গরুর কোন রোগের কি ঔষধ | গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। গরুর কোন রোগের কি ঔষধ | গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা, গরুর কি কি রোগ হয় ও তার প্রতিকার বা ওষুধ কি তা নিয়েই আজকের এই পোস্টে মূলত আলোচনা করা হবে। আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।

গবাদি পশুর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি হলো গরু। গরু আমদের জন্য অনেক উপকারী ও ভালো প্রাণী। এরা আমাদের দুধ ও মাংস সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এ গরুর রয়েছে বিভিন্ন ধরণের রোগ। যেসকল রোগের জন্য খামারিরা প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ে। এর মধ্যে অনেক রোগই রয়েছে খুবই সাধারণ আবার কিছু রয়েছে অত্যন্ত জটিল বা জীবননাশক। আবার অনেক রোগ রয়েছে যা হলো সংক্রামক।

গবাদি পশু গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি

গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা

গরুর কোনো সমস্যা দেখলে বা গরু কোনো রোগে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে ভালো হয় যত দ্রুত পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া। যদি রোগ ওতটা মারাত্মক বা ক্ষতিকরা না হয় সেক্ষেত্রে ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন। যেমন ধরুন গরুর শরীর একটু কেটে গিয়েছে কিংবা ছাল উঠে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি সে জায়গায় গরম পানি সাথে হেক্সিসোল বা সে জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যদি গরুটির অনেক বড়ভাবে কাটে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আবার যদি দেখেন খামারের কোনো একটি গরুর কৃমি হয়েছে তাহলে কৃমিনাশক ওষুধ দিন। যে গরুটি কৃমি আক্রান্ত শুধু সে গরুই নয় খামারের সব গরুকে একসাথে ওষুধ দিন।

সাধারণত গরুর কি কি রোগ হয়

গরুর অনেক রোগ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ রোগেরই ওষুধ বা টিকা রয়েছে। নিচে কয়েকটি রোগ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছিঃ

বাদলা রোগ

গরুর বাদলা রোগ

এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। বৃষ্টির মৌসুমে মূলত এ রোগ হয় বলে একে বাদলা রোগ বলা হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। বন্যার পানির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। আবার সে পানি যদি ঘাসে লাগে এবং সে ঘাস যদি আপনি গরুকে খাওয়ান তবে গরুটি বাদলা রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও কোনো ডোবা বা পুকুরের পানিতে যদি বাদলা রোগের জীবাণু থাকে আর সেই পানি যদি আপনার গরুকে পান করান তাহলে গরুগুলো বাদলা রোগে আক্রান্ত হবে। এ রোগে সাধারণ জ্বর ওঠে। তাছাড়াও ঘাড়, কাধ ও কোমড়ের মাংস ফুলে ওঠে। তাছাড়া খাবারের প্রতি অনিহাও দেখা দিতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করানো হলে, গরু মারাও যেতে পারে!

ক্ষুরা রোগ

গরুর ক্ষুরা রোগ

একে কোথাও কোথাও ক্ষুরাচল, বাতা, বাতানা রোগ ইত্যাদিও বলা হয়। এটি একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। যেকোনো বয়সের গরুই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু মৃত্যুর হার বাছুরের বেশি। এ রোগ মূলত বাতাসের মাধ্যমে সহজেই ছড়াতে পারে। এছাড়াও এ রোগ সমৃদ্ধ খাবার বা পানি খাওয়ালেও গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও জ্বর হতে পারে। মুখ দিয়ে লালা পড়ে ও গরু খেতে পারে না। ক্ষুরায় ঘা হয় যার ফলশ্রুতিতে তীব্র ব্যথা হয়। ফলে গরুর হাঁটতে বা কোনো কাজ করতে কষ্ট হয়।

গলাফুলা রোগ

গরুর গলাফুলা রোগ

এটিও একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। বর্ষাকালে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। সাধারণ অবস্থাতেও এ রোগ গরুর মধ্যে থাকতে পারে। যখন গরুটি দুর্বল হয়ে পড়ে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন এই রোগের জীবাণু তার কাজ শুরু করে। একটি আক্রান্ত গরুর সংস্পর্শে এলে সুস্থ গরুগুলোও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। গরম বা স্যাতস্যাতে স্থানে থাকলেও এ রোগ আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ঠাণ্ডার মধ্যে থাকলে কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভিজলেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীর শ্বাস নেওয়ার সময় আওয়াজ হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা হতে পারে। রোগের মাত্রা তীব্র হলে গলা, চোয়াল, পেট, বুক ও কানের কিছু অংশ ফুলে যায়। রোগ আরও তীব্র হলে জ্বর হও ও খাবারের প্রতি অনীহা হয় এবং পরবর্তীতে মারা যায়।

তড়কা রোগ

গরুর তড়কা রোগ

এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। খাবারের সাথে এ রোগ আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মাটিতে এ রোগের জীবাণু অনেক বছর বেঁচে থাকতে পারে। এটি একটি মারাত্মক রোগ। বর্ষাকালের প্রথম দিকে মূলত এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। এ রোগ মূলত বন্যা ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। ভিজে বা স্যাতস্যাতে জমির ঘাস খাওয়ালে গরু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের জীবাণু দ্বারা দূষিত ডোবা ও পুকুরের পানি খাওয়ালেও গরুর এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গরুর জ্বর ওঠে। খুব তাড়াতাড়ি শ্বাস নিতে থাকে। চোখের পর্দা লাল হতে থাকে। একসম গরুটি মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকবে।

গরুর কোন রোগের কি ঔষধ দেওয়া উচিত?

বাদলা রোগঃ সকল প্রাণীকে বাদলা রোগের টিকা দিন। ছয় মাস বয়স থেকে টিকা দেওয়া শুরু করুন। দুই বছর বয়স পর্যন্ত টিকা দিতে থাকুন। পঁচা ডোবা বা পুকুরের পানি খাওয়ানো পরিহার করুন। আক্রান্ত প্রাণীকে অন্যান্য প্রাণীর থেকে আলাদা রাখুন।

ক্ষুরা রোগঃ খামারের সব গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিন। এ রোগে আক্রান্ত গরুকে অন্যান্য গরু থেকে আলাদা রাখুন। খামার জীবনুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করুন। প্রাণীর ক্ষতস্থান থাকলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করুন।

গলাফুলা রোগঃ সকল প্রাণীকে গলাফুলা রোগের টিকা দিন। ছয় মাস বয়স থেকে টিকা দেওয়া শুরু করুন। আক্রান্ত প্রাণীকে আলাদা রাখুন। আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রাণীকে মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখুন।

তড়কা রোগঃ খামার নিয়মিত জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করুন। সকল প্রাণীকে তড়কা রোগের টিকা দিন। ছয় মাস বয়স থেকে টিকা দেওয়া শুরু করুন। এক বছর টিকা দিতে হবে। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

গরু অসুস্থ হলে সবশেষ কোথায় যোগাযোগ করা উচিত?

যদি দেখেন যে আপনার গরুর শরীর খুব একটা ভালো না কিংবা আপনার যদি মনে হয় যে গরুটি কোনো রোগে আক্রান্ত তাহলে অবশ্যই গরুটিকে দ্রুত পশু হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। এবং সেখানে গিয়ে ডাক্তারকে দেখাবেন। তারপর ডাক্তার যে ওষুধ দেয় তা যথাসম্ভব দ্রুত গরুকে খাওয়ানো শুরু করুন।

গরুর কোন রোগের কি ঔষধ | গরুর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts