আসসালামু আলাইকুম,,, এমন পরিচিত শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালাম! দেখলাম পিছনে ‘বিল্লাল’দাঁড়িয়ে আছে। চেহারাটা তার গম্ভীর আর শুকনো। অন্য কোন দিন এমন দেখায় না। আজ একটু অন্যরকম লাগছে। ছোটবেলার বন্ধু। আমি ওকে বসতে বললাম। ও ঠিক আমার পাশে এসে বসল। আমি চায়ের অর্ডার দিলাম। এখানকার চা টা খুব ভালো বানায়। আমরা সব সময় এখানে চা ,-টা খাই। বেলাল বলল নারে বন্ধু চা টা খাব না এখন। আমার অবস্থা খুব একটা ভাল না। কথা বলার সময় ওর একটা বাজে অভ্যাস আছে। এক লাইন কথা বলবে আর শুধু থুথু ফেলবে।
ওর এই অভ্যাসটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। তবু কি করার বন্ধু বলে কথা। এবার একটু নড়েচড়ে বসলাম। তাহলে বল শুনি, ঘটনাটা কি। তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে, ছাগল হারালে যেমন মানুষকে পাগল পাগল দেখায়। ঠিক সেরকম টাই।বেল্লাল অবশ্য অধীর আগ্রহ নিয়ে হয়তো বসেছিল কথাগুলো আমাকে বলার জন্যই। হাবভাব দেখে এমনটাই বোঝা যাচ্ছে। বিল্লাল এবার শুরু করলো। আমি মনোযোগ সহকারে তার কথাগুলো শুনতে লাগলাম।কথাগুলো শোনার আগে অবশ্য আমি এতোটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু ওর চেহারার হাবভাব দেখে মনে হল বিষয়টা যতটা সহজ ভাবছি ততটা সহজ নয় নয়। বেল্লাল এবার মুখ ফুটে বলতে লাগলো,,,
বন্ধু তুই তো খুব ভাল করেই আমাকে চিনিস। আর আমিও কোন কথা তোকে না বলে থাকতে পারিনা। ঘটনাটা হলো কি একটু মনোযোগ সহকারে শোনো। বেশ কিছুদিন যাবৎ বাড়ি থেকে বিয়ে চাপ দিচ্ছিল। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। ভেবে দেখলাম বিয়ে তো একদিন করতে না করতেই হবে। এখন যেহেতু বাড়ি থেকে বলছে, তাহলে করেই ফেলি। প্রথমে ভেবেছিলাম, কিছুদিন একটু ইনকাম ,ইনকাম করি, ঘরে গচ্ছিত বলে তো কোন কিছু নেই। সংসার টা একটু সুন্দর ভাবে শুরু করব। কিন্তু সেটা যদি করতে যেতাম তাহলে, এদিকে আবার বয়সটা বেড়েই চলছিল। বাড়ি থেকে অনেকগুলো পাত্রী দেখা হয়েছিল। কোনোটা আমার পছন্দ হয়নি, আবার কোনোটা তাদের।
এই 75 জিলাপির প্যাচ এর মধ্য থেকে, শেষবার যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম, তাকে একটু পছন্দ হলো। ভেবেছিলাম এবার সম্বন্ধটা জোড়া লাগলে এই মেয়েকেই বিয়ে করবো। অবশ্য পছন্দ হবার মতো কারণও ছিল। মেয়েটা ছিল ভীষণ সুন্দরী। যেমন সুন্দর তার চেহারা তেমন সুন্দর তার নাম। আমি বিল্লালকে একটু থামিয়ে দিয়ে বললাম বন্ধুর নামটা কি? বলতো! বেলাল বলতে শুরু করল। মেয়েটার নাম হল বৃষ্টি। গাজীপুরের মেয়ে । প্রথম দেখাতেই দেখে পছন্দ হয়ে গেল। মামা ,খালুরা , বিয়ের সম্বন্ধটা কে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আমিও মনে মনে বেশ খুশি হলাম। আসলে কি বন্ধু জানিস যতগুলো মেয়ে দেখেছি, তার চাইতে ‘ও’ অনেক সুন্দর। আমার চেয়ে 2 ইঞ্চি লম্বা হবে। আমার মায়ের একটি কথা।
