সম্মানিত ভাই !
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, জাতিসত্তা ও সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণে তরুণ দুই প্রকার। যাদের মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট ব্যবধান।
প্রথমত: ওই তরুণ–যার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্য থাকে ধন-সম্পদ, মাদক, অবাধ যৌনসম্ভোগ ও খ্যাতি লাভ।
দ্বিতীয়তঃ ওই তরুণ–যে তার জীবনের আরাধ্য লক্ষ্য হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে যাবতীয় ত্যাগ-তিতীক্ষা বরদাশত করতে প্রস্তুত। একজন আলেম বা মুবাল্লিগ হিসেবে তৈরি হয় সমাজ সংস্কার ও আত্মশুদ্ধির কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে আগ্রহী। একজন গাজি বা মুজাহিদ হয়ে আত্মিকভাবে নিজের বুকের তত্ত্ব রক্তে পৃথিবীতে শান্তির রঙ্গে রাঙ্গানো অভিলাষী।
অনেক পার্থক্য। বহু ব্যবধান। একজন জাগতিক যশ-খ্যাতি আর আনন্দ ফুর্তির উপকরণের মাঝে নিজের মূল্যবান জীবন ক্ষয় করে চিরস্থায়ী আখেরাতের জীবন ধ্বংস করে দেয়। অপরজনের আকাঙ্ক্ষা–কি করে জান্নাতের অধিবাসীদের খাতায় নিজের নাম লেখা যায়––
ان المتقين فى جنات ونهر -في مقعد صدق عند مليك مقتدر
‘নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে । যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।’
[সূরা কামার: আয়াত 54-55]
প্রিয় ভাই!
অনেক ব্যবধান–ওই তরুণের মাঝে, যে মুসলিম জাতির সমস্যা-দুর্দশা আর ভবিষ্যতের দুর্ভোগের চিন্তায় গভীর উদ্বেগে রাত কাটায়; পক্ষান্তরে ওই তরুণ–অসদ প্রিয়ার বিরহে যার রাতের ঘুম উধাও!
জি হ্যাঁ!
এই দুইয়ের ব্যবধানটি বিশাল। ওই তরুণদের মধ্যে যে কেবল এই লক্ষ্যে ভিনদেশের করে বেড়ায়–যাতে করে প্রবৃত্তির যথার্থ অনুসরণ করা যেতে পারে। মন যা চায় তা করা সম্ভব হয় নিঃসংকোচে। পতিতার বেপরোয়া নারীদের সাথে নির্জনে রাত কাটানো যায়। শেষে–লজ্জা, পুরুষত্ব, দিন, চরিত্র, সম্পদ, স্বাস্থ্য এবং ইহকাল–পরকালের চির বঞ্চিত হয়ে ঘরে ফিরে।
অপরদিকে ,ওই যুবক–যে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকার জন্য,মুসলিম জাতির অবস্থা পর্যবেক্ষণের নিমিত্তে এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের লক্ষ্যে আল্লাহর রাস্তায় সফর করে; সব সময় সে তার মুসলিম ভাইদের যাবতীয় দুর্ভোগ–দুর্দশা লাগবে কার্যকর অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষায় দিনাতিপাত করে।
সম্মানিত ভাই!
স্পষ্ট পার্থক্য উপরোক্ত দুই শ্রেণীর তরুণদের মাঝে। কোথাও ঐসব তরুণের আলোচনা হলে সেখানে হৈচৈ পড়ে যায়। মানুষ মাথা তুলে তুলে তাকে দেখে। তার কথায় ঝরে পড়ে অমৃত। স্মরণ হয় আল্লাহকে। দ্বীনি প্রেরণায় উজ্জীবিত হয় মন প্রাণ। জেগে ওঠে আত্মা। এর কারণ কি? কারণ সে প্রকৃত আলেম। মুবাল্লিগ। মুজাহিদ। খুব উন্নত গুণ ও কৃতিত্বের অধিকারী সে। উত্তম চরিত্র ও বরকত মন্ডিত মজলিসের সাথী। কথা কাজে মিল আছে তার। সহাস্য বদনে সবার সাথে কথা বলে। যে-ই তার দিকে তাকায়, চোখ জুড়িয়ে যায় হিমেল আমিরে। নিজেও কোরআন -হাদিস পড়ে এবং অন্যকেও পড়ায়। হাদিসের অগাধ জ্ঞান তার বুকে। দোয়া, যিকির, ইবাদত ও মসজিদের সাথে সারাক্ষণ মন টাঙ্গানো
অপরদিকে, ওই তরুণ-যাকে স্মরণ করা হয় তাকে কুশ্রী ও অশ্রাব্য ভাষায়। গালি–গালাজের তীর ত্যাগ করা থাকে তার দিকে। অভিশাপের জোয়ারে ভাসতে থাকি ওই কুলাঙ্গার। কারণ, সে নেশাখোর মাতাল। সুদ ঘুষ ছাড়া তার আর চলে না। পঙ্কিল চরিত্রে নিজেকে ভ্রষ্ট করে ছেড়েছে। আপত্তিকর এলাকায় তার আনাগোনা। সবসময় যার তার সাথে ঝগড়া করে। ঝামেলা পাকায়। এক কথায় যাবতীয় মন্দ আচরণের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে সে।
উপরোক্ত দুই তরুণের মাঝে কি যেনতেন ব্যবধান! আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
অনেক ব্যবধান ওই লোক যে কেবল আল্লাহ তাআলার হালাল কৃত বস্তু ব্যবহার করে । তার স্বাস্থ্য ও সুস্থতা, শান্তি ও সঠিক পথে অবিচল জীবনাচার দেখে আপনার ঈর্ষা হবে। কারণ হচ্ছে–সে আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করে দিয়েছেন। বিপরীত দিকে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা ও পাপাচারে নিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, আল্লাহর নাফরমানীর কারণে আজ সে নানা রোগের শিকার । ফলশ্রুতিতে সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ও তৃপ্তি তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। শয়ন কক্ষে সে এমনভাবে থরথর করে কাঁপে যেন তার বিছানায় কাঁটা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে বিশ্রাম নিতে চায়। ঘুম যেতে চায়। কিন্তু নিদ্রা উড়ে গেছে তার দু’চোখ থেকে। কারণ, তার দুঃখ-দুর্দশার যে কালো মেঘ তার মন মস্তিষ্কের আকাশের চেয়ে আছে-তা কি কখনো তাকে শান্তির ঘুম পাড়তে দেবে?
