আজকের পোস্টে আমরা বুয়েট নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। বুয়েড়ে চান্স কিভাবে পেতে হয়, কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন হয়,বুয়েটে চান্স পাওয়ার উপায়, বুয়েটে চান্স পাওয়ার কিছু টিপস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
বুয়েট
বুয়েট বা ইংরেজিতে BUET। এর পূর্ণ অর্থ হলো Bangladesh University Of Engineering and Technology। বাংলায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলেও ১৯৬২ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
নাম থেকেই বোঝা যায় যে এটি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। বুয়েট একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ইঞ্জিনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে চাহিদা পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়।
যেকোনো কেউ যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করে তার প্রথম চয়েজ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়।
কিউএস র্যাংকিং এ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমে বুয়েট বিশ্বে ৪০১-৫০০ র্যাংক ছিল যা বাংলাদেশের জন্য সেরা।
তাদের নয় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের রয়েছে ৯১ একরের বিরাট ক্যাম্পায়।
বুয়েটে মোট ১৮টি ডিপার্টমেন্ট ও ৬টি ফ্যাকাল্টি রয়েছে। ফ্যাকাল্টিগুলো হলো:
১. ফ্যাকাল্টি অফ ক্যামিকাল এন্ড ম্যাটারিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং।
২. ফ্যাকাল্টি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
৩. ফ্যাকাল্টি অফ ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)।
৪. ফ্যাকাল্টি অফ সাইন্স।
৫. ফ্যাকাল্টি অফ ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
৬. ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিটেক্সার এন্ড প্লানিং।
বুয়েট ভর্তি প্রক্রিয়া
বুয়েট যেহেতু একটা বিশ্ববিদ্যালয় তাই স্বাভাবিকভাবেই বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পূর্বে আপনাকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করে নিতে হবে। আপনাকে বুয়েটে ভর্তির জন্য তাদেরকে প্রথমে আবেদন করতে হবে এবং আবেদন ফি দিতে হবে।
ক ইউনিটের জন্য ১০০০ টাকা এবিং খ ইউনিটের জন্য ১২০০ টাকা।
এরপর বুয়েট কর্তৃপক্ষ আপনার এসএসসি ও এইচএসসি এর ফলাফলসমূহ যাচাই বাছাই করবে।
আপনার যদি বুয়েটে টেস্ট দেওয়ার যোগ্যতা (রিকোয়ারমেন্ট) থাকে তবে তারা আপনাকে জানাবে এবং আপনি বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
পরবর্তীতে বুয়েটের টেস্ট দেওয়ার যোগ্যতা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বুয়েটে ভর্তি যোগ্যতা
বুয়েট বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের একটি। তাই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যও যোগ্যতার প্রয়োজন৷
এসএসসি: বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য একজন প্রার্থীর বাংলাদেশের যেকোনো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ ৫ এর মধ্যে জিপিএ ৪ পেয়ে এসএসসি বা দাখিল বা সমমানে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। বিদেশি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রেও সমমানের ফলাফল করতে হবে।
এইচএসসি: পরীক্ষার্থীকে বাংলাদেশের যেকোনো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড বা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ ৫ স্কেলের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা আলীম বা সমমানের পরীক্ষা পাশ করতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত দুই বিষয়ে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে মোট নূন্যতম ১৭০ পেতে হবে।
অতএব গড়ে প্রতিটি গণিতে কমপক্ষে ৮৫ পেতে হবে।
পদার্থবিজ্ঞান দুইটা ও রসায়ন দুইটা মোট ৪ বিষয়ে ৪০০ নম্বরের মধ্যে নূন্যতম ৩৭২ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা আলীম বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
অর্থাৎ প্রতিটি পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নবিজ্ঞান পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৯৩ পেতে হবে।
প্রতি বছর এই কমপক্ষে কত নাম্বার পেতে হবে বা কমপক্ষে কত জিপিএ পেতে হবে তা পরিবর্তন হয়।
এটি হচ্ছে সাধারণ যোগ্যতা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটে) প্রতিবার প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়।
এখন যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে যে অনেক শিক্ষার্থীই সমান বা কাছাকাছি ফলাফল করেছে।
তখন তারা খুঁজবে কোন শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সবচেয়ে ভালো করেছে।
আপনি যদি গণিতে ঠিক ১৭০ পান এবং পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নে ৩৭২ এর মতো পান তাহলে আপনার ভর্তির সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে।
অনেক সময় প্রার্থী এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ পেয়েও তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
তো আপনাকে এমন ফলাফল করতে হবে যা কেউই করতে পারেনি বা বেশিরভাগ প্রার্থীরাই করতে পারেনি।
পরবর্তীতে ধাপে যাওয়ার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞান এই বিষয়সমূহের উপর ভেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা | বুয়েটে চান্স পাওয়ার উপায়
যারা প্রথম পর্যায়ে এপ্রুভড হয়েছে তারা তাদের এডমিশন কার্ড দেওয়া হবে যাতে রোল নাম্বার এবং যাবতীয় সবকিছু লেখা থাকবে।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা মূলত দুই ধাপে সম্পন্ন হয়।
একটি হচ্ছে প্রাক নির্বাচনী ও অপরটি হচ্ছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। নিচে দুইটি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা
সবার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হবে। এইবার প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাক নির্বাচনীর জন্য বাছাই করা হয়েছে। প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় সাধারণত এমসিকিউ (বহুনির্বাচনি প্রশ্ন) তে পরীক্ষা হয়।
আপনার এইচএসসি/ উচ্চ মাধ্যমিক এর সিলেবাস দিয়েই এই প্রশ্ন হবে।
মোট ১০০ টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ভরাট করতে হবে এবং এর জন্য সময় পাবেন মাত্র ১ ঘণ্টা।
প্রতি মিনিটে আপনাকে গড়ে প্রায় ১.৭ টা এমসিকিউ এর উত্তর দিতে হবে যা খুবই কঠিন বিষয় তাই যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দিতে হবে।
এই প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা হবে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞানের উপর।
গণিত প্রশ্ন থাকবে মোট ৩৪ টি এবং পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞানে মোট প্রশ্ন থাকবে ৩৩ টি করে।
প্রতিটি প্রশ্ন এক নাম্বারের জন্য। এখন মিনিমাম কত নাম্বার পেলে আপনি পরের ধাপে যাওয়ার সুযোগ পাবেন তা প্রতিবছর পরিবর্তন হয়।
প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নাম্বার কাটা যাবে তাই একটু সতর্কভাবে উত্তর দিতে হবে।
চূড়ান্ত পরীক্ষা | বুয়েটে চান্স পাওয়ার উপায়
প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় যারা পাশ করবে তাদের নিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ওই ১৮ হাজার শিক্ষার্থী থেকে মাত্র ৬ হাজারের মতো শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় ক ও খ ইউনিটের জন্য পরীক্ষার মান ভিন্ন ভিন্ন। ক ইউনিটের মোট ৪০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে হয় এবং খ ইউনিটের মোট ৬৫০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে হয়।
ক ইউনিটের ৪০০ নাম্বার পরীক্ষা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে। গণিত প্রশ্ন হয় ১৪টি এবং পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন প্রশ্ন আসে ১৩ টি করে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০ করে। আর খ ইউনিটের প্রার্থীদের এই ৪০০ নাম্বারের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত পরীক্ষা তো হবেই এর পাশাপাশি আরও ২৫০ নাম্বারের পরীক্ষা হবে।
এই ২৫০ নাম্বারের মধ্যে মুক্তহস্ত অঙ্কন ও দৃষ্টিগ ও স্থানিক ধীরশক্তি বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
মুক্তহস্ত অঙ্কন বিষয়ে ৩ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং দৃষ্টিগ ও স্থানিক ধীরশক্তি বিষয়ে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
মুক্তহস্ত অঙ্কনের প্রতিটি প্রশ্নের মান ৭০ নাম্বার করে এবং দৃষ্টিগ এ স্থানিক ধীরশক্তির প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০ করে।
তাহলে মুক্তহস্ত অঙ্কনের ৩টি প্রশ্নেই ২১০ নাম্বার।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় কি কি নেওয়া যাবে ও কি কি নেওয়া যাবে না?
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে অনেক জিনিসই নেওয়া যাবে না।
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে বুয়েট কি ক্যালকুলেটর নেওয়া যায় কিনা। উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ।
তাদের অনুমোদিত মডেলের ক্যালকুলেটরগুলো নেওয়া যাবে। এছাড়াও কলম৷ পেন্সিল, ইরেজার, শার্পনার ইত্যাদি নেওয়া যাবে।
মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল ওয়াচ, যে কোন প্রকার ইলেকট্রনিক যন্ত্র, জ্যামিতি বক্স, পেন্সিল বক্স, স্কেল, কম্পাস ও কোন প্রকার ব্যাগ পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে আসা যাবে না।
আপনি যদি এসব নিয়ে ধরা পরেন তাহলে আপনাকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে
বিভাগ ও আসন সংখ্যা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবারই আসন সংখ্যা কমবেশি হতে থাকে। বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ ১৯৫টি, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ ৬০টি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ ১২০টি, ধাতব প্রকৌশল বিভাগে ৫০টি,মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১৮০টি, নৌ স্থাপত্য ও সামুদ্রিক প্রকৌশল বিভাগ ৫৫টি, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ ৩০টি, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ৩০টি, স্থাপত্য বিভাগ ৫৫টি, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ৩০টি আসন রয়েছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১৯৫টি, পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগ ৩০টি। বুয়েটে মোট আসন সংখ্যা ১২১৫টি।
বুয়েটে চান্স পাওয়ার উপায় – ভর্তি হওয়ার কিছু টিপস
এখন আসা যাক মূল বিষয়ে যে আপনি আদৌ বুয়েটে কিভাবে চান্স পাবেন? কয়েক হাজার বা লাখ থেকে মাত্র ১২০০ এর মতো শিক্ষার্থী প্রতিবছর বুয়েটে চান্স পায়। এমন কোনো টিউটর বা বই নেই যা আপনাকে অটোমেটিক বুয়েটে ভর্তি করিয়ে দিবে। বুয়েটে চান্স পাওয়ার জন্য মূলত প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও প্রস্তুতি।
এখন আপনার অষ্টম বা নবম শ্রেণি থেকেই একটা মাথায় চিন্তা রাখতে হবে যে আমি বুয়েটে পড়ব।
প্রথম থেকেই একটা প্রস্তুতি রাখতে হবে। নবম শ্রেণি হতেই গণিত দুটি এবং পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন ভালো করে পড়তে হবে।
এই চারটি বিষয়ের উপর বেশি করে জোর দিতে হবে।
এসএসসি ও এইচএসসিতে একটা ভালো ফলাফল করতে হবে। আপনি কোনো কোচিংয়েও ভর্তি হিতে পারেন।
এছাড়াও পুর্বের বছরের প্রশ্নগুলো দেখে ও তার সমাধান করে একটা ধারণা নেওয়া যেতে পারে।
পরীক্ষা নিয়ে তেমন একটা টেনশন বা ভয় পেলে হবে না। মনে সাহস রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।