আকিকা কিভাবে করা হয়? ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম, পদ্ধতি

আজকের পোস্টে আমরা আকিকা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি । আকিকা কি, কিভাবে করে, কেন করে, ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম, কোন কোন প্রাণী দ্বারা আকিকা করা যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

আকিকা কি

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

“আকিকা” একটি আরবি শব্দ। আকিকা হলো একটি ইসলামিক প্রথা যা বাংলাদেশসহ সব মুসলিম দেশেই পালন করা হয়। আকিকা হলো মূলত একটি শিশুর জন্মের পর সেই জন্মের উপলক্ষ করে প্রাণী কুরবানি। আকিকা করা সুন্নাত।

এক ধরণের সদকা হিসেবে আকিকাকে বিবেচনা করা হয়।

আকিকার মাধ্যমে সন্তান দেওয়ার জন্য আল্লাহর প্রত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন বলে বিবেচনা করা হয়। আকিকায় প্রাণী কুরবানি ব্যতীত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একটা ভোজের আয়োজন করা হয়। প্রাক ইসলামিক আমল থেকেই আকিকার প্রচলন রয়েছে যদিও ইসলামের আবির্ভাবের পর এর উদ্দেশ্য, কাজ ও গুরুত্ব অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পিতা মাতা খুব কম বয়সেই মারা যান। তাই তাঁর প্রিয় চাচা আবু তালিব মহানবি (স.) এর পক্ষে আকিকা সম্পন্ন করেন।

উল্লেখ রয়েছে’
“আবু তালিব তার জন্মের সপ্তম দিনে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আকীকা করেছিলেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের এই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারা জিজ্ঞাসা করেছিল ‘এটি কি?’ যার জবাবে তিনি বলেন “আহমদের পক্ষে আকীকাহ”। তিনি মোহাম্মদ (সঃ) নাম ‘আহমদ’ রাখেন।”

আবার কিছু কিছু মহানবি (স.) এর দাদা তাঁর আকিকা করেছেন বলে হাদিস পাওয়া যায়। এবং তিনি মহানবির নাম মুহাম্মদ রাখেন।

আকিকা কেন করা হয়?

জেনে নেওয়া যাক আকিকা কেন করা হয় অর্থাৎ এর গুরুত্ব কতটুকু?

আকিকা করা সুন্নাত। এটি সুন্নাত আল মুয়াক্কাদাহ অর্থাৎ নিশ্চিত সুন্নাত। বিভিন্ন আলেমদের মতে এটি সুন্নাত ও মুস্তাহাব।

এটি মোটেই ওয়াজিব বা ফরজ নয়।

কিন্তু তবুও এটি সুন্নাত অর্থাৎ যা আমাদের রাসুল মুহাম্মদ (স.) করেছেন এবং যা করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

সুন্নাত একদম ফালিয়ে দেওয়ার মতো কিছু নয়। অর্থাৎ আকিকা না করলে তেমন কোনো বড় পাপ হবে না কিন্তু আকিকা করলে পিতা মাতা অনেক সওয়াব অর্জন করবেন এবং সন্তানেরও মঙ্গল হবে। আকিকা করা হয় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্য এবং সন্তানের সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য।

জাফর আল-সাদিকের একটি হাদীস বর্ণনা কর হয়েছে,

“প্রত্যেক জন্মগ্রহণকারী নবজাতকের জন্য আকীকা বাধ্যতা; যদি তারা সন্তানের জন্য আক্বিকাহ না করে তবে তা মৃত্যু বা এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। পিতা-মাতার পক্ষে আকিকার মাংস খাওয়া সুন্নত।”

আরেক হাদিসে মহানবি (স.) আকিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন,
“আকিকা শিশুর সাথে জড়িত। সুতরাং তার পক্ষ থেকে রক্তপাত করুন (পশু জবাই) এবং তাকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিন (অর্থাৎ তার জন্য একটি আকিকা পশু কুরবানী করুন এবং তার মাথার চুল তুলে দিন)।”

আকিকা কিভাবে করা হয়?

আকিকা কিভাবে করা হয়?

