প্রত্যেক সফল ব্যক্তির সফলতার পেছনে বড় ধরনের গল্প লুকিয়ে থাকে যা আমরা দেখতে বা শুনতে পাইনা। আমরা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সফলতার গল্প শুনি, কিন্তু তার সফলতার পেছনের গল্প আমরা কেও শুনি। সত্যি বলতে ব্যর্থতার গল্প আমরা কেও শুনতে পছন্দ করিনা। কিন্তু এটা আমাদের মস্ত বড় ভুল করা, কেননা আপনি যদি সফল ব্যক্তিদের সফল হওয়ার পেছনের গল্পটি শুনেন সেটি থেকে অনেক কিছুই আপনি শিখতে পারবেন। বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প –
আর গল্প থেকে শুনা কাহিনী থেকে আপনিও আপনার সফল জীবনের সূচনা করতে পারবেন। যাহোক, আজকে আমি আপনাদের জন্য এমন একটি দরিদ্র ব্যক্তির গল্প নিয়ে এসেছি, যিনি একদম শূন্য থেকে জীবনে সফল হয়েছেন। যদিও এটা শুধুমাত্র গল্প, কিন্তু এই গল্পটা বিশ্লেষণ করে আপনিও যদি আপনার জীবনে ঘুরে দাড়ান তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। তবে চলুন শুরু করা যাক। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের মত তারও জন্ম হয়েছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছেলেটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ছিলনা। বাবা ছাড়া সন্তান, মা নানান হাতের কাজ করে যা টাকা রোজগার করতো তাতেই কোনো রকমে চলে যেত সংসার।
ছেলেটি যে গ্রামে বসবাস করতো সেখানের কেও টিতি শিক্ষিত ছিলনা। কিন্তু ছেলেটির মা তার লেখাপড়ার বিষয় অনেক সিরিয়াস ছিল। ছেলেটিও চাইতো কোনো ভালো বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে। ছোটবেলা থেকে ছেলেটির স্বপ্ন ছিল সে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি হবে। কিন্তু কি আর করা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে শহরের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটা শুধুমাত্র তার জন্য স্বপ্ন ছিল। স্কুল জীবনের ১০ বছর শেষ করার পর ছেলেটির মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একইসাথে পরিবারের আর্থিক দিক ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। তখন ছেলেটি ভাবলো, এখন সময় এসেছে তার নিজের কিছু করার, এভাবে আর কতদিন এইবা চলবে।
ছেলেটি চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু একজন এসএসসি পাস ছেলেকে কে চাকরিতে রাখতে চাইবে। তবুও সে নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস রেখেছিল, এবং এক জায়গায় এসএসসি পাস ছাত্র চাকরিতে নিচ্ছে শুনে সে ইন্টারভিউ দিতে চলে যায়। ছেলেটির জীবনের প্রথম ধাক্কা সেখানে খেলো সে। ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয় ফরেন ক্লায়েন্টদের ইংরেজিতে ম্যানেজ কিভাবে করবে সে। সে কোনো জবাব দিতে পারেনা। কারণ সে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের মত ইংরেজিতে ততটা ভালো ছিলনা। তার সামনে পরিস্থিতি খারাপ ছিল বিদায় সে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তে পারিনি।
একে একে অনেকগুলো ইন্টারভিউ সে দিয়েছিল, কিন্তু প্রত্যেকটিতে ব্যর্থ হয় সে। একদিন সে তার মা কে বললো ‘আমি ব্যর্থ মা ‘, তখন তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ব্যর্থতার হাত ধরে সফলতার সৃষ্টি হয়। জীবন এক প্রকার যুদ্ধের মত, যেখানে আমাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেছে থাকতে হয়। মার কথা শুনে ছেলেটির ভাবতে লাগলো, যুদ্ধের জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন হলে জীবন যুদ্ধে কি প্রয়োজন হতে পারে? তখন তার মাথায় আসলো সে কেন রিজেক্ট হচ্ছে বার বার সে প্রশ্নটি। যখন সে বুঝতে পারলো যে তার ইংরেজির দুর্বলতা তাকে সামনের দিকে যেতে বাধা দিচ্ছে, তখন সে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ইংরেজিকে ধরে নিল।
কোনো ইংলিশ মিডিয়ামে না পড়ে, বাড়িতেই প্রেকটিস করতে থাকে সে। দিন রাত সে এটি শেখার চেষ্টা করে। এবং সে তার কাজে সফল হয়। একটা সময় সে ইংরেজিতে খুব দক্ষ হয়ে যায়। সে আবারও প্রথম রিজেক্ট করা কোম্পানির কাছে গেলো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। তখন তাকে আবারও একই প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবে সে বললো, ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করতে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার প্রয়োজন হয়না স্যার, ইচ্ছে থেকে যেকোনো ভাষা শেখা যায় এবং সেটির ভালো প্রয়োগ করা যায়। এভাবেই একটি জবাব দেয় ছেলেটি।
তখন ইন্টারভিউ স্যার তার কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন, এবং তারা তাকে চাকরি দিয়েছিল। পরিশেষে হাজার কষ্ট বাধা বিপত্তির পর সে চাকরি। পেয়ে তার মা কে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। গল্পটি যারা বার বার জীবনে ব্যর্থ হচ্ছে, সফলতার মুখ দেখতে পারছে না এবং যারা ইংরেজিতে কোনো ভাবেই উন্নতি করে পারছে না তাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয়। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগে থাকবে, শেষ করছি এইটুকুতেই, আল্লাহ হাফেজ।