বউ আনলে লম্বা-চওড়া দেখে আনব। ছেলেমেয়েগুলো লম্বা চোরাই হবে। স্বাস্থ্যটা বেশী মোটা-ও না আবার চিকোনো না একদম মিডিয়াম। সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে, অনার্সে ভর্তি হয়েছে। বয়স খুব বেশি না। দেখে বোঝাই যায়না যে উনিশ বিশ বছর হবে। বাবারও খুব পছন্দ হয়ে গেল। ঘটক বাবু বেশ খুশি। বেচারা আমার জন্য অনেক খাটাখাটনি করেছে। যেদিন বিয়ে ঠিক হল সেদিন নিজেকে একটু অন্যরকম লাগছিল। বিয়ের তারিখ পড়ল ডিসেম্বরের 24 তারিখ। দিনটি ছিল শুক্রবার।আত্মীয়-স্বজনরা দূর-দূরান্ত থেকে বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে আসা শুরু করলো। সবার মাঝে একটি খুশির আমেজ। বাড়ির বড় ছেলে হওয়াতে সবাই একটু বেশি উৎসাহিত হয়ে গেল। বোন ,বোনের জামাইরা এল।
বিয়ের পাঁচ সাতদিন আগে থেকেই বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আমি এবার ওর গল্পটি শুনার জন্য, এখন একটু নড়েচড়ে বসলাম। চা টা কখন খেয়ে ফেলেছি মনে নেই। দোকানদার খালি কাপের চা দুটো নিয়ে যেতে আসলো । দোকানদার কোথায় পাশে থেকে শুনছিল। তার মুখের সেই মুচকি হাসিটা দেখে বোঝা গেল। বেল্লাল আবার শুরু করল তার কথোপকথন। এবার বেলালের মুখটা একটু একটু একটু কালো হয়ে যাচ্ছে। মুখের বর্ণ টা চেঞ্জ হয়ে গেল এবার। সেবার খুব গম্ভীর। কয়েক বার থুথু ফেলে নিল। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। বাকি গল্পটা শোনার জন্য। বেল্লাল শুরু করলো আবার,,, আমি দোকানপাট বন্ধ করে দিলাম। জীবনে অনেক ব্যবসায়ী করা যাবে।
বিয়ের আগে চার পাঁচ দিন না হয় ব্যবসাটা নাই করলাম। অবশ্য বাড়ি থেকে সম্মতি ছিল। আর বিয়ের আগের প্রস্তুতি বলে একটা কথা থাকে। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে হয়। আমিও তাই করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে বাড়ির সকল আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত। উৎসব উৎসব একটি আমেজে পুরো বাড়ি মেতে রইল। কেউ কেউ বলতে লাগলো, আমার নাকি কপাল ভালো। বউটা নাকি অনেক সুন্দর হবে। আত্মীয়-স্বজনের এসব কমেন্টস আমার খুব ভালই লাগলো। আমিও খুব বেজায় একটা খুশি। এরই মাঝে এক কান্ড ঘটলো। ঘটক বাবু আমাকে মেয়ের নাম্বারটি দিয়ে দিয়েছিল। তবে প্রথম এক-দুই দিন আমি তাকে ফোন করিনি। ভেবেছিলাম ফোন করলে আবার অন্য কিছু ভেবে যদি বসে। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই-হঠাৎ সেই নাম্বার থেকে ফোন আসতে শুরু করলো। হ্যাঁ বৃষ্টি ফোন করতো।
খুব বেশি এক কিছুক্ষণ কথা হতো না। অল্প অল্প কথা হতো। তবে রাত্রির বেলা, রাত জেগে একদিন কথা বলেছিলাম। অনেক কথা, সেকথা আবেগের, সে কথা দুষ্টুমিতে ভরা, যে কথাগুলো বন্ধু ছাড়া অন্য কাউকে বলা যায়না। সেদিন অনেক ভালো লেগেছিল। খুব মিশুক একটি মেয়ে। কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল মেয়েটি অনেক কিছুই বোঝেন। আমারও ভালো লাগতে শুরু করলো। ওর কণ্ঠটি ছিল অনেক মিষ্টি। স্কুল কলেজ জীবনে অনেক মেয়ের সাথে কথা বলেছি,। কিন্তু ঐ সব বিষয়ের থেকে এই বিষয়টা একটু ভিন্ন। এখন কথা বলা লাগে সম্মানের সাথে। সেখানে ছলনার আশ্রয় নেওয়া টা অনেক কঠিন। আর নেবেই বা কিভাবে। দুদিন পরে যার সাথে বিয়ে হচ্ছে। অসম্ভব তাই যা কিছু বলেছিলাম সত্যি কথা বলেছিলাম। কথার বেড়াজালে কোন এক সময়, নিজের জীবনের ইতিহাসটা ওকে শেয়ার করেছিলাম তবে খুব সাধারণভাবে।
ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাকে বুঝতে পারবে। তবে ওর রিয়াক্স দেখে মনে হল, ও আমার এইসব বিষয় খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। আমিও বিষয়টাকে সাধারণ হিসেবে নিলাম। তবে ও আমাকে একটি প্রশ্ন করেছিল, খুব গুরুত্বের সাথে, একবার নয় বহু বার জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কি কাউকে ভালোবাসতেন? আমি হেসে হেসে কথা গুলো উড়িয়ে দিতাম। শৈশব পেরিয়ে, কৈশোরের কথাগুলো, যৌবনে এসে না হয় নাই বললাম। দেখতে দেখতে বিয়ের দিনে করতে লাগলো। মাঝে আর দুদিন মাত্র সময়। বিকেলবেলা মামা ডেকেছে আমায়, আমি মামার কাছে গেলাম। মামা, আর বাবা ও বড় ভাই , সম্পর্কে কাজিন হয়, সবাই একসাথে বসে কি যেন আলোচনা করছে। মামা বলল তোর কেনাকাটা শেষ করতে হবে, আর বেশি সময় নেই। আমি রান্না করতে পারলাম না। সবাই মিলে বিকেলে চলে গেলাম মার্কেটে। সস্তা মার্কেট না করে শহরের দিকে চলে গেলাম।
ভাবলাম কমদামের জিনিসগুলো যদি ওর পছন্দ না হয়। সর্বপ্রথম যেটা কিনলাম সেটা হল এটি লাল বেনারসি শাড়ি। অনেকগুলো সারির মাঝে এই শাড়ীটায় কেন জানি আমার পছন্দ হলো। নামটা খুব চড়া দাম দিয়ে কিনলাম। আসলে এই সময় ব্যাপারটা এমনই হয়। দোকানদার একটি ফাঁদ পেতে থাকেন। তবে কিছু করার নেই ঠকলেও মনে হয় না আমি ঠকেছি। তাছাড়া ব্যবসা বলেও তো একটা কথা আছে। তারাও তো এখানে ব্যবসা করতে বসেছেন। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে চলে যায়। আরো অনেক কিছু কেনা হল। আর বৃষ্টির জন্য ব্যক্তিগত জিনিস গুলো, ছোটবোনেরাই কিনে নিল। অবশ্য এই সময়ের মাঝে বৃষ্টি অনেকবার ফোন দিয়েছে। আমি প্রতিটা জিনিস কিনছি আর ওর সাথে কথা বলছি। আমার তখন খুব ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে আমি পা দিতে চলেছি। কেনাকাটা করতে করতে রাত্রি দশটা বেজে গেল।
সবাই একটি সিএনজি রিজার্ভ করে বাড়িতে চলে এলাম। আজ রাত্রিতে মনের ভিতর একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। কাল বাদে পরশু বিয়ে।আসলে এই সময়টা যে আসলে কিভাবে পার হয় সেটা আসলে যারা নতুন বিয়ে করেছেন তারাই বলতে পারবেন। খুব অস্থির অস্থির লাগে। মনে হয় প্রথম দিন আমি কি করবো, কেমন হবে, আবার রাগ করবে নাতো, মানুষ কি ভাববে। অবশ্য যা ভাবছিলাম তাই অবশ্য ঠিকই।কারণ বাড়ির আশেপাশের মানুষগুলো আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো আমি বোধ হয় বেল্লাল না। অন্য কোন বেল্লাল। বুঝতে পারছিলাম না তারা আসলে আমাকে কোন দৃষ্টিতে দেখছিল। ওইসব না ভেবে আমি আমার কাজে মনোযোগ দিচ্ছিলাম। দেখতে দেখতে দিনটি চলে এলো। মামা, খালুরা সবকিছু ম্যানেজ করে ফেললেন। বাড়ির গেট সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়ি ঝিলিমিলি রঙে আঁকা হয়েছে।
