বিগত কয়েক বছরে আগের তুলনায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে দ্বিগুণ সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারন এর সহযোগিতায় বিভিন্ন উন্নত জাতের ধান চাষ হচ্ছে। কিন্তু ধানের আধিক ফলন পেতে কাঙ্ক্ষিত অর্জনে ভাগ বসাচ্ছে দেশি-বিদেশি আগাছা। কিভাবে এই আগাছা দূর করা যায় এবং ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম আমরা অনেকেই জানিনা। ধানের আবাদকৃত জমিতে যে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ দেখা যায় তাই আগাছা। এই আগাছা ধানের অথবা অন্যান্য ফসলের বৃদ্ধিতে ও পুষ্টি প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে। এটি ধানসহ অন্যান্য ফসলের খাদ্য, আলো, বাতাস ও পানিতে ভাগ বসিয়ে খাদ্যর স্বাভাবিক উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে আগাছার কারনে ধান,গম,সরিষা,ভুট্টা বিভিন্ন সবজির ফুল,ফল ও কুচির সংখ্যা কমে যায়। তাই সঠিক উপায়ে আগাছা দমন করা ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের ধানের আগাছানাশক পাওয়া যায়। এসব আগাছানাশক ব্যবহার করে কম খরচে খুব সহজেই আগাছা দমন করা যায়। বাজারে তিন ধরনের আগাছানাশক পাওয়া যায়। যথা- তরল,দানাদান এবং পাউডার। সবগুলো কার্যকারিতা ভালো । আমাদের কৃষকেরা এই তিনটি আগাছানাশক ব্যবহার করে ভালো সুফল পাচ্ছে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে,এই আগাছানাশক ব্যবহারের পদ্ধতি না জানার কারনে অনেক কৃষক নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগাছানাশক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। এর সঠিক ব্যবহার না জানলে মাঠ ফসলের পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাছাড়া বাজারে নানা ধরনের নকল আগাছানাশক বিক্রি করে থাকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বাজার থেকে সেগুলো কিনে নিয়ে ব্যবহার করে ফসলের বিরাট ক্ষতি করে ফেলছে। একদিকে যেমন-ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে,অন্যদিকে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম
বাজারে বিভিন্ন নামিদামী কোম্পানীর আগাছানাশক পাওয়া যায়। চলুন তাহলে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম জেনে নিই।
ACI Crop Care আগাছানাশক
৩.Paraxon 20 SL- প্যারাক্সোন ২০ এস এল
৪. Sunup 48 SL- সানআপ ৪৮ এস এল
৫. SUPER CARE 25EC- সুপারকেয়ার ২৫ ই সি
৬. Super Power 10 Wp- সুপারপাওয়ার ১০ ডব্লিউ পি
৭. Superheat 500 EC- সুপারহিট ৫০০ ই সি
৮. Supermix 18 WP- সুপারমিক্স ১৮ ডব্লিউ পি
৯. Weednil 5 EC- উইডনীল ৫ ই সি
আসল আকিক পাথর চেনার উপায়
১০. Xtrapower 20 WP- এক্সটাপাওয়ার ২০ ডব্লিউ পি
১২. Eros 6.15 GR- ইরোস ৬.১৫ জি আর
১৩. Pendulam 33 EC- পেন্ডুলাম ৩৩ ইসি
১৪. Prism 27.5 SC – প্রিজম ২৭.৫ এস সি
এছাড়াও গ্রানাইট ২৪০ এসসি,পেনিডা ৩৩ ইসি,কমিট ৫০০ ইসি,মেচেটি ৫জি,ফুজিয়ন ৪০ ইসি,ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি ইত্যাদি।
ব্যাবিলনের আগাছানাশক
১. ক্রস আউট ৩০ ডব্লিউ পি
২. গ্রাসক্লিন ১০ ডব্লিউ পি
৩. নিষ্কৃতি ৩৩ ইসি
৪. সিভাফিট ৫০ ইসি
৫. ব্লেড ৭২ এস এল
৬. ব্যাবিসেট ৪১ এস এল
৭. মুকুট ১০ ইসি
৮. সিস্টেম প্লাস ২০ এস এল
ব্যাবিলন এগ্রিসাইন্স লিমিটেডের বিভিন্ন ধরণের আগাছানাশক সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
সিনজেনটা কোম্পানির ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম
১. রিফিট ৫০০ ইসি
২. লেজার ১০ ডব্লিউপি
৩. লগরান ৭৫ ডব্লিউজি
ইনতেফা কোম্পানীর ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম
১. নাফিজ ৪০ এই ই
২. সামা ২০ ডব্লিউডিজি
৩. জাবা ৫৫ এস সি
৪. দাজ ২৫ ইসি
৫. দারা ১৫ ইসি
৬. দাফা ৩৩ ইসি
৭. আজাফা ১২.৩ ইসি
৮. নামির ৩২ ডব্লিউপি
৯. শাবিল ১৮ ডব্লিউপি
১০. তুবা ৭০ ডব্লিউপি
১১. সুয়া ৯ ইসি
১২. লুবাদা ১০ ডব্লিউপি