এখন মূল বিষয়ে আসা যাক সে এই আকিকা করে কিভাবে।

সাধারণত একটি নবজাতক শিশুর পক্ষে তার পিতা মাতা আকিকা করে থাকে।

আকিকার অনুষ্ঠানে পিতা মাতার পাশাপাশি অনেক নিকটাত্মীয়ও থাকে। আকিকা শিশু জন্মের ৭ দিন পর করতে হয়।

৭ দিনের দিন করতে না পারলে ১৪ দিনের সময় করতে হয়, তাও যদি পিতা মাতা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জন্মের ২১ দিনের দিনও আকিকা করা যায়।

এখন আকিকা সেসময়ে করতে না পারে তাহলে যখন পিতা মাতা স্বাবলম্বী হবে, তাদের কাছে টাকা থাকবে তেমন সময়েও করতে পারবেন।

আকিকা করার সর্বোচ্চ সময়সীমা হচ্ছে বয়:সন্ধি পর্যন্ত ।

যদিও কিছু কিছু জায়গায় যৌ-ব-ন কাল পর্যন্ত আকিকার সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে।

আকিকায় প্রথমে শিশুর নামে আল্লাহর প্রতি বাবা মা একটি প্রাণী কুরবানি করবেন (কি কি প্রাণী কুরবানি করা যায় তা নিচে আলোচনা করা হবে)।

পরবর্তীতে তার চুল সম্পূর্ণভাবে কামাই করে ওই চুলের ওজনের সমান পরিমাণে সোনা বা রূপা দান করে দিতে হবে।

এরপর সন্তানের একটি নাম রাখা হবে যা দ্বারা তাকে সারাজীবন ডাকা হবে। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণনা রয়েছে।
মহানবি (স.) বলেন:

“একটি শিশুর জন্যে আকিকা দিতে হবে, সপ্তম দিনে তার জন্য কোরবানি দেওয়া হয়, মাথা কামানো হয় এবং একটি নাম দেওয়া হয়”।

অর্থাৎ প্রথমে কুরবানি দিতে হবে, এরপর তার মাথা কামিয়ে যে পরিমাণ চুল হয় সেই পরিমাণ সোনা বা রূপা দান করতে হবে এবং এরপর তার একটি নাম রাখতে হবে।

এরপর উক্ত মাংসের সিংহভাগ গরিব দু:খীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে দিতে হবে। এবং নিজেদের জন্যও অল্প কিছু রাখতে হবে।

উপরে একটি হাদিস দেওয়া রয়েছে যেখানে জাফর আল সাদিকের মতে আকিকার মাংস পিতা মাতার খাওয়া উত্তম।

এছাড়াও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে ছোটখাটো একটা ভোজনের অনুষ্ঠানও করা যায়।

আকিকার সব আনুষ্ঠানিকতা একটু দ্রুত করা শ্রেয়।

জাফর আল-সাদিক দাবি করেছিলেন যে আদর্শভাবে চুল কামানো , আকিকার জন্য জবাই করা এবং সন্তানের নামকরণ করা উচিত এক ঘণ্টার মধ্যে।

তাই ঠিকভাবে দ্রুত করাই শ্রেয়।

আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে ইসলামের পূর্বেই এই আকিকার প্রচলন ছিল কিন্তু সেই সময় বেশ কিছু জঘন্য কাজ করা হত যা এখন করা যায় না।

করলে আকিকা তো হবেই না বরং পাপ হবে।

পূর্বের সময় আকিকার পশু কুরবানির পর সেই পশুর রক্ত সন্তানের মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হত।

এমন ধরণের কুসংস্কার কোনোভাবেই করা যাবেনা।

ছাগল দিয়ে কি আকিকা করা যায়? ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

 

হ্যাঁ ছাগল দিয়ে অবশ্যই আকিকা করা যায়। ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য উক্ত ছাগলের বয়ম কমপক্ষে ১২ মাস বা ১ বছর হতে হবে।

এছাড়াও ছাগলের শরীরে কোনো ধরণের ডিফেক্ট থাকতে পারবে না। যেমন: ভাঙ্গা দাঁত কিংবা ভাঙ্গা শিং।

কি কি প্রাণী কুরবানি দিয়ে আকিকা করা যায়?

উপরে ইতিমধ্যেই ছাগল দিয়ে যে আকিকা করা যায় রা উল্লেখ করা হয়েছে। এখন ছাগল ছাড়া আর কি কি প্রাণী দিয়ে আকিকা করা যায়? গরু, ভেড়া, উট ইত্যাদি প্রাণী দ্বারা আকিকা করা যায়।

অর্থাৎ যে যে প্রাণী দ্বারা কুরবানি পালন করা যায় সেসকল প্রাণী দ্বারা আকিকাও করা যাবে।

কিন্তু গরু বা উটে সাধারণত কুরবানির সময় যে ভাগে করা হয় তা আকিকার ক্ষেত্রে করা যাবে না।

অর্থাৎ আপনি অন্য কারো সাথে গরুর ভাগ নিয়ে তা দিয়ে আকিকা করতে পারবেন না কিংনা একটা গরু বা উট দ্বারা একাধিক সন্তানেরও আকিকা করা যাবে না।

একজন সন্তানের আকিকার জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রাণী কুরবানি দিতে হবে। এটা কিছুটা প্রাণের বদলে প্রাণ ধরণের।

আকিকা করার জন্য যে প্রাণী আপনি কুরবানি করবেন তারও নূন্যতম বয়স রয়েছে।

উট দিয়ে আকিকা করতে হলে উক্ত উটের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে।

গরু দিয়ে আকিকা করতে হলে গরুর বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে।

ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হলে ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১২ মাস বা ১ বছর হতে হবে।

ভেড়া দিয়ে আকিকা করার জন্য ভেড়ার বয়স নূন্যতম ৬ মাস হতে হবে।

আকিকার কিছু নিয়ম / ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

আকিকায় ছেলেদের জন্য দুইটি ছাগল বা ভেড়া জবাই দিতে হবে। কিন্তু মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে একটি পশু দ্বারাই আকিকা করা যাবে।

যদি পিতা মাতার আর্থিক অনটন থাকে সেক্ষেত্রে পুত্রের আকিকা একটি পশু দ্বারাও করতে পারবে।

এতেও মুস্তাহাব পালম হবে ও সওয়াব পাওয়া যাবে।

তবে ছেলের ক্ষেত্রে দুটি পশু দিয়ে আকিকা করাই উত্তম। এ বিষয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে।

হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।” (আবু দাউদ : ২৮৩৪)

সন্তান যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় তখন সন্তানের আকিকা সম্পূর্ণ দায়ভার আর পিতা মাতার উপর থাকে না।

চাইলে সন্তান নিজেও নিজের আকিকা দিতে পারবে।

সন্তান যদি সাত দিনের আগেই মারা যায় তাহলে সেই সন্তানের জন্য আকিকা করা আর সুন্নাত থাকবে না।

আকিকা সম্পন্ন করার সর্বোৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে সন্তান জন্মের ৭ দিন, ১৪ দিন কিংবা ২১ দিন পর।

চাইলে এর পরে করলেও হবে। কিন্তু এই সময় করলে সবচেয়ে ভালো।

পিতা মাতা ছাড়াও দাদা দাদি নানা নানিও আকিকা সম্পন্ন করতে পারবেন।

আকিকার ক্ষেত্রে তেমন বড় করে অনুষ্টান করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

আকিকা হচ্ছে মূলত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের জন্য একটা কাজ।

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম বা পদ্ধতি

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম

ছাগল দিয়ে আকিকার নিয়ম: প্রথমে ছেলে সন্তানের জন্য দুইটি এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল কিনে আনুন যার বয়স কমপক্ষে ১ বছর।

পরবর্তীতে এর হাত ও পা বাঁধুন। এরপর দোয়া পড়ুন এবং ছাগলটি জবাই দিন।

এরপর সন্তানের মাথা কামান এবং এর সমপরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য দান করুন এবং এর পর সন্তানের জন্য সুন্দর একটা মুসলিম নাম রাখুন।

ব্যাস! আপনার সন্তানের আকিকা আশা করি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

তো এই ছিল আজকের পোস্ট । এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

3 Comments

মন্তব্য করুন