আজকের পোস্টে আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল নাকি হারাম নিয়ে বলতে যাচ্ছি। এ পোস্টে আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং কি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং কি হালাল নাকি হারাম সে বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো শুরু কর যাক।
ক্রিপ্টোকারেন্স ট্রেডিং বা ব্যবসা কি?
আগের এক পোস্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি তা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। চাইলে পড়ে আসতে পারেন। সংক্ষেপে ক্রিপ্টো হলো এক ধরণের মুদ্রা যা কোনো অথরিটির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ নয় তাছাড়া সাপ্লাই-ডিমান্ড সহ নানা মেকানিজমের উপর ভিত্তি করে দাম সর্বদাই উপরে-নিচে যেতে থাকে। আর ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং হলো একটি ক্রিপ্টো কম দামে কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করা বা করার চেষ্টা করা।
এর একটি উদাহরণ দিলে ভালো বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনি একটি বিটকয়েন ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে। তিনদিন পর দেখলেন বিটিকয়েনের দাম ১২ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি সেসময় বিক্রি করে দিলেন। তো আপনার ২ হাজার টাকা বা ২০% লাভ হলো। এটা ছিল ট্রেডিং এর একদম বেসিক ব্যাখ্যা। ট্রেডিং এর চেয়ে আরো অনেক বেশি জটিল। ট্রেডিং বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে।
হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়, স্ট্যাটাস, উক্তি
এগুলো হল: স্পট ট্রেডিং, মার্জিন ট্রেডিং অপশন ট্রেডিং, ফিউচার ট্রেডিং ইত্যাদি। উপরের যে উদাহরণটি দিয়েছিলায় সেটি মূলত স্পট ট্রেডিং এর একটি উদাহরণ। স্পট ট্রেডিং সংঘটিত হয় স্পট মার্কেটে। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সরারসরি তৎক্ষনাৎ ট্রেড করা বা লেনদেন করাই হলো স্পট ট্রেডিং। ফিউচার ট্রেডের ক্ষেত্রে আপনি হচ্ছে একটি ক্রিপ্টো আপনি ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রি করবেন বা ক্রয় করবেন বা করার চেষ্টা করবেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল, ইসলাম কি বলে?
আসলে একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে একটি জিনিস কি হালাল কি হারাম সে বিষয়ে আমি মত দেওয়ার বা বলার কেউই না। আমি এখানে বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার ও ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্রিপ্টো কি হালাল না হারাম সে বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করব।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং কি হালাল না হারাম তাএ আগে জানতে হবে আদৌ ক্রিপ্টোকারেন্সি কি হালাল না হারাম। এখন ক্রিপ্টো কি হালাল না হারাম এ নিয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। অনেক স্কলার বলে ক্রিপ্টো হালাল আবার অনেক স্কলারের মতে এটি হারাম।
ক্রিপ্টোকে হালাল বলার ও হারাম বলার কারণ ও যুক্তিসমূহ দেওয়া হলো।
ক্রিপ্টোকে হারাম বলার যুক্তি:
ক্রিপ্টোকে হারাম বলার জন্য বেশ কিছু যুক্তি দেওয়া হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি এর কোনো ইকোনোমিক ভ্যালু নেই। যদিও আসলে কিছু ইউটিলিটি ক্রিপ্টো/টোকেন আছে যেগুলোর ইকোনমিক ভ্যালু বা ব্যবহার রয়েছে। এর আরেকটি যুক্তি হচ্ছে ক্রিপ্টো আসলে কোনো ইনভেস্টমেন্ট নয়।
এটি এক ধরণের জুয়া প্রকৃতির। একে জুয়া প্রকৃতির বলা হয় কারণ ক্রিপ্টোর দাম প্রতি মূহুর্তেই আপ-ডাউন চলে যায় অর্থাৎ ক্রিপ্টোর মূল্য অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। দিনে একটি ক্রিপ্টোর মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে। বিটকয়েনের মূল্য ২০২১ সালের শেষের দিকে ছিল ৬৯ হাজার ডলার। যার বর্তমান মূল্য ২১ হাজার ডলারের মতো।
১৫০+ বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, জনপ্রিয় ক্যাপশন ও উক্তি
ক্রিপ্টোকারেন্সিকে হারাম বলার আরেকটি কারণ হলো এটিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন নিষিদ্ধ বা হারাম কাজ যেমন ড্রাগস, জুয়া, অবৈধ ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তাই। আমার মতে একটি মুদ্রা দ্বারা কোনো খারাপ কাজ করা হলে তাতে ওই মুদ্রার কোনো দোষ হওয়ার কথা হয়। ধরুন একজন ব্যক্তি তার বেতনের টাকা দিয়ে একটা অবৈধ বন্দুক কিনল, এখন দোষ কি টাকার না ওই ব্যক্তির?
ক্রিপ্টোকে হালাল বলার যুক্তি:
ক্রিপ্টোকে হালাল বলারও বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে। যেমন: ক্রিপ্টোকে আপনি একটি পেমেন্ট মেথড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অর্থাৎ ধরেন আপনি একটি ই-কমার্স সাইটে একটি মোবাইল আনতে দিয়েছেন এখন সেক্ষেত্রে আপনি ক্রিপ্টো দ্বারা পেমেন্টটা দিতে পারেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং আর জুয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং অনেকটাই স্টক (শেয়ার) ট্রেডিং এর মতো আর বেশিরভাগ মানুষই স্টক ট্রেডিংকে হালাল হিসেবে বিবেচনা করে। এছাড়াও অনেক স্কলাররা ক্রিপ্টোকে সত্যিকারের একটি মুদ্রা বা ডিজিটাল হিসেবে মনে করেন।
এখন কথা বলা যাক ক্রিপ্টো ট্রেডিং কি হালাল না হারাম। ক্রিপ্টো ট্রেডিং সাধারণত হালাল কারণ এতে জাস্ট একজন তার সম্পদ বিক্রি করছে এবং জন্য একজন তা কিনছেন যা ইসলামিক দৃষ্টিতে হালাল। এর মানে স্পট ট্রেডিং হালাল যেহেতু এতে একজন তার ক্রিপ্টো বিক্রি করবে এবং অন্যদিকে আরেকজন তা কিনবে।
কিন্তু অন্যান্য যে ট্রেডিংগুলো রয়েছে সেগুলো আমার মতে হালাল নয় কারণ এই সকল কাজের সাথে ইন্টারেস্টের সম্পর্ক রয়েছে। আর ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্টারেস্ট বা মুনাফা বা সুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সুদ বা ইন্টারেস্টকে আরবিতে রিবা বলে। ইসলামিক ভাষায় কোনো একটি জিনিসের আসল মূলের সাথে আরো মূল্য যোগ করাকে সাধারণত রিবা বলে। রিবা দুই ধরণের একটি হচ্ছে রিবা আল নাসিয়াস অর্থাৎ এমন এক ধরণের লোন যাতে নির্দিষ্ট সময় পরপর ইন্টারেস্টসহ রিপেমেন্ট করতে হবে আর রিবা আল ফাদেল যাতে লোন ফেরত দেওয়ার সময় বাড়তি টাকা দিতে হয়।
মার্জিন ও ফিউচার ট্রেডের ক্ষেত্রে আমরা রিবা আল ফাদেল দেখতে পাই। যেখানে আমাদের প্রথমে লোন নিতে হয় এবং পরবর্তীতে লোন পরিশোধের সময় ইন্টারেস্ট দিতে হয়। এই ইন্টারেস্ট দেওয়া লাগে লিভারেজ ফি হিসেবে এছাড়াও আপনাকে মার্কেট ফান্ডিং ফি দিতে হবে।
ক্রিপ্টো, স্কলার ও মুসলিম বিশ্ব:
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম ইন্দোনেশিয়া ক্রিপ্টোকে ব্যান করেছেন এ বলে যে ক্রিপ্টো অনিশ্চিত একটি বস্তু ও এর কোনো ফিজিকাল ফর্ম নেই।
যদিও সৌদি আরব ক্রিপ্টোকারেন্সিকে লিগাল করেছে কিন্তু তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকলকে ক্রিপ্টো বিষয়ে সাবধান করেছে।
একজন ইসলামিক স্কলার ড. আনাস সকল মুসলিম এখনের জন্য ক্রিপ্টো ব্যবহার না করতে বলেছেন।
বাহরাইনের শরিয়াহ রিভিউ ব্যুরোর মতে বিটকয়েন, ইথিরিয়ামের মতো ক্রিপ্টো শরিয়াহ আইনের সাথে যায় এবং এটি হালাল।
মুফতি মুহাম্মদ আবু বাকারের মতে ক্রিপ্টো একটি মুদ্রা ও এটি হালাল।
ইংল্যান্ডের শেখওয়েল লেন মসজিদ ২০১৮ সালে ক্রিপ্টো ডোনেশন গ্রহণ আরম্ভ করে।
তো পোস্টটি (ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা কি হালাল) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।