উপরের উল্লেখিত ইনতেফা কোম্পানীর সকল আগাছানাশক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই জেনে নিবেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বিভিন্ন আগাছা পরিচিতি
আমাদের ফসলের জমিতে বিভিন্ন আগাছা জন্মাতে দেখা যায়। এমন আগাছা চোখে পড়ে সেগুলো নামও হয়তো জানি না,দমন করা তো দূরের কথা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রায় ২৫০ প্রজাতির আগাছা রয়েছে যা আমাদের কমিয়ে দিচ্ছে ফসলের উৎপাদন। চলুন কয়েকটি আগাছার নাম জেনে নিই- ফোসকা বেগুন, থানকুনি, বন ধনিয়া, বন গাজর, কাঁটা মেহেদী,কাঁটা নটে শাক, নটে শাক, মালঞ্চ, টোপাপানা, কচু , চাঁদমালা, ছোট কুট, হাতিশুঁড়, মুথা ঘাস, হলদে মুথা, বড় চুচা, মরিচ ঘাস, বন মূলা, কানাইবাশী, মনায়না, পানি কলাগাছি, কমেলিনা, কানাইনালা, ফণি মনসা, কলমী লতা, স্বর্ণলতা, শক্ত খাগড়া, চেচরা, ক্ষুদে চেচরা, জয়না, মাটি চেচ, বথুয়া, চাপালি ঘাস, কেশটি, হেলেঞ্চা, শিয়ালমুত্রা, ঘাঘরা, বন শিমুল, বন লেটুস, বন সরিষা, মর্নিং গ্লোরি, বিন্দলতা, বড় দুধিয়া, ছোট দুধিয়া, বন মরিচা, শ্যামা ঘাস, ক্ষুদে শ্যামা, দুর্বা ঘাস, চাপড়া ঘাস, আরাইলা, ময়ুরলেজা ঘাস, ফুলকা ঘাস, শ্বেতদ্রোণ, শিয়াল লেজা, ভাতশোলা, আরাইচা, লজ্জাবতী, বন্য মশুর, মসুর চানা, নারিন্দা ঘাস, ক্ষুদে পানা, তিলক পানা,চেলা ঘাস, গিটলা ঘাস, কাশ, উলু ঘাস, প্রেম কাটা, ঝরা ধান, দুধ নল, ছোট দুধ নল, বরেন্দা ঘাস, আঙুলি ঘাস, মোরারো, গইচা, কানফুল, বেরেলা, শালুক, শাপলা, নীল পদ্ম, রক্ত কমল, পদ্ম, আমরুল শাক, হেলেঞ্চা, কচুরি পানা, পানি কচু, বিষকাঁটালী, তিতা মরিচ, পানি মরিচ, নুনিয়া ঢেঁকিশাক, ঝিল মরিচ, তিতা বেগুন, বন্য বেগুন, কাঁটা বেগুন, ধুতুরা, মটকা ইত্যাদি।
ধানের মারাত্নক ক্ষতিকর আগাছা
আজকে আমি এমন একটি আগাছার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো দেখতে অনেকটা ধানের মত কিন্তু ধান নয়। অবিকল ধান গাছের মতো দেখতে ফলে চাষের শুরুতে কচি অবস্থায় ধান না আগাছা চেনা যায় না। এই আগাছা দেখতে ধান গাছের মত একি সাথে বড় হয়। পাানি-বাতাস-মাটির পুষ্টিগুন-আলোতে দিব্যি ভাগ বসিয়ে জমিতে সমানভাবে বাড়তে থাকে । ফসল তোলার কিছুদিন আগে সর্বনাশটা বোঝা যায় । আসল ধান পাকার আগে আগাছা ধানের শিস থেকে সব বীজ ঝরে পড়ে মাটিতে। এই আগাছাকে কনো নিদির্ষ্ট আগাছানাশক ব্যবহার করে দূর করা যায় না কারন এটি ধানের সমতুল্য। তাই এই আগাছাকে চেনা জরুরি।
কচি ছোট অবস্থায় চিনা না গেলেও মাস খানিক বাদে ধান গাছের সাথে কিছু পার্থক্য আলাদা করা যায়। এই আগাছা ধানে লম্বা ও লিকলিকে অসংখ্য পাশকাঠি দেখা যায়। পাতার উপর ও নীচের রং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোমশ। এই আগাছা গাছ সাধারণত খুব লম্বা ও চিকন হয়। গাছের বিভিন্ন অংশে নানান রঙের (রঞ্জক পদার্থ) উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ধানের বীজে রোঁয়া ও শস্যশুঁড়ের উপস্থিতি, কালো খোসা ও বীজের ডগায় বেগুনি আভা আলাদা করে চেনা যায় এই ক্ষতিকর আগাছাকে। একে দূর করার উপায় হল জমি প্রস্তুত করে ধান রোপনের পূর্বে ১ মাস ফেলে রাখা। দেখবেন এই আগাছা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। তখনি আগাছানাশক প্রয়োগ করতে হবে যেগুলো চা,রাবার বাগানে ব্যবহার করা হয়। তারপর আবার জমি চাষ দিতে হবে।
আশা করি ধানের আগাছা নাশক ঔষধের নাম ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন সেটা হচ্ছে, এই আগাছানাশক ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই যাচাই বাচাই করে বিস্তারিত জেনে নিবেন। প্রয়োজনে নিকটস্থ কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন। যদি গুনগতমানের আগাছানাশক কিনতে চান আমি একটি পরামর্শ দেবো সেটা হচ্ছে,আপনারা এসিআই কোম্পানীর অথবা সিনজেনটা কোম্পানীর কিনতে পাবেন। এগুলো একদম বিশ্বস্ত কোম্পানী। আজকে এ পর্যন্ত। যদি বিস্তারিত জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
Thanks
Thanks
Nice