আসসালামুয়ালাইকুম।
আশাকরি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব তা হলো রোবটিকস সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
রোবটিকস কি?
রোবট হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত একটি যন্ত্র, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা কোন ব্যক্তি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে কাজ করতে পারে।
১৯৭৯ সালে রোবট ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা রোবটের একটি সংজ্ঞা প্রদান করে, ‘রোবট হচ্ছে পুনঃপ্রোগ্রামযোগ্য বহুমুখি কাজের উপযোগী ম্যানিপুলেটর যা হরেকরকম কার্য সম্পাদন করার জন্য প্রোগ্রাম কৃত গতিতে বিভিন্ন মালামাল বা সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ, টুলস, বিশেষ ডিভাইস ইত্যাদি সরানোর জন্য ডিজাইন করা হয়’।
তাই প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের নকশা বা ডিজাইন, গঠন, পরিচালন প্রক্রিয়া, কাজ ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে রোবটিক্স বলা হয়।
রোবটিক্স শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে স্লাভিক শব্দ রোবটা থেকে যার ইংরেজি শব্দ রোবট এবং এর আভিধানিক অর্থ শ্রমিক, দাস বা কর্মী। চেক লেখক ক্যারেল ক্যাপেক ১৯২১ সালে “Rossume’s Universal Robots” নামে একটি সাইন্স ফিকশন গল্প লিখেন যাতে তিনি শ্রমিক বা কর্মী অর্থে সর্বপ্রথম রোবট শব্দটির পরিচয় দেন।
রোবটের কিছু নিয়ম রয়েছে সেগুলো হলো-
- রোবট কখনই কোন মানুষের ক্ষতি করবে না অথবা উদাসীন্য বা অপ্রবৃত্তির মাধ্যমে কাউকে ক্ষতির সুযোগ দিবে না।
- প্রথম নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়ে রোবট সবসময় মানুষের নির্দেশ মেনে চলবে।
- রোবট অবশ্যই তার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে যতক্ষণ না প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক হয়।
মানবকল্যাণে রোবট তৈরি করা হয়, মানুষের ক্ষতির জন্য নয়। তাই রোবট তৈরির সময় এইসব নিয়মগুলো মেনে রোবট তৈরি করা হয়।
রোবট কিভাবে কাজ করে?
কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে রোবট নিয়ন্ত্রিত হয়। রোবটের ইনপুট যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরিবেশ থেকে ইনপুট নেয়। অতঃপর প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণের পর অ্যাকচুয়েটর এর মাধ্যমে আউটপুট প্রকাশিত বা প্রদর্শিত হয়। একটি সাধারণ রোবটে নিচের উপাদানগুলো থাকে। যথা-
প্রোগ্রাম কৃত মস্তিষ্ক বা প্রসেসর-
রোবট এর মধ্যে এক বা একাধিক প্রসেসর থাকে যাতে রোবটটিকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে। এটি রোবটের মূল অংশ যা রোবটের চলাচল ও কর্মকান্ড সহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রন করে।
পাওয়ার সিস্টেম-
সাধারণত লেড এসিড দিয়ে রোবটের পাওয়ার দেওয়া হয়। এই ব্যাটারি রিচার্জেবল অর্থাৎ এতে পুনরায় চার্জ দেওয়া যায়। তাই কাজ করার পূর্বে রোবটকে চার্জ দেওয়া হয়।
ইলেকট্রিক সার্কিট-
রোবটের হাইড্রোলিক ও নিউমেট্রিক সিস্টেমকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
অ্যাকচুয়েটর-
রোবটের হাত পা অথবা বিশেষভাবে তৈরি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া করার জন্য কতগুলো বৈদ্যুতিক মোটরের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ ব্যবস্থা হল অ্যাকচুয়েটর। একে রোবটের হাত ও পায়ের পেশি বলেও অভিহিত করা যায়।
অনুভূতি-
অনুভূতি মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সেন্সরের মাধ্যমে রোবটেও মনুষের মতো অনুভূতি তৈরি করা হয়। কাজেই অনুভূতি রোবটের একটি বিশেষ উপাদান। রোবটের হাত বা পা কোন একটি জায়গায় স্পর্শ করলে সেই জায়গা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। কাজের ক্ষেত্রে রোবটকে ৩৬০° কোন পর্যন্ত ঘুরানো যেতে পারে।
ম্যানিপুলেশন বা পরিবর্তন করা-
রোবটের আশেপাশের বস্তুগুলোর অবস্থার পরিবর্তন বা বস্তুটি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলা হয় ম্যানিপুলেশন। সাধারণত রোবটের হাত পা এই পরিবর্তনের যাবতীয় কাজ করে থাকে।
মুভেবল বডি-
রোবটের চাকা, যান্ত্রিক পা এবং স্থানান্তর করা যায় এমন যন্ত্রপাতি থাকে।
রোবটের বৈশিষ্ট্য গুলো কি?
রোবটের সাধারণত নিম্নে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে। যথা-
- রোবট সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত যা নির্দিষ্ট কোনো কাজ অত্যন্ত দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
- রোবট দিনে ২৪ ঘন্টা এবং প্রতিদিন কোন বিরতি ছাড়াই কাজ করতে পারে।
- রোবট যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর জায়গায় কাজ করতে পারে।
- রোবট কখনো বিরক্ত হয়না বা কাজকে ঘৃণা করতে পারে না।
- এটি ঘুরতে ও স্থানান্তরিত হতে পারে এবং পরিবেশের বস্তু নিয়ে কাজ করতে পারে। এমনকি পরিবেশ অনুভব করার ক্ষমতাও আছে।
- রোবট আগে থেকে দেওয়া নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে। কিছুটা বুদ্ধিমত্তা আছে যার সাহায্যে পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে রোবট কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রোগ্রাম যোগ্য।
- দূর থেকে লেজার রশ্মি বা রেডিও সিগন্যাল এর সাহায্যেও রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হিউমেনয়েড কি?
মানব শরীরের সাথে সদৃশ রেখে যেসব রোবট তৈরি করা হয় তাদেরকে মানব সদৃশ রোবট বা হিউমেনয়েড বলে।
মানুষ দুপায়ে চলাচল করে, তার একটি মাথা, ধড়, দুটি হাত ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য ও সদৃশ রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে হিউমেনয়েড তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ অ্যান্ড্রয়েডের কথা ধরা যাক। অ্যান্ড্রয়েড একটি মানব সদৃশ রোবট বা হিউমেনয়েড যা সাধারণত সিনেমা সাইন্স ফিকশন গল্পে দেখা যায়। অথবা হিউমেনয়েড সোফিয়া। বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মানব সদৃশ রোবট সোফিয়া।
হিউমেনয়েড সাধারণত মানুষের সাথে উভমুখী যোগাযোগ রেখে নির্দিষ্ট কাজ কর্ম করতে পারে।
তাহলে আজ এই পর্যন্তই, ইনশাআল্লাহ কথা হবে পরের পোস্টে। দোয়া করি আপনারা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ।