাবিশ্বের যা কিছুই হোক না কেন তা কিছুই তার অগোচর হয়না। তিনি সব দেখেন ও জানেন।
কিছু সম্পর্ক আল্লাহ নষ্ট করে দেন কেন ?
আগেও বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছুই জানেন। আমরা কি ভাবছি, আমরা কি করব এসব কিছুই তিনি জানেন। আমাদের কি করা উচিত বা আমাদের কি হবে বা আমাদের ভবিষ্যত কি তা সবচেয়ে ভালো জানেন তিনি।
আপনার কি করা ঠিক হবে তা আপনার থেকেও আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ভালো জানেন।
এখন মূল বিষয়ে আসা যাক যে আল্লাহ কেন কিছু সম্পর্ক বা বন্ধুত্বকে স্থায়ীত্ব দেয় না।
আসলে আমাদের জীবনে বেচেঁ থাকার জন্য বন্ধু প্রয়োজন৷ কেউই বন্ধু ছাড়া বাঁচতে পারেনা।
মহানবি হয়রত মুহাম্মদ (স.) এরও বাল্যকাল হতেই অনেক ভালো বন্ধু ছিল যাদের সাথে মহানবি (স.) এর ভালো সম্পর্ক ছিল।
কোনো সময় বন্ধুবিয়োগ হলে তিনি অশ্রুসিক্ত হতেন ও খুবই কষ্ট পেতেন।
বন্ধু আসলে কাকে বলে? বন্ধু বলতে আমরা বুঝি যারা আমাদেরকে বোঝে, যাদের সাথে কিছু সময় একসাথে ব্যয় করা যায়, যারা আনাদের দু:খ কষ্টে সহায়তা করে যারা সর্বদাই আমাদের পাশে থাকে।
ইসলাম আমাদের এমন ধরণের ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু সবসময় জীবনের সবক্ষেত্রে আমরা কিন্তু এমন বন্ধু পাইনা।
অনেক সময় আমরা এমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি যারা মোটেও আদর্শ একজন ব্যক্তি নয়।
যারা আপনার সাথে হিংসা করে, আপনার পিছে আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করে।
আপনার দোষ ত্রুটি নিয়ে হাসাহাসি করে, আপনার বলা কোনো গোপন কথা অন্যকে বলে দেয়।
শুধু এসবই না, অনেকক্ষেত্রে এসব ‘বন্ধু’ আপনাকে ধ্বংসের পথেও নিয়ে যেতে পারে।
চুরি বা ইফটিজিং করা শেখানো, সিগারেট-বিড়ি এমনকি মাদকদ্রব্য গ্রহণ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু ওসময় আমরা হুশ হারিয়ে ফেলি। আমাদের বিবেক কাজ করে না। আমরা বুঝতে পারিনা যে তারা আমাদের কি ভয়াবহ ক্ষতি করছে।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ঠিকই সব দেখেন ও বুঝেন এবং তিনি সবসময়ই আপনার মঙ্গল চাবে।
তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আল্লাহ কিছু কিছু বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়।
এতে কষ্ট না পেয়ে শুকুরিয়া আদায় করতে হবে। কারণ আল্লাহ যা করেছে তা ভুল করেনি।
আল্লাহ কখনোই আমাদের জন্য খারাপ কিছু করে না: কিছু সম্পর্ক আল্লাহ নষ্ট করে দেন কেন ?