হ্যাঁ, হ্যাঁ!আল্লাহকে সন্তুষ্ট কারী ব্যক্তি আর আল্লাহকে অসন্তুষ্ট কারী ব্যক্তির মাঝে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে নিয়েছে, সে জেলখানায় বন্দি থাকলেও, কিংবা কোন রোগে ভুগলেও পৃথিবী তার সামনে প্রশস্ত ও উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে নেবে, সে যাবতীয় দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্ত থাকবে মুক্ত । আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবেন, তার সামনে আরাম-আয়েশের যত উপকরণই থাকুক না কেন আল্লাহ সে গুলোকে তার দুর্দশা বাড়াবার মাধ্যম বানিয়ে দিবেন। ধন সম্পদ তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলবে। পাপ তার সুস্থতা ও নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটাবে। সন্তান -সন্তুতি তার জন্য বাতি জ্বালার কারন হবে। তার জ্ঞান তাকে মানসিকভাবে পড়াবে। এমনকি, যা কিছু আল্লাহ তাআলা তাকে এ দুনিয়াতে দান করেছিলেন, সবকিছুই তার জন্য দুর্ভাগ্য অপদস্থতা বয়ে আনবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা তার ওপর সন্তুষ্ট নন। সুতরাং তার কাছে থাকা সবকিছুই বাড়িয়ে তুলবে তার যন্ত্রণা। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন–
فلا تعجبك اموالهم ولا اولادهم انما يريد الله ليعذبهم بها في الحياه الدنيا وتزهق انفسهم وهم كافرون
‘অতএব তোমাকে যেন মুগ্ধ না করে তাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদি।আল্লাহ এর দ্বারা কেবল তাদের আজাদ দিতে চান দুনিয়ার জীবনে এবং তাদের জান বের হবে কাফির অবস্থায় ।'[সূরা তাওবা: আয়াত 55]
বিশাল পার্থক্য ওই দুজনের মাঝে। যেইসব ভাগ্যবান সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে। খুশি তাকে পিতা-মাতাকে। শান্তি অনুভব করে তাদের সেবায়। সে ঘর থেকে বেরোবার সময় এই বলে মাতার জন্য দোয়া করে–‘হে আমার ছেলে! আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন।’মাকে সে মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখে।‘আসসালামু আলাইকুম’বলে পিতামাতার জন্য রহমতের দোয়া করে বিদায় নেয়। এদিকে আরেকজন যখন পিতা-মাতার কাছে যায়, তখন পিতা-মাতা তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন। তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কারণ, সে তাদেরকে কষ্ট দেয়। তাদের কোন যত্ন নেয় না। খোঁজ খবর রাখে না। তাই সকাল সন্ধ্যা তারা তাকে অভিশাপ দিয়ে বলে–‘হে আল্লাহ! তার কপালে যদি হেদায়েত না থাকে, তাকে ধ্বংস করে দিন।’যাতে করে তারা এই অভদ্র ছেলে মন্দ আচরণ ও নির্মমতা থেকে রেহাই পায়। বিশাল পার্থক্য এ দুজনের মাঝে।
আমার প্রিয় ভাই!
মুসলিম জাতির অধিকাংশ যুবকের চিত্র আছে এমনই। এদের মধ্যে শত নেককার আছে। আছে অসৎ এবং বদকারও। কিন্তু বিশাল পার্থক্য এর দুই শ্রেণীর মাঝে। এরা উভয়ে কখনো সমান হতে পারে না।
নিজেকে বদলান সমাজ বদলে যাবে। জীবন বদলে যাবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহীহ বুঝ দান করুক।
আমিন!!
দেখে হবে পরবর্তী পোস্টে। ইনশাআল্লাহ!!