জীবন রক্ষায় রক্তদান।

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। দুস্থ মানবতার পাশে দাঁড়ানো প্রকৃত মানুষের স্বাভাবধর্ম। এমন মানুষ চিরকাল আত্মত্যাগের মন্ত্রে মানুষকে দিয়েছে মহিমান্বিত আসন। যুগে যুগে এরাই ক্ষুদিতকে দিয়েছে অন্ন, নিরাশ্রয় কে দিয়েছে আশ্রয়, দুর্গত কে দিয়েছে ত্রাণ। তাই যুগে যুগে কাব্য গাঁথায় উচ্চারিত হয়েছে মানব সেবার জয় গান। অন্যের জীবন বাঁচাতে “রক্তদান” আজকের দিনে রচনা করেছে মনব সেবার নতুন অধ্যায়।

রক্ত শরীরের অপরিহার্য উপাদান- প্রাণের শক্তি উৎস। রক্ত আমাদের দেয় প্রাণের উষ্ণতা, দেয় জীবনীশক্তি। শরীরে রক্ত থাকলেই মানুষ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তের অভাব পরলেই টান পড়ে প্রাণশক্তিতে। শরীরে রক্তশূন্যতা ঘটলে শরীর হয়ে পরে অসুস্থ। দূর্ঘটায় রক্তক্ষরণে শরীর রক্তহীন হয়ে পড়লে ঘণিয়ে আসে মৃত্যু। রক্তে ক্যান্সার বাসা বাঁধলে অকালে ঘনিয়ে আসে মৃত্যু। কিন্তু বিজ্ঞান আজ আবিষ্কার করেছে; রক্তস্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতায় আক্রান্ত মানুষের দেহে রক্ত দিতে পারলে আর্ত মরণাপন্ন মানুষ আবার সজীব হয়ে উঠে নতুন প্রাণশক্তিতে। হৃদপিন্ড ও মস্তিষ্কের দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী অস্ত্রোপচার,অস্থিমজ্জা ও যকৃৎ প্রতিস্থাপন এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় অপরিহার্যভাবে রক্ত সঞ্চালনের ওপর নির্ভরশীল। তাই বিপন্ন মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষ ছুটে আসে মানুষের কাছে। সুস্থ মানুষ তার দেহের রক্ত দিতে এগিয়ে আসে অকালে ঝরে যাওয়ার হাত থেকে অন্যকে বাঁচাতে।

রক্ত দানের নিয়ম : একদেহের রক্ত অন্য দেহে সঞ্চালনের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের রক্ত পেলেই তা রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা যায়। রক্তদাতা কে সুস্থ-সবল এবং (১৮-৫৭) বছর বয়সী হতে হবে। দাতার শরীরের তাপমাত্রা হতে হবে ৯৯ ডিগ্রির নিচে।রক্তচাপ থাকতে হবে ১০০/৬০ থেকে ২০০/৯০ – এর মধ্যে। রক্তদাতাকে হতে হবে জটিল রোগমুক্ত। রক্তদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় একজন চিকৎসকের তত্ত্বাবধানে। একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারে। সুস্থ ,সবল ও নীরোগ দেহ থেকে এককালীন ২৫০ সিসি রক্রপ্রদান ও সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন আগে থেকে।

রক্তদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা : রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তগ্রহীতা ও রক্তদাতা কে একই শ্রেণীর রক্তের অধিকারী হতে হবে।রক্তের গ্রুপ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে গ্রহীতার রক্তে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন ক্ষেত্রে গ্রহীতার মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাছাড়া রক্তদাতার রক্তে কোনো সংক্রামক রোগের জীবাণু থাকলে কিংবা রক্তদান প্রতিক্রিয়ায় জীবানুমুক্ত সুচ, ব্যাগ ও সরঞ্জামাদি যদি ব্যবহৃত না হয় তবে রক্ত গ্রহিতাও ম্যালেরিয়া,জন্ডিস, এইডস বা এমনি ধরনের কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পরে। তাছাড়া গরীব ,অসুস্থ ও পেশাদার রক্তদাতাদের রক্ত প্রায়শ ঝুঁকিপূর্ণ হয়।এদের চেয়ে সেচ্ছায় দানকারীদের রক্ত অনেক বেশি নিরাপদ।

দেশ ও সমাজের মহৎ কর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম মহৎ কর্ম হলো রক্ত দান। বিভিন্ন আলোচনা সভা,সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে সেচ্চায় রক্তদানের বেপারে জনগণকে অবহিত,সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

জাতি-ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষেরই রক্ত লাল। তাই রক্ত দান ঘুচিয়ে দেয়
সাদা-কালোর ভেদাভেদ। ঘুচিয়ে দেয় ধর্মীয় ব্যাবধান। রক্তদান তাই সর্বমানবিক এক মহান সেবাকর্ম।এক ব্যাগ রক্ত একজন মুমূর্ষ ব্যাক্তির জীবন বাঁচাতে পারে। এ প্রেক্ষাপটেই একুশ শতকের মানুষের কাছে মহান স্বাস্থ্যবার্তা :

[ ] “জীবন রক্ষায় আমিই দেব নিরাপদ রক্ত।”

তাই নিরাপদ রক্ত দিতে এগিয়ে আসতে হবে,বাঁচাতে হবে অমূল্য জীবন। শামিল হতে হবে
“রক্ত দিন,জীবন বাঁচান ! আন্দোলনে ।”

Related Posts

6 Comments

মন্তব্য করুন