আল্লাহ আমাদের রিজিকদাতা ও তিনি সর্বজ্ঞ। তার চেয়ে কেউ কোনো বিষয়ে ভালো জানে না। আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করে। ধরুন আপনার কাজ করে বাসায় আসতে আসতে একটু বেশি রাত হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিলেন একটা গলি দিয়ে শর্টকাট ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি বাসায় যাবেন।
কিন্তু পরে কোনো এক কারণে সিদ্ধান্ত পরিবির্তন করে অন্য জায়গা থেকে আসলেন।
পরে সকালে উঠে টেলিভিশনে দেখতে পেলেন যে ওই গলিতে সেরাতে দুইজনকে ছিনতাই করা হয়েছে।
তাহলে আপনার অজান্তেই আল্লাহ আপনাকে বাঁচালো। আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তই অর্থবহুল।
যদি আপনার খারাপ সময় যায় তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
আপনার যাই হোক না কেন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
আপনার যেখানে রিজিক লেখা আছে সেখানেই আপনার রিজিক আছে। প্রতিটি দরজা বন্ধ থাকলেও একটা না একটা পথ পাবেনই।
ধরুন আপনার একাডেমিক/পড়ালেখায় অবস্থা খুবই। তাই বিভিন্ন জায়াগায় ইন্টারভিউ দিয়েও কোনোনলাভ হচ্ছে না।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। হতে পারে সেসব কোম্পানিতে আপনার রিজিক লেখা নেই।
আপনি সেসময় অন্য কিছু চেষ্টা করতে পারেন যেমন একজন উদ্যোক্তা হতে পারেন বা ইন্টেলেকচুয়াল কাজ করতে পারেন।
মনে রাখবেন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ও পৃথিবীর অন্যতম দুই লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম উভয়েরই তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না।
কিন্তু তবুও তাদের সাহিত্যকর্মের জন্য মানুষজন তাদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
মানুষ ভুল করে কিন্তু আল্লাহ তা শুদরে দেন:
মানুষ মাত্রই ভুল। জীবনের প্রতি পদে পদে মানুষ ভুল করে। কিন্তু আল্লাহ এসব ভুলের উর্ধ্বে। তাঁর ভুল করা সম্ভব না। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সব জানেন। তিনিই জানেন আপনার জন্য কি ঠিক আর কি ভুল।
জীবনে অনেকক্ষেত্রেই দেখবেন আপনি কোনো ভুল করলেও আল্লাহ তা ঠিক করে দেয়।
আল্লাহ আপনার অজান্তেই আপনার ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক করে দিবে।
তাই সর্বদা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস রাখুন ও মনে রাখবেন তিনি সবসময়ই আপনার জন্য আছেন।
শেষ ভালো যার সব ভালো তার:
আসলে আমাদের পুরো জীবনটাই খুবই চ্যালেঞ্জিং। ছোট বেলায় হাঁটা ও কথা বলার চেষ্টা, কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি, ভালোভাবে অক্ষর লিখতে জানা ও মুখস্ত করা, ভালো একটা বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, সব ক্লাস পরীক্ষা ও বোর্ড পরীক্ষাতে ভালো রেজাল্ট, ভালো নাম করা একটা কলেজে ভর্তি হওয়া, এইচএসসিতে ভালো করা, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে নামা, ভালো রেজাল্ট সহিত বের হওয়া, বিসিএস দেওয়া, না হলে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি চাকরি পাওয়া।
এই হচ্ছে মোটামুটি একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ জীবন। জন্মের ২ থেকে ৩ বছর থেকে শুরু করে ২৫-৩০ বছর একটানা কষ্ট করে যাওয়া।
এখন এই একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ এ ভুল হতেই পারে। আর ভুল হলেই শুরু হয় সমালোচনা ও কটুকথা।
মা-বাবার চাপ ও আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশির অপমানে কতটাই না কষ্ট পেতে হয়।
কিন্তু একটা কথা চিরদিনই মাথায় রাখতে হবে যে শেষ ভালো যার সব ভালো তার৷
এখন ধরুন আপনি কলেজ পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে তারপর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যদি পড়ালেখা ছেড়ে দেন, রাস্তায় রাস্তায় বন্ধু-বান্ধব এর সাথে ঘোরাঘুরি শুরু করেন৷ সিগারেট-নেশা খারাপ জিনিসের সাতগে জড়িয়ে পড়েন তাহলে আপনার জীবনে সফল হওয়ার সুযোগ অনেক কম, নেই বললেই চলে। অপরদিকে আপনি স্কুল ও কলেজ জীবনে তেমন একটা পড়ালেখার প্রতি মনযোগী ছিলেন না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে আপনি সফল হওয়ার চেষ্টা করতেছেন।
তাহলে কিন্তু আপনার সফল হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি।
আপনি আগে কি করেছেন না করেছেন তা ভুলে যান। বর্তমান নিয়ে চিন্তা করুন।
তো এই ছিল কিছু সম্পর্ক আল্লাহ নষ্ট করে দেন কেন ? বিষয় নিয়ে আজকের পোস্ট । এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।