লাল ,সবুজ ,হলুদ আরো কত বাতি। আমার ভিতর তখন শুধু অস্থিরতা।আমি ভাবতেই পারছিলাম না আমি কোন নতুন জগতে প্রবেশ করছিলাম। গাড়ি টারি সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। আমার জন্য মামা একটি শেরওয়ানি কিনেছিল। খুব সুন্দর। আমি কোনদিন শেরওয়ানি পড়িনি। সেদিন প্রথমবার পড়েছিলাম। মাথায় বরের পাগড়ী টা দুলাভাই পরিয়ে দিল। পায়ে নৌকা মার্কাকে জুতা, বড় অদ্ভুত লাগছিল নিজেকে। আমার হাত-পা শুধু কাঁপছিল। মুখে রুমাল টি চেপে কাঁপা কাঁপা শরিলে-গাড়িতে গিয়ে বসলাম। পাশে দুলাভাইরা বসলো।আশেপাশের সকল মানুষগুলো আমাদের এই উৎসবমুখর ভ্রমণের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। অল্প বয়সের কিছু তরুণী মুখ চেপে চেপে হাসছিল। আমি সবই খেয়াল করছিলাম। কিন্তু আমার মুখে কোন কথা ছিল না। আর রুমাল চেপে ধরে থাকার কারণে খুব লজ্জা লাগছিল। আর মনে মনে শুধু বৃষ্টির কথা ভাবছিলাম। কথাগুলো বলতে বলতে বেল্লাল আবার তার ছোট খেলা শুরু করলো। আমি মনোযোগ সহকারে তার গল্পটি শুনতে লাগলাম,,,
বিল্লাল আবার শুরু করলো,,। গাড়ি ছেড়ে দিল। জানালা গুলো খোলা ছিল। বাইরের দমকা বাতাস গুলো গায়ে লাগছিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য গুলো দেখছিলাম। নিজেকে আবিষ্কার করলাম অন্য এক আমিতে। গাড়িটি ফুলে ফুলে সাজানো ছিল।গাড়িটি যখন রাস্তায় চলছিল আশেপাশের লোক গুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। কেউ কেউ আবার দু’একটি কথা বলছিল। কিন্তু কথাগুলো তেমন বোঝা যাচ্ছিল না। গাড়ি ছুটে চলছে দুরন্ত গতিতে। ঘন্টা দুয়েক যাবার পর, মনে হচ্ছিল গাড়িটি যদি আরও দ্রুত চলত। গাড়ির ভিতরে আত্মীয়-স্বজন গুলো মুচকি মুচকি হাঁসছিল। কত কথা, কত প্ল্যান, কত কিছুই না তারা বলছিল। এটা করব, ওটা করবো, এইসব আরকি। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বিয়ে বাড়িতে।এবারের যেসব নিয়মকানুন থাকে সবকিছুই পালন করা হলো। কোন সমস্যা হলো না।
আমি বসে আছি বরের প্যান্ডেলে। পাশে বোন দুলাভাই এরা। তারা খুব খুশি। কিছুক্ষণ পর পর কেউ এসে একজন বলতো। কনে এখনো রেডি হয়নি। মামা, এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছে। সম্ভবত কেউ একজন কাজীকে ডাকতে গিয়েছে। পুরো বাড়ি মানুষেমানুষের পরিপূর্ণ। এত মানুষ বোধহয় বিয়ে বাড়িতেই হয়। চতুর্দিক সাজানো গোছানো এবং একদম পরিপাটি। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এবার সবাই একটু অস্থির হয়ে গেল।সবাই শুধু বলতে লাগল, কনেকে এবার নিয়ে আসা হোক।কিন্তু বৃষ্টি দের বাড়ির লোকজন গুলোর কেমন যেন একটা অবস্থা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। কেউ কেউ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল। কারো কারো মুখ খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিলো। এভাবে আরো ঘন্টা দুই এক পার হয়ে গেল। না এখনো কোনে আসছে না!। এবার আমার আত্মীয় স্বজনরা একটু উঠে পড়ে লাগলো।
অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। কাজী চলে এসেছে। কিন্তু নতুন বউ তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। আসলে ঘটনাটা কি! এত সময় তো লাগার কথা না। আমি বিন্দু বিন্দু ঘাম ছিলাম। বুকের ভেতরটা ধাক ধাক করে উঠছিল। বুঝতে পারছিলাম না এসব কি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বিয়ে বাড়িতে একটু থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। এবার দেখলাম সবাই একটু উত্তেজিত।মামা আর খালু কে দেখলাম বৃষ্টির বাবার সাথে কি যেন কথা বলছে। তবে তাদের সবার মুখ গোমরা। মনে হচ্ছিল বিশেষ কোনো কিছু হয়েছে। কিন্তু আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি সেই বিশেষ কিছুটা এমন হতে পারে!? আমি স্টেজের উপরে একটু নড়েচড়ে বসে ছিলাম। দুলাভাইরা উঠে গিয়েছিল। রাত্রি তখন 11 টা বাজে। আস্তে আস্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর মামা এসে বলল, সবাই গাড়িতে উঠ। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
মুরুব্বীরা যেটা বলল আমরা শুধু সেটাই করে যাচ্ছিলাম। কেউ কেউ আবার উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখলাম। মনে হচ্ছিল কোন কিছু নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে। তখনও আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। মনে হচ্ছিল বিয়েবাড়ির নিয়ম মনে হয় এগুলো। একটু পর কাজী সাহেব চলে গেলেন। মামার মুখটি দেখে মনে হচ্ছিল, কোন পাগলা কুকুর বোধহয় তাঁকে কামড়িয়েছে। একটু পরে দেখতে পেলাম একপ্রকার ঝগড়াঝাঁটি লেগে গেছে। সেখানকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঝামেলাটা সামলানোর চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত বলেই বেল্লাল একটু থেমে গেল। আমি তখন বিল্লাল কে জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হয়েছিল!, এবার জিনিসটা আমি বুঝতে পারলাম, যতটা সহজ আমি ভাবছিলাম ঠিক ততটা সহজ নয়। কতটা ধকল ওর উপর দিয়ে গিয়েছে। সেটা বোঝার মত। বেল্লাল এবার একগাল থুতু ফেলে নিল।
আমি শুধু বললাম তারপর:???????। বেল্লাল এবার কোন কিছু না বলে উঠে দাড়ালো। তার চোখে এবার কিছু একটা দেখা গেল। চোখ দুটো ভাসছে। ও মিছেমিছি সে গুলোকে আটকাবার চেষ্টা করছে। আমি কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর,,, বেলাল বলে উঠল বন্ধু যাই। আমি আর ওকে আটকাবার চেষ্টা করলাম না।
বেল্লাল চলে যেতে লাগলো। তবে তার হাটার ভাব ভাব দেখে বোঝা গেল, এই বেল্লাল আগের বেল্লাল নেই। এই বেল্লাল অন্য এক বেল্লাল। যে বিল্লাল বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছিল, সেই বেল্লাল আর এখনকার বেল্লালের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
বৃষ্টি হয়তো তার জীবন থেকে চলে গেছে। এখন তার জীবনে শুধু রয়ে গেছে, বৃষ্টির কিছু ফোটা ফোটা জল! সেই, সেই জল মায়ার, সেই জল আবেগের, সেই জল শপ্ন দেখার অভিশাপ, সেই জলে লুকিয়ে আছে হাজারও বেলালের অগণিত গল্প। যে গল্প কথা বলে, যে গল্প মানুষকে হাসায়, গল্প মানুষকে কাঁদায়। ভালো থেকো তুমি বৃষ্টি। তবে অন্য কাউকে ভেজাতে চেষ্টা করো না। গল্পটা শুধু বেল্লালের। বেল্লাল এখনও স্বপ্ন দেখে, বিয়ের কথা বলতেই, ওর চোখে দেখতে পাওয়া যায় কিছু অতৃপ্ত বাসনা। হয়তো কোন একদিন বেল্লাল, বৃষ্টিতে ভিজবে। অপেক্ষায় রইলাম সেই দিনের। চায়ের বিল টি দিয়ে আমি সেখান থেকে চলে এলাম। (মমিন সাগর)