আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় শিক্ষার্থীরা সবাই কেমন আছেন? সবাইকে grathor.com এই স্বাগতম! আজকে আমি আমার এই পোস্টটি আপনাদের কে অষ্টম শ্রেণির বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন ও আপনাদের সুবিধার্থে একটি নমুনা উত্তর সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় এই লিখে দিব।
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ-
প্রবন্ধ রচনা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শিরোনামে ৫০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ রচনা লিখ’।
ভূমিকা- বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা সৈনিক। তিনি জাতির পিতা। বাঙালির অধিকার ও বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের গণমানুষের মুক্তির জন্য পরিচালিত সকল আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রধান চালিকাশক্তি। তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে আমরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি বজ্রকন্ঠের অধিকারী। তিনি সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা মহান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান।এ জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জন্ম ও পরিচয় -বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ লুৎফর রহমান ও সায়রা খাতুনের সন্তান আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষাজীবন-
বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে পাশ করেন। বি.এ পাস করেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।
রাজনৈতিক জীবন ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান –
তিনি ছাত্র জীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। ছাত্রজীবনে তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন ও রাজনীতি সংলগ্ন হয়ে ওঠেন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। তৎকালীন যেসব ছাত্র ও তরুন প্রচেষ্টায় এ পরিষদ গঠিত হয় তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ অধিকাংশ ছাত্র- নেতা গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেন। ফলে বারবার তাকে জেল খাটতে হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরের বিরোধীদলের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাদেশ সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ছয় দফা আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এই ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব বৃন্দকে গোপন বিচারের মাধ্যমে নেতৃত্ব শূন্য করে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া । ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে আইউব খানের স্বৈরশাসন টিকে থাকতে পারেনি।২২শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সব রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। কারামুক্ত শেখ মুজিবকে ২৩শে ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ –
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের শতকরা ৮০ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত ঝাপিয়ে পড়ে ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়
গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের স্বাধীনতাকামী জনগণে।দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাঙালির বিজয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।তিনিই জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। এভাবে শুধু বাঙালি জাতি নয়, বাংলা ভাষার মর্যাদা কে তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড-
১৯৭৫ সালের ২৫ শে আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের আক্রমণে ও নিষ্ঠুর আঘাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। যে মাটির সুর নির্দেশে প্রকৃতির পরিচর্যা তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেড়ে উঠেছিলেন সেই মাটির সান্নিধে তিনি শেষ -সজ্যা গ্রহণ করেছেন।
উপসংহার- জাতির মহান নেতা হলে যে সমস্ত গুণের প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু তার সবই ছিল। তিনি ছিলেন স্বাধীনতাপ্রিয় সকল প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি ও অধিকার অর্জনের সংগ্রামের কোন প্রকার ভীতি কখনো তাকে বিচলিত করে। কবির উপলব্ধিই যর্থার্থ,
‘ যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা গৌরী, মেঘনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’।
ধন্যবাদ।