সত্য আর মিথ্যার মাঝখানে কি আছে? কেই বা এর পার্থক্য করে

সত্য’ আর ‘মিথ্যা’ একে অপরের বিপরীত দুটি শব্দ। কিন্তু এই দুটি শব্দ মানুষকে সৎ ও অসৎ এই দুই ভাগে ভাগ করে। পৃথিবীর মাঝে সত্য ও মিথ্যার সমন্বয় রয়েছে। পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন খাঁটি নয় ঠিক তেমনি সকল মানুষ ফেইক বা মিথ্যা নয়। যারা খাঁটি মনের মানুষ তাদের সবকিছুই সত্য।

তারা হচ্ছে খোলা বইয়ের মতো। বই পড়ে আমরা যেমন বইয়ের ভিতরের বিষয় সমূহকে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারি ঠিক তেমনি তাদেরকে দেখেই আমরা তাদের মধ্যকার সত্যকে উপলব্ধি করতে পারি।তাদের বাহিরের থেকে দেখতে যেমন সহজ সরল, ভিতরটাও তেমনি পরিষ্কার।

মিথ্যে মানুষকে আমরা যেমনটি দেখতে পাই তারা আসলে তেমনটি হয় না। যেমন কয়লার ভিতরে সোনা পাওয়া যায় তেমনি ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক মিথ্যে মানুষ। তাদেরকে বাহিরে থেকে দেখতে দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল মনে হলেও ভিতরটা অন্ধকার। মিথ্যে মানুষ সমাজে প্রতিনিয়ত নিখুঁত অভিনয় করে যায়। তবে সমাজের অধিকাংশ মানুষ সত্য ও মিথ্যার মাঝামাঝি অবস্থান করে। নিজেকে কখনো প্রশ্ন করে দেখেছো তুমি সত্য নাকি মিথ্যা?

কেই বা এই সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করে। তোমার পোশাকের রং যদি কারো কাছে সঠিক হয় তাহলে তোমার পোশাক পরিধান করার ধরণ কারো কাছে ভুল। কারো কাছে তোমাকে অপরূপ সুন্দর মনে হলেও কারো কাছে তুমি কুৎসিত। এই সঠিক আর ভুলের মাঝখানে কি আছে? যেটা সঠিকও নয় আবার ভুলও নয়? আর সঠিক নয় তাহলে ভুল কেনো নয়, আবার ভুল তাহলে সঠিক কেনো লাগে এই সত্য – মিথ্যার পার্থক্য আসলে কেই বা করতে পারে।

তাই হয়তো গুরুজনেরা বলে গেছেন:
মুখের উপর মুখোশ থাকে,
মিথ্যা সকল আয়না।
মানুষ তুমি যতই চিনো
বেইমান চিনা যায় না।

আমাদের সমাজে অনেকেই মুখোশধারী। তারা নিজেদের সত্যকে লুকিয়ে রাখার জন্য মিথ্যার মুখোশ পরে থাকে। সত্যকে আড়াল করতে চায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে। তারা ভুলে যায় সত্য মিথ্যার তুলনায় হাজার গুণ ভাড়ী। সত্যকে মিথ্যার পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। একটা সত্যকে গোপন করতে পাহাড় সমান মিথ্যার প্রয়োজন হয়। আর যখন এই মিথ্যার পাহাড়ের ওজন মানুষ বহন করতে ব্যর্থ হয় তখন সত্যের সামান্য জ্বলকানিতে ভেঙে যায় মিথ্যার পাহাড়। ধ্বংস হয়ে যায় মানুষের জীবন।

আমরা সকলেই সত্য মিথ্যার নিগড়ে বন্দী। আমরা এমন এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবনকে অতিক্রম করছি যে আমরা আসল আর নকলের মধ্যে তফাৎ করতে পারি না। আসল ও নকলকে আলাদা করতে পারি না। কারণ আমাদের কাছে আসল ও নকলকে আলাদা করার মতো সময় বা মানসিকতা কোনোটাই নেই। থাকলেই বা কতটুকু আছে? কতজনের কাছে আছে? তাই আমরা সত্যকে দূরে ঠেলে দেই এবং মিথ্যাকে আলিঙ্গন করি। প্রকৃতকে অগ্রাহ্য করে কৃত্রিমতাকে উদযাপন করি। সত্য ও মিথ্যার সন্ধান আমরা করি না কারণ সত্য মিথ্যার সন্ধানের জন্য অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন যা আমাদের কাছে নেই।

‘সত্য’ আর ‘মিথ্যা’ এই দুটি হলো হীরা ও কাঁচের মতো। হীরা প্রথম অবস্থায় খুব একটা উজ্জ্বলতা প্রকাশ না করলেও কাঁচ প্রথম অবস্থায় ই উজ্জ্বল। তেমনি প্রথম অবস্থায় সত্যের আলো বুঝা না গেলেও মিথ্যা আমাদের কাছে চকচকে মনে হয়। তাই আমরা হীরার উজ্জ্বল সত্যকে ছুড়ে ফেলে মিথ্যা নামক কাঁচকে তুলে নেই।

তাই সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে। সত্য প্রকাশে ভয় পেলে চলবে না। নিজের অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করে সত্যের পথে অগ্রসর হতে হবে। মিথ্যাকে আকড়ে ধরে সাময়িক সুখ পাওয়া গেলেও সেটা চিরস্থায়ী নয়। সত্যের পথে বাধা থাকলেও মনে রাখতে হবে সত্যের জয় সু-নিশ্চিত। সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই। তাই নিজের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে সত্যের পথে অগ্রসর হতে পারলে সফলতা নিশ্চিত। সত্যই মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।

মিথ্যা মানুষকে হতাশা গ্রস্থ করে। মিথ্যাবাদী মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। মিথ্যার মাঝে মুক্তির সন্ধান মেলে না মিথ্যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জীবনে মিথ্যার শাস্তি নিশ্চিত। মিথ্যাবাদী মানুষ সব জায়গায় অপমানিত হয়। এতে সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মিথ্যা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তাই মিথ্যাবাদী মানুষ সত্যের আলোতে নিজেকে আলোকিত করতে পারে না।

মিথ্যাকে পরিত্যাগ করুন। সত্যের পথে চলুন। নিজে সত্য কথা বললে আশেপাশের সকল কিছুকেই সত্য মনে হয়। আবার মিথ্যা কথা বললে চারপাশের সকল কিছুকেই মিথ্যা মনে হয়।

সত্য -মিথ্যার মাঝখানে মনুষ্যত্ব ও বিবেকের অবস্থান। একমাত্র মনুষ্যত্ব ও বিবেকবোধের মাধ্যমেই সত্য-মিথ্যা ,ভুল-সঠিক এগুলোর পার্থক্য উপলব্ধি যায়। তাই নিজের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা সর্বোত্তম মানব ধর্ম।

এজন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই“।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন